জুমবাংলা ডেস্ক : রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রভাবে সৃষ্ট নৈরাজ্য প্রতিরোধ করে জনমনে স্বস্তি ফেরাতে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি। ছাত্র আন্দোলনে আহতদের খোঁজ নেওয়া ও মন্দির পাহারার পাশাপাশি শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে মাইকিং, শান্তি সমাবেশ, মতবিনিময় সভা, লিফলেট বিতরণ, সহিংসতা প্রতিরোধ কমিটি গঠনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা।
গতকাল শনিবার ঢাকা মহানগরীর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় আতঙ্কিত নাগরিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছে বিএনপি। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রছাত্রীদের মাঝে খাবার পানি, দুপুরের খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ড করছে দলটি।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন অবসানের পর বিক্ষুব্ধ মানুষের রোষানলে পড়েন দলটির নেতারা। বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর, কার্যালয় ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রাজনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি অরেক জায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়।
পুলিশের কার্যক্রম বন্ধ থাকার সুযোগে বেড়ে যায় ডাকাতিসহ বিভিন্ন অপরাধপ্রবণতা। এসব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে বিএনপি নেতাকর্মীরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দলটির নেতারা জানান, সারা দেশে থানা-উপজেলা, ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নৈরাজ্য মোকাবিলার পাশাপাশি মসজিদ-মন্দিরসহ বিভিন্ন উপাসনালয় রাত-দিন পাহারা দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা। কোনো অপকর্মে দলীয় নেতাকর্মীদের সংশ্লিষ্টতা পেলে বহিষ্কার করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগের ভিত্তিতে অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের অন্তত ২০ জনকে বহিষ্কার করেছে। শোকজ করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে।
কয়েকটি জেলা থেকে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বিএনপির চেয়ারপারসন ও মহাসচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অবশ্য সাংগঠনিক জেলা শাখার শীর্ষ নেতারা কেন্দ্রের কঠোর বার্তা সব স্তরের নেতাকর্মীর কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। নৈরাজ্য প্রতিহত করতে জনসচেতনতার উদ্দেশে এলাকায় এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। এতে দুষ্কৃতকারীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘৫ আগস্টের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে একটি সুযোগ সন্ধানী মহল বিভিন্ন স্থানে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করছে। তারা লুটপাট, দখল এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘর এবং স্থাপনায় হামলা করছে। কিন্তু যেকোনো অপ্রীতিকর এবং নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি ঠেকতে বিএনপির হাইকমান্ড অত্যন্ত কঠোর। এ বিষয়ে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানে কঠোর নির্দেশনা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। এরপর কেউ নৈরাজ্য করলে তাকে চিহ্নিত করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাছে দেওয়া হবে। তাছাড়া দলীয় পরিচয়ে কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা করলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশক্রমে আতঙ্কিত নাগরিকদের মাঝে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সার্বক্ষণিক দ্বায়িত্ব পালন করছেন দলের নেতারা। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে গণসংযোগ ও প্রচারণা করেছেন বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সকাল ১১টার দিকে বাংলামটরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনুর সভাপতিত্বে এ সময় বক্তব্য দেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য শেখ রবিউল আলম রবি, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ।
সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের নেতৃত্বে মহাখালী টিবি গেট মন্দির পরিদর্শন করা হয়। বিকেলে রাজধানীর গোপীবাগে রামকৃষ্ণ মন্দির পরিদর্শন করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে যাত্রাবাড়ী আইডিয়াল স্কুলের সামনে সচেতনতামূলক প্রচার শুরু করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু ও সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন। এরপর বিকেল ৫টায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে গির্জা পরিদর্শন করেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।
দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় এমনকি ইউনিয়নেও সংখ্যালঘুদের ধর্মীয় উপাসনালয় ও স্থাপনা পরিদর্শন এবং পাহারা দিচ্ছেন বিএনপি অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীরা। নেত্রকোনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মো. আনোয়ারুল হক বলেন, তিনি গত ৫ আগস্টের আগ থেকেই এলাকায় অবস্থান করছেন। এখন শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পতনের পর যে কোনো নৈরাজ্য এবং অনাকাঙ্ক্ষিতি পরিস্থিতি ঠেকাতে দলীয় নেতাকর্মীদের কেন্দ্রের নির্দেশনা দিয়েছেন। একই সঙ্গে যেসব শিক্ষার্থী স্বেচ্ছায় ট্রাফিক ব্যবস্থা সামলাচ্ছে তাদের পানি, বিস্কুটসহ বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করেছেন বলে তিনি জানান।
দলটির নেতারা জানান, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য একটি স্বার্থান্বেষী মহল দেশে নানা অপকর্ম করছে। বিভিন্ন জায়গায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ধরাও পড়েছেন। তবে নিজ দল ও অঙ্গ সংগঠনের গুটিকয়েক নেতার বিরুদ্ধেও অভিযোগ পেয়েছেন তারা। তাদের শনাক্ত করে সাংগঠনিকভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিএনপিসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের পক্ষ থেকে সব তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কাছে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দলমত, ধর্ম-বর্ণ, পেশা-নির্বিশেষে যে কোনো বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সাধ্যানুযায়ী সহযোগিতা করা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং তাদের ধর্মীয় উপাসনাগুলো নিরাপদ রাখার সর্বোচ্চ ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
নিজ নিজ পাড়া-মহল্লায় দলীয় নেতাকর্মী ও ছাত্র-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে সব ধরনের নৈরাজ্য প্রতিহত করুন। কেউ দয়া করে আইন নিজের হাতে তুলে নেবেন না। প্রতিহিংসা, প্রতিশোধে লিপ্ত হবেন না। কোনো পরাজিত শক্তি কিংবা কেউ বিএনপির নাম ব্যবহার করে অপকর্ম করতে চাইলে তাদের আইনের হাতে তুলে দিন। যদি কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে স্খলনজনিত অপরাধের কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনে আহত যেসব ব্যক্তি বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তাদের খোঁজ নিয়েছেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। গত শুক্রবার রাজধানীর পঙ্গু হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল। এর আগে দুপুরে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির।
দলীয় সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরসহ সারা দেশে অপকর্মকারীদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়াসহ ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নানা নির্দেশনা মাইকিং করে প্রচার করছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু বলেন, ‘ছাত্র-জনতার জীবনের বিনিময়ে আওয়ামী স্বৈরশাসনের পতন ঘটেছে। শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা যাবে না। যে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হয়েছে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। দেশের জনগণ যাতে গণতন্ত্রের সুফল ভোগ করতে পারে সে চেষ্টা আমাদের করতে হবে। সুযোগসন্ধানীরা অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়েছে। কোনো নৈরাজ্যকারী এবং সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না। ব্যবসায়ীদের বলব, আপনারা অতীতের মতো ব্যবসা পরিচালনা করুন। যদি বিএনপির কোনো নেতাকর্মীও হামলা চালাতে আসে তাদের প্রতিহত করুন।’
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, ‘জনসচেতনতায় নগরীর সব ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মাইকিং করা হচ্ছে। আমরা মাইকিং করে বলছি লুটপাট ও চাঁদাবাজি করছে এই ধরনের যারা দুষ্কৃতকারী তাদের ধরে পুলিশে দিয়ে দেবেন। কেউ কোনো চাঁদা দেবেন না। আর কাউকে চাঁদা দিতে হবে না। আমরা বাংলাদেশে স্বৈরাচার দেখতে চাই না গণতন্ত্র চাই।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।