ওটিটি প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্স সবসময় এগিয়ে থাকছে। নতুন নতুন নানা কনটেন্টের পাশাপাশি বাড়ছে এর গ্রাহক সংখ্যা। গত বৃহস্পতিবার এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। দেখা গেছে, এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রায় এক কোটি নতুন গ্রাহক পেয়েছে। মূলত ৯৩ লাখ ৩০ হাজার পেইড সাবস্ক্রাইবার পেয়েছে প্লাটফর্মটি। তিন মাসে প্রায় এক কোটি গ্রাহক পাওয়া এ বাজারে রীতিমতো একটা বড় ব্যাপার। কেননা এরই মধ্যে নানা সময় অন্যান্য ওটিটির গ্রাহক কমেছে। নেটফ্লিক্স নিজেও বাড়িয়েছে ট্যারিফ। সে কারণে গ্রাহক বরং কমে যাওয়ার কথা। কিন্তু না কমে গ্রাহক বৃদ্ধির পেছনে বিচিত্র ধারার নতুন কনটেন্ট থাকার দিকে ইঙ্গিত করছে বিভিন্ন গণমাধ্যম।
ওটিটি প্লাটফর্মগুলোর আয় ও গ্রাহক নিয়ে বিভিন্ন সময় নানা বিশ্লেষণ হয়। এর মধ্যে অ্যানালিস্ট কনসেনসাস একটি ধারণা দিয়েছিল এ বছরের শুরুতে। তারা বলেছিল ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকে নেটফ্লিক্স ৪০ লাখের মতো নতুন গ্রাহক পেতে পারে। ফলে প্লাটফর্মটির গ্রাহক সংখ্যা হবে ২৬ কোটি ৪২ লাখের মতো। কিন্তু বর্তমানে গ্রাহক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ কোটি ৯৬ লাখে। হিসাবটা মূলত ৩১ মার্চ করা। এপ্রিলে গ্রাহক আরো বেড়েছে।
নেটফ্লিক্স ২০২৩ সালের মতোই ২০২৪ সালটা ভালো শুরু করেছে। কেননা ভ্যারাইটি জানাচ্ছে, ২০২৩ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে নেটফ্লিক্সে যুক্ত হয়েছিল ১ কোটি ৩১ লাখ নতুন গ্রাহক। এটি নেটফ্লিক্সের যেকোনো প্রান্তিকের জন্যই ছিল একটা রেকর্ড। মজার ব্যাপার গ্রাহক এত বাড়ার পরও নেটফ্লিক্স একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২০২৫ থেকে তারা আর তাদের নতুন গ্রাহক বা প্রান্তিকের হিসাব প্রকাশ করবে না। এতে কয়েকটি ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা আছে। প্রথমত, স্টক মার্কেটে এর একটি প্রভাব পড়বে। দ্বিতীয়ত, অন্য প্লাটফর্মগুলো স্পষ্ট কোনো তথ্য পাবে না যে নেটফ্লিক্স কোন অবস্থানে আছে।
এর আগে কোনো ওটিটি এমন সিদ্ধান্ত নেয়নি। নেটফ্লিক্স বরাবরই নিজেদের মতো কাজ করতে পছন্দ করে। সে জায়গা থেকেই তারা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এছাড়া বলা যায় নেটফ্লিক্স তাদের নিজেদের গ্রাহক সংখ্যা ও নিয়মিত গ্রাহক বৃদ্ধি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। সে কারণে খবর প্রচারে তারা খুব একটা আগ্রহ দেখাবে না এখন থেকে।
তবে বছরের শুরুতে বড় সংখ্যক গ্রাহক পাওয়ার পেছনে নেটফ্লিক্সের লাইনআপের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে গণমাধ্যম ভ্যারাইটি। তারা বলছে, নতুন আনা ও আসতে যাওয়া কনটেন্টের কারণেই দর্শক আগ্রহী হয়েছে নেটফ্লিক্সে। গত বছর এসেছিল জনপ্রিয় অ্যানিমে ওয়ান পিসের লাইভ অ্যাকশন। আট পর্বের সিরিজ নির্মাণ করেছিল নেটফ্লিক্স। এইচিরো ওদার এই মাঙ্গার লাইভ অ্যাকশন সম্ভব, কেউ বিশ্বাসই করেনি। সে অসম্ভবকে সম্ভব করেছে নেটফ্লিক্স। সে কারণেই হাত দিয়েছিল অ্যাভাটার দ্য লাস্ট এয়ারবেন্ডারে। তবে সিরিজটি ততটা ভালো করতে পারেনি। কিন্তু এরপর তারা হাত দিয়েছে গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউডে। উপন্যাসটি থেকে ১৬ পর্বের সিরিজ নির্মাণ করছে নেটফ্লিক্স। ভালো হোক বা মন্দ, ধারণা করা হচ্ছে এ এক সিরিজই তাদের বহু নতুন গ্রাহক দেবে। এছাড়া জনপ্রিয়তা পেয়েছে থ্রি বডি প্রবলেম, দ্য জেন্টলম্যান, লাভ ইজ ব্লাইন্ড, ফুল মি ওয়ান্স, ড্যামসেল ইত্যাদি।
নতুন গ্রাহকের ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে সংখ্যার ভিন্নতা আছে। ইউরোপ থেকে ২৫ লাখের বেশি, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকা থেকে ২৯ লাখের বেশি, লাতিন আমেরিকা থেকে ১৭ লাখ ও এশিয়া প্যাসিফিক থেকে ২১ লাখ ৬০ হাজার নতুন গ্রাহক পেয়েছে নেটফ্লিক্স। ওয়াল স্ট্রিটের পূর্বাভাস বলেছিল এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে এসে নেটফ্লিক্সের মোট আয় হবে ৮৭৩ কোটি ডলারের মতো। বাস্তবে তা দাঁড়িয়েছে ৯৩৭ কোটি ডলারে। ২০২৩ সালের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেড়েছে আয়। সব মিলিয়ে সহজেই বোঝা যাচ্ছে, বৈশ্বিক ওটিটি প্লাটফর্মের ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সকে টেক্কা দেয়া সহজ হবে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।