আন্তর্জাতিক ডেস্ক :বর্তমান পরিস্থিতি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর জন্য একটি আনন্দের মুহূর্ত হওয়া উচিত ছিল। তাঁর ৪০ বছরের স্বপ্ন অবশেষে সফল হতে চলেছে। মধ্যপ্রাচ্যের তথাকথিত সব ‘সন্ত্রাসী রাষ্ট্র’ ধ্বংস করার লক্ষ্যে তিনি এগিয়ে চলেছেন। নেতানিয়াহু ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটি কৌশল অনুসরণ করেছেন, যা তিনি ১৯৮৬ সালে লেখা তাঁর ‘টেররিজম: হাউ দ্য ওয়েস্ট ক্যান উইন’ বইতে তুলে ধরেছেন।
বইটিতে নেতানিয়াহু সন্ত্রাসবাদকে সংজ্ঞায়িত করেছেন ঠিক এভাবে, ‘নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, আহত ও আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের একটি পরিকল্পিত এবং সুসংগঠিত প্রক্রিয়া।’ এটি মূলত সেই কর্মকাণ্ডের বিবরণ, যা ইসরায়েল গত এক বছর ধরে অবরুদ্ধ গাজায় এবং বর্তমানে লেবাননে করে যাচ্ছে। তাঁর সন্ত্রাসবিরোধী তত্ত্বের মূল ভিত্তি হলো বলপ্রয়োগ।
নেতানিয়াহুর ধারণা ছিল, তিনি ফিলিস্তিনের সমস্যা মোকাবিলা করবেন গাজায় অবরোধ আরোপের মাধ্যমে এবং পশ্চিম তীরে ধীরে ধীরে ইহুদি বসতি স্থাপন করে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বাধীন আক্রমণের মাধ্যমে সেই কৌশল ভেঙে পড়ে। তখন থেকে তিনি ও তাঁর মিত্ররা পুরোপুরি যুদ্ধের নীতি গ্রহণ করেছেন, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আক্রমণ এবং দখল প্রক্রিয়া দ্রুততর করেছেন।
তবে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার মাধ্যমে নেতানিয়াহু ইসরায়েলের জন্য ‘নরকের দরজা’ খুলে দিয়েছেন। নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর ইরানের পক্ষ থেকে প্রতিশোধমূলক আক্রমণ কেবল সময়ের ব্যাপার ছিল। হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে উপর্যুপরি হামলা সত্ত্বেও লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির দুর্বলতার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। উল্টো তারা ইসরায়েলি স্থলবাহিনীর ওপর পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।
এর পরই হলো ইরান। নেতানিয়াহুর দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা এবং মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার যে স্বপ্ন, সেটি এখন তাঁর নিজের জন্যই বিপর্যয় ডেকে এনেছে। ইসরায়েলের বর্তমান সংকট তাঁর সেই কৌশলেরই প্রতিফলন, যা মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি সংকট এবং অস্থিরতা সৃষ্টি করছে। গত ১ অক্টোবর রাতে ইরানের ১৮০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র তেল আবিবসহ ইসরায়েলের সামরিক ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানে। তেহরান দেখিয়েছে, তারা পাল্টা আঘাত করতে পারে। ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঠিক এক দিন পর, সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান দোহায় ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের সঙ্গে মতবিরোধের বইটি চিরতরে বন্ধ করতে চাই।’
সৌদির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রমাণ করে, এটি সেই ‘নতুন মধ্যপ্রাচ্য’ নয়, যার জন্য নেতানিয়াহু এতদিন ধরে কাজ করেছেন। এটি ইসরায়েলের দুঃস্বপ্ন। ইসরায়েলের সামরিক শক্তির শূন্যতা (যতই মানুষকে হত্যা করুক না কেন) এবং এর বিচ্ছিন্নতার সম্পূর্ণ বাস্তবতা এখন সবার কাছে পরিষ্কার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।