Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home নেহেরুকে লেখা মুজিবের চিঠি ছিল ভারত সরকারকে শেকড়সহ কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো
    জাতীয়

    নেহেরুকে লেখা মুজিবের চিঠি ছিল ভারত সরকারকে শেকড়সহ কাঁপিয়ে দেওয়ার মতো

    August 1, 201912 Mins Read

    ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে দিল্লি ফেরার পথে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে শশাঙ্ক ব্যনার্জি
    পীর হাবিবুর রহমান : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬২ সালের ২৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহরুকে লেখা চিঠি হস্তান্তর করে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জিকে বলেছিলেন, ‘আমি ভারতের কাছে সমমর্যাদার বন্ধুত্বের দাবি নিয়ে স্বাধীনতার প্রশ্নে সমর্থন চাইছি। মাথা নত করে হাত পাতছি না। চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে ভারত এখন দুনিয়ায় ইজ্জত হারিয়েছে। আমাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে সহযোগিতা ন ফিরে আসবে, মর্যাদা যেমন বাড়বে; তেমনি আমার বাঙালি স্বাধীন আবাস ভূমি পাবে। আমরা স্বাধীন হব।’ সেই সময় পূর্ববাংলার ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় উপ-দূতাবাসের রাজনৈতিক অফিসার শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেছেন। ১০ জুলাই সামারের চমৎকার বিকালে তাঁর লন্ডনের বাসভবনে টানা দুই ঘণ্টা তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এই দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দেন। ৮৬ বছর বয়স্ক শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি এখন অবসর জীবনযাপন করছেন। পরিপাটি সুন্দর বাড়ির পেছনে পিউলিপ, গোলাপসহ বাগান হরেক রকমের ফুলে প্রস্ফুটিত। সেখানে দাঁড়ালে ফুল আর ফুল দেখতে দেখতে মন জুড়িয়ে যায়। আমার সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের যুক্তরাজ্য প্রতিনিধি আ স ম মাসুম ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়েছিলেন। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জির দুই ছেলে ক্যামব্রিজ পাস করে একজন ওয়াশিংটনে আরেকজন লন্ডনে পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মরত। দেয়ালে তাঁর গোটা পরিবারের ছবিসহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১০ জানুয়ারি ’৭২ স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের পাশাপাশি সিটে বসা ছবিখানি উজ্জ্বল হয়ে ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করছিল।

    Advertisement

    ১৯৫৫ সালে ফরেন চাকরিতে যোগ দেওয়া শশাঙ্ক ব্যানার্জি ’৮৫ সালে অবসর নেন। ’৬২ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্বপ্ন সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও তার পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্ব পর্যন্ত নিবিড়ভাবে জড়িত ছিলেন। বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল। এমন সুপুরুষ, এমন কণ্ঠ ও ভাষার বক্তৃতায় একজন অসীম সাহসী দেশপ্রেমিক ও অমায়িক ব্যবহারের বিচক্ষণ নেতা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

    শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেছেন, ১৯৬০ সালে তাঁকে পলিটিক্যাল অফিসার হিসেবে ভারতীয় উপ-হাইকমিশনে নিয়োগ দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়। ঢাকায় আসার আগে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ও যোগাযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। যদিও তখন আওয়ামী লীগ বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে ওঠেনি। ১৯৬২ সালের ২৫ মার্চ ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের বড়দিনের উৎসব। তখন তিনি পুরান ঢাকার চক্রবর্তী ভিলায় বসবাস করেন। বাড়িটির পাশেই ছিল দৈনিক ইত্তেফাক অফিস। ২৪ ডিসেম্বর রাতে তিনি তাঁর সহধর্মিণীসহ এক সহকর্মীর বাসায় বড়দিনের আনন্দ অনুষ্ঠান ও নৈশভোজ শেষে রাত ১২টার পর পর বাসায় ফিরে পেছনের দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন। ঘরে প্রবেশ করতে না করতেই সামনের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনতে পান। দরজা খুলে দেখেন ১৪ বছরের এক ভদ্র, বিনয়ী অচেনা কিশোর দাঁড়িয়ে। সালাম বিনিময় করে সেই কিশোর ছেলেটি তাঁকে বললেন, ইত্তেফাক সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া আপনাকে নিয়ে যেতে আমাকে পাঠিয়েছেন। দরজা খোলার আগে কড়া নাড়ার শব্দে শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। নিশ্চিত হতে পারছিলেন না, মধ্যরাতের পর এই অসময়ে কে বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ল। তিনি ভাবছিলেন, কেউ কি তাঁকে অনুসরণ করছিল? ঢাকায় আসার আগে তাঁকে নিজের এবং পরিবারের অতিরিক্ত নিরাপত্তায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। দৈনিক ইত্তেফাক ও তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার লেখা নিয়মিত পড়ে মুগ্ধ হলেও কখনো দেখা হয়নি। ছেলেটি আরও বলল, মানিক মিয়ার সঙ্গে আরেকজন ভদ্রলোক আছেন। কিন্তু সেই ভদ্রলোক কে? সেটি ছেলেটি আর বলল না। তিনি ইতস্তত করে করে গোলকধাঁধার মতো মানিক মিয়ার আমন্ত্রণ গ্রহণ করে বসলেন। যা ছিল প্রথাবিরোধী। ব্যানার্জি বলেন, কিন্তু আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, “যাই ঘটুক না কেন আমি সেই অজানার উদ্দেশ্যে যাব।” ছেলেটিকে বলে দিলেন, চলে যেতে এবং মানিক মিয়াকে জানাতে যে, কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি দেখা করতে আসছেন।
    এমন একটি সাক্ষাতের জন্য গভীর রাতে প্রস্তুত না থাকলেও শশাঙ্ক শেখর ব্যানার্জি কিছুক্ষণ পর মানিক মিয়ার সঙ্গে দেখা করতে ইত্তেফাক ভবনে গেলেন। তিনি শুধু আঁচ করলেন, বৈঠকটি যে রাজনৈতিক হবে এ নিয়ে তাঁর সন্দেহ নেই। তবে এ জন্য তিনি কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, “আমি পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মানিক মিয়া তাঁর চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন এবং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে করমর্দন করে অস্বাভাবিক মুহূর্তে দেখা করতে আসায় ধন্যবাদ জানালেন। তিনি আমাকে নাম ধরে সম্বোধন করলেন এবং তাঁর পাশে দাঁড়ানো ভদ্রলোকের দিকে ফিরে, হাতের ইশারায় পরিচয় করিয়ে দিলেন। আমি তাঁর ছবি পত্রিকায় দেখেছি। তাঁর ভাষণ শুনেছি এবং চেহারা খুবই পরিচিত। আমার মনে হলো, এই ভদ্রলোককে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, আমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর এই প্রথম আমার শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে দেখা হলো। আমাকে বলতেই হবে, এতটা কাছ থেকে তাঁকে দেখার পর তিনি তাঁর ক্যারিশমা দিয়ে আমাকে মুগ্ধ করেছিলেন। ঈুৎরষ উঁহহ নামে একজন ব্রিটিশ সাংবাদিক শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা করার পর বলেছিলেন, ‘মুজিব সুপুরুষ ছিলেন এবং তাঁর ছিল দারুণ ব্যক্তিত্ব।’ তিনি ঠিক কথাই বলেছিলেন। আমি দূর থেকে পল্টন ময়দানের গণসমাবেশে শেখ মুজিবের ভাষণ শুনেছি। আমি জানতাম, শক্তিশালী বক্তব্যে তিনি কেমন করে স্রোতাদের বেঁধে রাখেন। সেই সময় আমি শেখ মুজিবের ভাষণ ও মানিক মিয়ার লেখনী থেকে বাংলা ভাষা শিখেছি বললে বাড়িয়ে বলা হবে না। এমনকি তাঁদের আমার বাংলা ভাষার শিক্ষকও বলা যায়।

    পরিচয়ের সময় মুজিব শক্ত হাতে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে আমার সঙ্গে করমর্দন করলেন এবং আমাকে তুমি সম্বোধন করে কথা বলতে শুরু করলেন। আমি মুগ্ধ ও অভিভূত হয়ে তাঁকে বললাম, আপনি আমাকে তুমি বলতে পারেন কিন্তু আমি আপনাকে তুমি বলতে পারব না। শেখ মুজিব আমার চোখের দিকে এমনভাবে তাকালেন যেন ভীষণ জরুরি একটা কিছু বলার জন্য তিনি উসখুস করছেন। হাসিমুখে চোখ মিটমিট করে তাঁকে বললাম, আপনার সঙ্গে পরিচিত হয়ে আমি ভীষণ আনন্দিত হয়েছি। তবে জানতে চাইছি, এটা কি একটি ঐতিহাসিক করমর্দন? শেখ মুজিবের ত্বরিত জবাব ছিল, কেন নয়? ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থেচার সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর বলেছিলেন, এই সোভিয়েত নেতার সঙ্গে পশ্চিমের লেনদেন সম্ভব। তেমনি ওই সময়ে আমার মনে যে কথাটি গোপনে দানা বেঁধে উঠেছিল, সেটি হচ্ছে, ‘শেখ মুজিবের সঙ্গে ভারতের লেনদেন সম্ভব।’ সেদিন শেখ মুজিবের পরনে ছিল লুঙ্গি, পায়ে চপ্পল, চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা, গায়ে সোয়েটার। শেখ মুজিবকে বললাম, আমি অধমের সঙ্গে আপনি কেন দেখা করতে চাইলেন? কেন ডাকলেন? তিনি বললেন, তোমার সঙ্গে খুব দরকারি কথা আছে। আমি প্রশ্ন করলাম, গণতন্ত্রের জন্য কি ভারতের কাছে সাহায্য চান? তিনি কিছুটা ইতস্তত করে বললেন, না। গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করলেও আমি পাকিস্তানের জন্মের পর থেকে যেটির কথা চিন্তা করছি, সেটি শুনলে চমকে উঠবেন না তো? আমি বিস্ময় নিয়ে তাঁর দিকে তাকালাম। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বললেন, আমি পূর্ববাংলার স্বাধীনতার কথা চিন্তা করছি। শেখ মুজিবের কথা শুনে আমি শুধু চমকেই যাইনি, রীতিমতো দাঁড়িয়ে গেলাম। অবাক হয়ে বললাম, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা যদি জানে মেরে ফেলবে। এটা তো সাংঘাতিক ব্যাপার। এটা প্রকাশ হবে না তো! প্রকাশ হলে দেশদ্রোহী মামলা হবে। সাবধান, এভাবে ওপেন বলবেন না। আপনাদের প্রাণ তো যাবেই; ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে। তবে আপনারা নিশ্চিত থাকুন, আমার তরফ থেকে এটি ফাঁস হবে না। তিনি বললেন, তাদের তরফ থেকেও ফাঁস হবে না। সেদিন এই দুই মহান ব্যক্তির সঙ্গে আমার প্রথম সাক্ষাৎ হলেও তাঁদের কর্মকান্ডের সঙ্গে আমি মানসিকভাবে জড়িয়ে ছিলাম।

    পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা মানিক মিয়ার বিচক্ষণ তর্কমূলক কলামগুলো কখনো না পড়ে থাকতাম না। বুঝতে পারতাম, তাঁর চাতুর্যে ভরা ‘স্বায়ত্তশাসন’ শব্দটির আড়ালে আসলে ‘স্বাধীনতা’ আছে। আশ্চর্যের বিষয়, পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বুঝতেই পারেনি, শেখ মুজিব ও মানিক মিয়া কোন দিকে যাচ্ছেন। গণবিক্ষোভমূলক কলামগুলো লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কখনো কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনও অনেক কলাম ছিল উসকানিমূলক হওয়ার জন্য আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমার মনে হয়, হয়তো পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর বাংলায় অনুবাদকগণ মানিক মিয়ার কলামের সঠিক চিত্রটি কর্তাব্যক্তিদের কাছে তুলে ধরেননি। অনেকে মনে করে নিতে পারেন, এসব তাত্ত্বিক বিষয় আওয়ামী লীগের নেতারা পড়েছিলেন এবং পাঞ্জাবিদের দমনের বিরুদ্ধে সমর্থন খুঁজে পেয়েছিলেন। সামরিক বাহিনী ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলো পাঞ্জাবিদের দিয়ে পরিপূর্ণ ছিল। অন্যদিকে সংখ্যালঘু প্রদেশ যেমন বাঙালি, বেলুচি, সিন্ধি এবং পশতুরা সেই পাঞ্জাবিদের হাতে শোষণ ও দমনের শিকার হয়েছে। সামরিক বাহিনী কেন তার স্বায়ত্তশাসন নিয়ে লেখা কলামগুলোর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি জানতে চাইলে মানিক মিয়া বলেছিলেন, তিনি কোনো সুযোগ দেননি বা ইস্কুল বয়ের মতো উসকানিমূলক কিছু বলেননি। কিছুটা রেখেঢেকে নিজের মতামত জানানোটাই তাঁর স্টাইল। আমার মনে হয়েছিল, একজন একগুঁয়ে দেশপ্রেমিক হিসেবে এবং সাহিত্যিক হিসেবেও তিনি অসাধারণ। দ্ব্যর্থবোধক শব্দ ও পরিমিত ব্যঙ্গ প্রকাশে তিনি ছিলেন ওস্তাদ। তাঁর শক্তিশালী বাংলা গদ্যশৈলীর এক অভিনব বৈশিষ্ট্য ছিল গীতিময়তা।

    এ সময় আমি বিনয়ের সঙ্গে বললাম বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার জন্য ১৩ বছর জেল খেটেছেন। আর মানিক মিয়া ৫৮ সাল থেকে ৬৬ তিনবার গ্রেফতার হয়ে জেল খেটেছেন।

    ঐাক, শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, সেই রাতে শেখ মুজিবের সঙ্গে প্রথম দেখার পরই তাঁর অনেকটা প্রথম দর্শনেই প্রেমের পড়ার মতো হয়েছিল। তাঁর ভাষায়, আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, শেখ মুজিবের মতো একজন বাগ্মী গণনেতা এবং মানিক মিয়ার মতো রাজনৈতিক চিন্তাবিদ দুজনে মিলে একটি বিপ্লব তৈরি করতে পারেন ও নেতৃত্ব দিতে পারেন। সেই রাতে আমাদের মিটিং তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়েছিল। আলোচনার বিষয় ছিল রাজনীতি, কিউবায় মিসাইল সংকট, কীভাবে চীন চতুরতার সঙ্গে ভারত দখলের সুযোগ নিয়েছে, তার কৌশলগত নির্দেশগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মতো ‘সম্মিলিত নিরাপত্তা জোট’, যা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ভারতের গলায় কাঁটার মালার মতো। সামরিক একনায়কের পক্ষে আমেরিকার মদদ এবং এই অঞ্চলে কৌশলগত চিত্রে তার প্রভাব, সোভিয়েত ইউনিয়নের উপনিবেশিকতাবিরোধী জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম থেকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো কী আশা করতে পারে, আওয়ামী লীগ ও ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে কীভাবে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা বিষয়ে পরিবর্তন আনা যায়, এমন সব বিষয় নিয়ে আলোচনা চলছিল। এই আলোচনার মাধ্যমে আমার অভিনব সৌভাগ্য হয়েছিল, শেখ মুজিব ও মানিক মিয়ার মতো ব্যক্তির মনোভাব বুঝে নেওয়ার। বুঝতে পারি, বাংলাদেশের এই দুই নেতা তাঁদের কথায় বেশ পরিণত ও হিসেবী। পরাশক্তিগুলোর কাছে তাদের অবস্থানে কিছুটা দূরত্ব রাখতে চাইছেন তাঁরা।

    তখন রাত প্রায় শেষ। বড়দিনের ভোর সমাগত। আলোচনা যখন প্রায় শেষ, তখন বুঝতে পারছিলাম, শেখ মুজিব ও মানিক মিয়া দুজনেই কিছুটা উসখুস করছেন, যেন তাঁরা আরও কিছু বলতে চান। আমিই স্বপ্রণোদিত হয়ে বললাম, উপরের মহলে পৌঁছে দিতে হবে এমন কোনো কথা আছে কি? শেখ মুজিবুর রহমান এবার তাঁর স্বরূপে মুখ খুললেন, বললেন, এই মিটিং তলবের উদ্দেশ্য হচ্ছে, আমার হাতে তাঁর একটি চিঠি তুলে দেওয়া, যেটি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর কাছে যেতে হবে। আমার হাতে চিঠি তুলে দেওয়ার সময় তাঁকে দেখে মনে হয়েছিল, তিনি বেশ তাড়াহুড়োর মধ্যে আছেন। আমি তাঁকে বললাম, আমি ছাড়া এই চিঠি প্রধানমন্ত্রীর হাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের আরও দুটি ভিন্ন অফিস ঘুরে যাবে। তারপর এটি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে যাবে, যার সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব ও নয়াদিল্লির ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর পরিচালকের কপি এনডোর্স থাকবে। এই চিঠির সম্পূর্ণ লেখাটি ট্রিপল কোডেড সাইফার ম্যাসেজ হিসেবে পাঠানো হবে। আসল চিঠি একটি কূটনৈতিক ব্যাগে সেই সাইফার ম্যাসেজের সঙ্গে যাবে। শেখ মুজিব জানতে চাইলেন, ঢাকা হাইকমিশনের ওই দুজন অফিসার কে হতে পারেন? আমার মনে দ্বিধা থাকলেও শেখ মুজিব ও মানিক মিয়ার বিশ্বাস অর্জনের জন্য বলে দিলাম, একজন হলেন শ্রী সৌর্য কুমার চৌধুরী ডেপুটি হাইকমিশনার। যিনি ঢাকাস্থ মিশনের হেড এবং কর্নেল এস সি ঘোষ। যিনি পূর্ব পাকিস্তানে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স স্টেশনের চিফ।

    সেই রাতে ইতিহাসের পাতা উল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিব গোপনীয় চিঠিটি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প-িত জওহরলাল নেহেরুর কাছে লিখেছিলেন। একটি ছোট্ট সূচনা প্যারাগ্রাফের পর, সেখানে সরাসরি পরবর্তী পরিকল্পনার কথা লেখা, যা মুজিবের ইচ্ছা অনুসারে তাঁর বিশ্বস্ত বন্ধু মানিক মিয়া লিখেছিলেন। যেখানে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রাম শুরুর কথা লেখা ছিল। চিঠিতে জোর দেওয়া হয়, পশ্চিম পাকিস্তানে পাঞ্জাবি মুসলমানদের সামরিক দমন, নিপীড়ন, বৈষম্য ও শোষণের ওপর। আর এভাবেই আসে পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষগুলোর জন্য একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরির কথা। চিঠির ভাষ্যমতে শেখ মুজিবের উদ্দেশ্য ছিল, পাকিস্তানিদের দমন-পীড়নের মুখে খোলাখুলিভাবে যে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকা- চালানো সমস্যা বলে মুজিব তাঁর পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কেন্দ্রভূমি ঢাকা থেকে লন্ডন স্থানান্তর করতে চান এবং সেখান থেকেই তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনা করবেন। তিনি চিঠিটি শেষ করেছিলেন একটি রোডম্যাপ ও সময়সূচি দিয়ে। তিনি যত দ্রুত সম্ভব তাঁর বেস ঢাকা থেকে লন্ডনে স্থানান্তর করতে চাইছিলেন। মানিক মিয়ার ঢাকাতে থেকে যাওয়ার কথা ছিল। সেখানে থেকেই তিনি তাঁর সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাবেন। ইত্তেফাকে তিনি সার্বভৌমত্বের দাবিতে নিয়মিত কলাম লিখবেন। শেখ মুজিব ১৯৬৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বা খুব বেশি হলে ১ মার্চ লন্ডন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করবেন।

    সার্বভৌম গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের প্রাদেশিক সরকার লন্ডনে নির্বাসিত অবস্থাতেই গঠিত হবে। চিঠির শেষ প্যারাগ্রাফে নেহেরুর কাছে একটি ব্যক্তিগত অনুরোধ ছিল, যাতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারতের আত্মিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, মাঠ পর্যায়ে সব ধরনের নিঃশর্ত সহযোগিতা দেন। আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য মুজিব ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গোপনে ব্যক্তিগত সাক্ষাতের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। শশাঙ্ক ব্যানার্জি বলেন, এতে কি কোনো সন্দেহ আছে যে, নেহেরুকে লেখা মুজিবের গোপনীয় চিঠিটি একটি খাঁটি ডিনামাইট ছিল না? প্রধানমন্ত্রী নেহেরু কি সিদ্ধান্ত নেন, সেটি এক কথা। কিন্তু অন্যদিকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জটিলতা ছিল হিমালয়ের সমান উঁচু। সব মিলিয়ে এই চিঠি ভারতের সরকারকে শেকড়সহ কাঁপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা বহন করছিল।

    শেখ মুজিবকে সেই রাতে বিদায় নেওয়ার আগে বললাম, আপনি মহান লোক। আমি চুনোপুঁটি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুকে এখন কেন চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন? কারণ চীনের সঙ্গে যুদ্ধে হেরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ভীষণ বিধ্বস্ত। এই সময়টা কেন আপনার পছন্দ? শেখ মুজিব জবাবে বললেন, এটাই সুসময়। চীনের সঙ্গে পরাজয়ের অপমানে লজ্জিত ভারতকে কেউ পুচবে না। বিপদে পড়লে লোকে বন্ধু খোঁজে। আমি হাত পাততে আসিনি; সমমর্যাদার বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে এসেছি। আমাদের সহযোগিতা দিলে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করব। আর ভারতের পরাজয়ের অপমানের লজ্জা মুছে যাবে। মর্যাদা ফিরে আসবে। শেখ মুজিবের বিচক্ষণতা আমাকে মুগ্ধ ও অভিভূত করল। মুজিব সেদিন আরও বলেছিলেন, শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধ করতে নেমে ফাঁসিতে ঝোলার ভয় পায় না। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি বলেন, ভোর ৪টায় ঘরে ফিরে তিনি আর ঘুমাননি। তুমুল উত্তেজনা নিয়ে গোসল সেরে তৈরি হয়ে সাতসকালেই ছুটে চলে যান ডেপুটি হাইকমিশনার সৌর্য কুমার চৌধুরীর বাসভবনে। সৌর্য কুমার চৌধুরীর কাজিন জয়ন্ত চৌধুরী তখন ভারতের সেনাপ্রধান। সাতসকালে বাসভবনে যেতেই ডেপুটি হাইকমিশনার তাঁর বড় চোখ আরও বড় করে বললেন, কী হয়েছে বলুন তো? বললাম, শেখ মুজিবের সঙ্গে দেখা হয়েছে। তিনি আমাকে বসিয়ে শান্ত হয়ে জানতে চাইলেন, কী কথা হয়েছে? আমি বললাম, হাজার কথা হয়েছে। কিন্তু আসল কথা হলো এই চিঠিতে। তিনি নেহেরুকে লেখা শেখ মুজিবের চিঠি আরও বড় বড় চোখ নিয়ে পাঠ করে বললেন, আজকেই পাঠিয়ে দেব। টেলিগ্রাফও করে দেব, ভীষণ গোপনে ট্রিপল কোডে যাতে কারও হাতে গেলে বুঝতে না পারে।

    ঢাকার কাজ দ্রুত শেষ হয়ে আসে। শেখ মুজিবের চিঠিটি হেড অব মিশন ও ইন্টেলিজেন্স স্টেশন চিফের কাছে জমা দেওয়া হয়। এর মধ্যে আমরা পাঁচজন অর্থাৎ ডেপুটি হাইকমিশনার, ইন্টেলিজেন্স চিফ, শেখ মুজিব এবং মানিক মিয়া ও আমি খুব অল্প সময়ে আরও দুটি মিটিং করে ফেলি। উদ্দেশ্য ছিল, বাংলাদেশের নেতা শেখ মুজিব ভারতের কাছ থেকে কী আশা করেন, সেই বিষয়ে ভালোমতো বোঝা। এরই মধ্যে চীনা দখলদারিত্বের কারণে শোকে ডুবন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শেখ মুজিবের চিঠি পৌঁছে গেল এবং তিনি সেটি ভালো মতো খতিয়ে দেখলেন এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের নিয়ে একটি মিটিংয়ে বসলেন। নয়াদিল্লি থেকে আমাদের জানিয়ে দেওয়া হলো, শেখ মুজিবকে জানিয়ে দিন, তাঁর প্রস্তাব প্রধানমন্ত্রী নেহেরু পেয়েছেন এবং তিনি খুব দ্রুত এর জবাব দেবেন। শশাঙ্ক এস ব্যানার্জি আফসোস করে বললেন, নেহেরুকে লেখা শেখ মুজিবের সেই চিঠির একটি ফটোকপি তাঁর রাখা উচিত ছিল। শেখ মুজিবের কোড নাম কী ছিল এটি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে গিয়ে বললেন, কোড তো একটা নিশ্চয়ই ছিল।

    আগামীকাল পড়ুন চিঠি পাঠ করে নেহেরুর পদক্ষেপ, জবাব ও শেখ মুজিবের আগরতলা গমন।

    লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

    সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    Related Posts
    মেয়াদোত্তীর্ণ ভিজিট

    মেয়াদোত্তীর্ণ ভিজিট ভিসাধারীদের সুখবর দিলো সৌদি আরব

    June 28, 2025
    এনবিআরের আন্দোলনে

    এনবিআরের আন্দোলনে কঠোর হচ্ছে সরকার

    June 28, 2025
    Police

    এখনো কাজে ফেরেননি ১৮৭ পুলিশ

    June 28, 2025
    সর্বশেষ খবর
    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবারের তালিকা

    ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খাবারের তালিকা: সুস্থ জীবনের গোপন উপায়

    মনু মিয়া

    ৩ হাজারের বেশি কবর খোঁড়া সেই মনু মিয়া মারা গেছেন

    চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি

    চাকরির ইন্টারভিউয়ের জন্য প্রস্তুতি: সফলতার গোপন

    সৌদি

    সৌদি প্রবাসীদের জন্য বিশাল সুখবর

    ঝড় বৃষ্টি আবহাওয়া

    সাত জেলায় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টির পূর্বাভাস: আবহাওয়ার সতর্কতা জারি

    উমামা ফাতেমা

    বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন উমামা ফাতেমা

    মিশরে সড়ক দুর্ঘটনায়

    মিশরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৯ জন নিহত, অধিকাংশই কিশোরী শ্রমিক

    আবাসিক হোটেল থেকে

    আবাসিক হোটেল থেকে আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার

    রোনালদো

    নতুন চুক্তিতে ঘণ্টায় ৬৫ লাখ পাচ্ছেন রোনালদো, বছরে কত?

    প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে

    প্রেমিককে ভিডিও কলে রেখে রাজশাহীর ইশরাত জাহান হাসির আত্মহত্যা

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.