৭ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা। প্রতিবছরের মতো এবারেও পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এবং চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে সবার আগে। নোবেল পুরস্কারকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
নোবেলজয়ীরা অর্থমূল্যের সঙ্গে স্বীকৃতি হিসেবে পান একটি সার্টিফিকেট ও স্বর্ণের মেডেল। এটা বিজয়ীদের জন্য এক বিশেষ সম্মান। তবে মেডেলটি যারা ভালো করে খেয়াল করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই মেডেলের দুই পাশে দুই ধরনের ছবি দেখে থাকবেন। একপাশে চিরচেনা আলফ্রেড নোবেলের ছবি। কিন্তু অন্য পাশে কিসের ছবি? সেসব ছবির ইতিহাস কী?
নোবেল পুরস্কারের মেডেল নকশা করেন সুইডিশ ভাস্কর ও খোদাইকার এরিক লিন্ডবার্গ। ১৯০২ সালে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্ব এবং সাহিত্যের জন্য প্রথম স্বর্ণের নোবেলপদক দেওয়া হয়। যদিও নোবেল দেওয়া শুরু হয় ১৯০১ সাল থেকে। কিন্তু ১৯০১ সালে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা হলেও, তাঁদের হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়নি। কারণ, এ সময়ের মধ্যে নোবেল কমিটি থেকে মেডেলের দুই পাশের নকশা অনুমোদন পায়নি।
নোবেল মেডেলের নকশাকারক এরিক লিন্ডবার্গ ও তাঁর পিতা অ্যাডলফ লিন্ডবার্গের মধ্যকার চিঠিপত্র থেকে জানা যায়, ১৯০১ সালের নোবেল বিজয়ীদের প্রথমে একটি সাময়িক পদক দেওয়া হয়েছিল। এই অস্থায়ী পদকে ছিল আলফ্রেড নোবেলের ছবি। তবে সেটা ছিল সংকর ধাতুর তৈরি। আর আমরা এখন যে মেডেল দেখি, সেটা তৈরি করতে আরও কিছুদিন সময় লাগে। ফলে প্রথম স্বর্ণের মেডেল দেওয়া শুরু হয় ১৯০২ সাল থেকে।
১৯০২ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত নোবেলের সব মেডেল তৈরি করা হতো সুইডেনের রাজকীয় টাকশালে। নাম রয়্যাল মিন্ট এসকিলস্টুনা মিন্টভারকেট। ২০১০ সাল থেকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের মেডেল তৈরির দায়িত্ব পায় নরওয়ের ডেট নর্স্ক মিন্টভারকেট। ২০১২ সাল থেকে নোবেল পুরস্কারের বাকি পদকগুলো তৈরি হয় সুইডেন ও নরওয়ে। এই দুই দেশের টাকশালে যৌথভাবে তৈরি হয় পদকগুলো। আর মেডেল তৈরিতে ব্যবহৃত ছাঁচগুলো তৈরির দায়িত্ব পায় নকশাকারক প্রতিষ্ঠান ‘অ্যান্ডার্স এরিকসন’স অ্যাটেলিয়া’।
আলফ্রেড নোবেল যেসব বিভাগে নোবেলের কথা বলে গেছেন, অর্থাৎ পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্ব এবং সাহিত্যের মেডেলের একপাশে আলফ্রেড নোবেলের ছবি ব্যবহৃত হয়। সেই প্রতিকৃতিতে দেখা যায়, আলফ্রেড নোবেল শার্ট, জ্যাকেট, ওভারকোট ও একটা বো-টাই পরে আছেন। ধারণা করা হয়, সুইডেনের ফটোগ্রাফার গোস্টা ফ্লোরম্যান আলফ্রেড নোবেলের এই ছবিটি তুলেছিলেন। আর সেই ছবি অনুসারে এরিক লিন্ডবার্গ নোবেল মেডেলের নকশা করেন।
নোবেল পদকের সামনের দিকে আলফ্রেড নোবেলের প্রতিকৃতির বাঁয়ে ‘ALFR• NOBEL’ লেখা রয়েছে। ডান দিকে ল্যাটিন ভাষায় লেখা আছে ‘NAT• MDCCCXXXIII OB• MDCCCXCVI’। ‘NAT’ শব্দটি ‘natalis’ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এর অর্থ ‘জন্ম’। আর ‘OB’ শব্দটি ‘obitus’ থেকে নেওয়া হয়েছে। এর অর্থ ‘মৃত্যু’। রোমান সংখ্যাগুলো যথাক্রমে ১৮৩৩ ও ১৮৯৬ সাল নির্দেশ করে। এই সাল দুটি আলফ্রেড নোবেলের জন্ম ও মৃত্যুর বছর। আরও ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যাবে, মেডেলের নিচে বাঁয়ের কোণায় ছোট আকারে লেখা ‘E. LINDBERG 1902’। মানে মেডেলটির ১৯০২ সালে এরিক লিন্ডবার্গের নকশা করেছিলেন।
মেডেলের নিচের প্লেটের মাঝামাঝি নোবেল বিজয়ীদের নাম খোদাই করা থাকে। সাধারণত বিজয়ীদের নামের প্রথম ও মাঝের অক্ষর সংক্ষেপে লিখে নামের শেষ অংশ পুরোটা থাকে। তার নিচে রোমান সংখ্যায় বছর উল্লেখ থাকে। অর্থাৎ যে বছর পুরস্কার দেওয়া হয়, সেই সাল। যেমনটি এই মেডেলে দেখা যাচ্ছে ‘A. BOHR / MCMLXXV’।
এর মানে অউ নীলস বোর ১৯৭৫ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। পারমাণবিক নিউক্লিয়াসে যৌথ গতি ও কণার গতির মধ্যকার সম্পর্ক আবিষ্কারের জন্য বেন মোটেলসন এবং জেমস রেইনওয়াটারের সঙ্গে যৌথভাবে এই পুরস্কার পান তিনি।
মেডেলের ডানে ছোট আকারে এরিক লিন্ডবার্গের নাম রয়েছে। আর মেডেলের চারপাশে আরও কিছু লেখা আছে। ওপরের অংশে ল্যাটিন ভাষায় লেখা ‘INVENTAS• VITAM• IUVAT EXCOLUISSE• PER• ARTES’। রোমান কবি ভার্জিলের লেখা বিখ্যাত বই ঈনিড (Aeneid) কাব্যের ষষ্ঠ খন্ডের ৬৬৩ নং লাইন থেকে বাক্যটি নেওয়া হয়েছে। সহজ ভাষায় এর অর্থ ‘আবিষ্কৃত শিল্পের সাহায্যে জীবনের মান উন্নয়ন’। মেডেলের নিচের অংশে বাঁয়ে ও ডানে যথাক্রমে ‘REG• ACAD• SCIENT• SUEC•’ লেখা আছে। এটার সাহায্যে রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অফ সায়েন্সেস বোঝায়।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel