আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নোবেল পুরষ্কার ২০২৩ বিজয়ীদের তালিকা ধীরে ধীরে প্রকাশ হচ্ছে। এরিমধ্যে এবছর অর্থনীতি এবং চিকিৎসা শাস্ত্রে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে অন্য বিভাগেও বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করবে নোবেল কতৃপক্ষ। প্রতিবছর অক্টোবর মাস আসলেই নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করে আসছে নোবেল কতৃপক্ষ।
নোবেল পুরস্কার ২০২৩ তালিকা জানতে আই নিউজের আজকের এ প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ পড়ুন। কেননা, আজকের এই লেখা শুধু নোবেল বিজয়ীদের তালিকাও নয়, জানাবো নোবেল প্রাইজের ব্যাপারেও কিছু বিস্তারিত তথ্য।
২০২৩ সালে চিকিৎসা বিজ্ঞানে দুই নোবেল বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তারা হলেন, কাতালিন কারিকো ও ড্রু ওয়েইজম্যান। নোবেল পুরস্কারের ওয়েবসাইটে জানানো হয়, নিউক্লিওসাইড বেজ মডিফিকেশন সংক্রান্ত আবিষ্কারের জন্য চিকিৎসায় ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তাদের এ আবিষ্কারের ওপর ভর করে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর এমআরএনএ টিকা উদ্ভাবন করা হয়।
আলফ্রেদ নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। ২৬ এপ্রিল ১৮৯৭-র আগ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবণতার জন্য নরওয়ে থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয় নি। তার উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন।
১৯০১ সাল থেকে চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। এ যাবত ১২ জন নারী চিকিৎসায় নোবেল পেয়েছেন। চিকিৎসায় সর্বকনিষ্ঠ নোবেলজয়ী হরেন ফ্রেডরিক জি. ব্যান্টিং। তিনি ইনসুলিন আবিষ্কারের জন্য ১৯২৩ সালে নোবেল পেয়েছিলেন। চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি বয়সী নোবেলজয়ীর নাম পেটন রৌস। তিনি ৮৭ বছর বয়সে এ পুরস্কার পান।
আজ মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) পদার্থবিজ্ঞানে বিভাগে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করবে নোবেল কতৃপক্ষ। এতে জানা যাবে এবছর অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য কারা পেয়েছেন নোবেল পুরষ্কার ২০২৩। এর আগের বছর অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছিলেন তিন জন। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান বেন এস বার্নাকে, সিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ডগলাস ডব্লিউ ডায়মন্ড এবং ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফিলিপ এইচ ডিবভিগকে এ বিভাগে নোবেল দেয়া হয়।
বুধবার রসায়ন ও বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে সাহিত্যের পুরস্কার। পরে আগামী শুক্রবার অসলো থেকে ঘোষণা করা হবে বহুল কাঙ্ক্ষিত নোবেল শান্তি পুরস্কার। আর অর্থনীতির পুরস্কারটি ঘোষণা করা হবে ৯ অক্টোবর।
সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের নামে ও তার রেখে যাওয়া অর্থে ১৯০১ সাল থেকে নোবেল পুরস্কার দেয়া শুরু হয়। প্রতি বছর চিকিৎসা, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে দেয়া হয় বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ এই পুরস্কার। ১৮৯৫ সালে এক উইলে ‘মানবজাতির সর্বোচ্চ সেবায় অবদান রাখা’ ব্যক্তিদের জন্য এই পুরস্কার নিবেদিত করেছেন তিনি।
আলফ্রেড নোবেল জন্মগ্রহণ করেন ২১ অক্টোবর ১৮৩৩ সালে সুইডেনের স্টকহোমে একটি প্রকৌশল পরিবারে। ১৮৯৪ সালে তিনি একটি বফর লোহা ও ইস্পাত কারখানা ক্রয় করেন, যা পরবর্তীতে একটি অন্যতম অস্ত্র তৈরির কারখানায় পরিণত করেন। এটি তাঁর জীবনের পরবর্তী গতিপথ বদলে দিয়েছিল বলা যায়। তিনি ব্যালিস্টিক উদ্ভাবন করেন, যা সারা বিশ্বব্যাপী ধোঁয়াবিহীন সামরিক বিস্ফোরক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তার ৩৫৫ টি উদ্ভাবনের মাধ্যমে তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর ধন-সম্পদের মালিক হন, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ডিনামাইট।
১৮৮৮ সালে আলফ্রেড মৃতদের তালিকা দেখে বিস্মত হন, যা একটি ফরাসি পত্রিকায় এ মার্চেন্ট অব ডেথ হু ডেড প্রকাশিত হয়। যেহেতু নোবেলের ভাই লুডভিগ মারা যায়, এই নিবন্ধটি তাকে ভাবিয়ে তোলে এবং খুব সহজেই বুঝতে পারেন যে ইতিহাসে তিনি কীভাবে স্মরণীয় হতে চান। যা তাকে তার উইলটি পরিবর্তন করতে অনুপ্রাণিত করে। ডিসেম্বর ১৮৯৬ সালে আলফ্রেদ নোবেল তার নিজ গ্রাম স্যান রিমো, ইতালিতে মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর।
যেভাবে এলো নোবেল পুরষ্কার
নোবেল তার জীবদ্দশায় অনেকগুলো উইল লিখে গিয়েছিলেন। সর্বশেষটা লেখা হয়েছিল তার মৃত্যুর মাত্র এক বছর আগে ২৭ নভেম্বর ১৮৯৫ সালে প্যারিসে অবস্থিত সুইডিশ-নরওয়ে ক্লাবে। বিস্ময় ছড়িয়ে দিতে, নোবেল তার সর্বশেষ উইলে উল্লেখ করেন যে, তার সকল সম্পদ পুরস্কার আকারে দেয়া হবে যারা পদার্থ, রসায়ন, চিকিৎসা, শান্তি ও সাহিত্যে বৃহত্তর মানবতার স্বার্থে কাজ করবেন।
নোবেল তার মোট সম্পদের (৩১ মিলিয়ন সুইডিশ ক্রোনা) ৯৪ শতাংশ এই পাঁচটি পুরস্কারের জন্য উইল করেন। ২৬ এপ্রিল ১৮৯৭-র আগ পর্যন্ত সন্দেহ প্রবণতার জন্য নরওয়ে থেকে এই উইল অনুমোদন করা হয় নি। তার উইলের সমন্বয়কারী রগনার সোলম্যান ও রুডলফ লিলজেকুইস্ট নোবেল ফাউন্ডেশন তৈরি করেন। যার কাজ তার সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ ও নোবেল পুরস্কার অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। এবছর আয়োজিত হবে নোবেল পুরষ্কার ২০২৩ এর আসর।
১৮৯৭ সালে নোবেলের উইল অনুমোদন হবার সাথে সাথেই নোবেল পুরস্কার প্রদানের জন্য নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি নামক একটি সংস্থা তৈরি করা হয়। অতি শীঘ্রই নোবেল পুরস্কার দেবার অন্যান্য সংস্থাগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তাদের মধ্যে ৭ জুন ক্যারোলিংস্কা ইনিস্টিটিউট, ৯ জুন সুইডিশ একাডেমি এবং ১১ জুন রাজকীয় সুয়েডীয় বিজ্ঞান একাডেমি।
নোবেল ফাউন্ডেশন কীভাবে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়, তার একটি নীতিমালায় পৌছায় এবং ১৯০০ সালে নোবেল ফাউন্ডেশন নতুনভাবে একটি বিধি তৈরি করে যা রাজা অস্কার কর্তৃক জারি হয়। ১৯০৫ সালে সুইডেন ও নরওয়ের মধ্যে বন্ধন বিলুপ্ত হয়। তারপর থেকে নরওয়েজীয় নোবেল কমিটি শুধু মাত্র শান্তিতে নোবেল পুরস্কার এবং সুইডেনের প্রতিষ্ঠানগুলো অন্যান্য পুরস্কারগুলো প্রদানের দায়িত্ব পায়।
আগামী শুক্রবারে নোবেল পুরষ্কার ২০২৩ বিজয়ীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়া যাবে। তবে বিজয়ী ব্যক্তিরা এখনি নোবেল পুরষ্কার পাচ্ছেন না। কারণ, নোবেল বিজয়ীদের হাতে নোবেল পুরষ্কার তুলে দেয়া হবে আলফ্রেড নোবেলের জন্মদিন ২১ অক্টোবর।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।