নিজস্ব প্রতিবেদক : পূর্বের কয়েকটি ব্যাংকের ধারাবাহিকতায় ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়ে একটি নির্দিষ্ট ব্যবসায়ী গ্রুপের হাতে চলে গেছে কি না- এমন যখন আলোচনা চলছে চারদিকে, তখন ব্যাংকটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেছেন, ন্যাশনাল ব্যাংক দখল হয়নি। সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে আমরা নতুন পর্ষদের দায়িত্বে এসেছি। সরকার আমাদেরকে এখানে বসিয়েছেন।
সোমবার ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন শেষে নিজ কক্ষের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
ব্যাংকটি যে বেসরকারি খাতের- এই বিষয়টি তখন খলিলুর রহমানকে স্মরণ করিয়ে দিলে আর কথা না বাড়িয়ে নিজ কক্ষে প্রবেশ করেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ন্যাশনাল ব্যাংকটি দখল হয়ে গেছে কি না।
নবগঠিত পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব গ্রহণ নিয়ে সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিল ন্যাশনাল ব্যাংক। এতে নবনিযুক্ত চেয়ারম্যানসহ ১০ জন পরিচালক উপস্থিত ছিলেন। কোন পরিচালক কোন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে বোর্ডে এসেছেন- বার বার এই প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান বা অন্য পরিচালকগণ কোন উত্তর না দিয়ে সংবাদ সম্মেলন অসমাপ্ত রেখেই উঠে যান।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ব্যাংকের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা খন্দকার আনোয়ার এহতেশামের উদ্যোগে আগত সাংবাদিকেদের হাতে উপহারের ব্যাগ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে নগদ ৫ হাজার টাকাসহ উপহারসামগ্রী থাকায় ব্যাংক খাতের সাংবাদিকরা এগুলো ফিরিয়ে দেন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে খলিলুর রহমান জানান, পূর্বে ব্যাংকটির অনিয়মের সাথে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এমনকি গত দুই বছরে ব্যাংকটিতে সংঘটিত নিয়োগ বাণিজ্যের সাথে যারা জড়িত ছিলেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা ব্যবস্থা নেব। তিনি বলেন, আমরা চাই ব্যাংকটিতে সুশাসন ফিরিয়ে এনে শক্তিশালী করতে।
ব্যাংকটি অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত বা মার্জ হবে কি না- সংবাদ সম্মেলনে এই প্রশ্নের জবাবে খলিলুর রহমান বলেন, আমরা কারো সাথে মার্জ হবো না। এজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন বোর্ড গঠন করে দিয়েছে। আমরা নতুন নেতৃত্বে নিজেরাই সবল হয়ে ব্যাংকটিকে সামনে এগিয়ে নেব।
সংবাদ সম্মেলনের আগের দিন রোববার (৫ মে) মাত্র সাড়ে চার মাসের মাথায় দ্বিতীয়বারের মতো দেশের সর্ববৃহৎ আর্থিক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির বিদ্যমান পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন পর্ষদও গঠন করে দেয় একই দিনে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২ মে) আগের পর্ষদের অধিকাংশ পরিচালক একযোগে পদত্যাগ করেন। গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সুপারিশে ব্যাংকটির পর্ষদ প্রথমবার ভেঙে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সংবাদ সম্মেলনে নতুন পর্ষদ জানায়, নতুন পরচালনা পর্ষদ ন্যাশনাল ব্যাংকর বর্তমান ব্যবস্থাপনা পর্ষদকে নিয়ে ব্যাংকিং সুশাসন নিশ্চিতকরণ ও গ্রাহকের আস্থা অর্জনে নিরলস কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছে। এছাড়াও বিভিন্ন সূচকে উন্নয়ন নিশ্চিত করে ন্যাশনাল ব্যাংকের হারানো ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনবে।
নতুন পরচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমান বলেন, আমরা ব্যবসায়ীদের প্রয়োজন বুঝি। ফলে ব্যবসায়ীদের জন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে ও তাদের পাশে থেকে ন্যাশনাল ব্যাংককে একটি ব্যবসায়ীবান্ধব ব্যাংক হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বন্ধ পরিকর। এর মাধ্যমে ন্যাশনাল ব্যাংক ঘুরে দাঁড়াবে ও তার হারানো এতিহ্য ফিরে পাবে বলে আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি। ন্যাশনাল ব্যাংকের এই অগ্রযাত্রায় আমরা সাংবাদিকদের পাশে চাই।
পুনর্গঠিত বোর্ডের উদ্যোক্তা ও প্রতিনিধি পরিচালদের মধ্যে রয়েছেন চট্টগ্রামের কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব খলিলুর রহমান, ফেনীর ব্যবসায়ী ও হোসাফ গ্রুপের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন, সেনাবাহিনীর সাবেক চিফ অব জেনারেল স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. শফিকুর রহমান, প্রিমিয়ার ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কেডিএস গ্রুপের বর্তমান কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল করিম এফসিএমএ, রাঙ্গুনিয়ার ব্যবসায়ী উদ্যোক্তা ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদের ছোট ভাই এরশাদ মাহমুদ, এস আলম গ্রুপের আইনজীবী আহসানুল করিম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক।
স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দীন নিজামী, এস আলম গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক ফাইন্যান্স সুব্রত কুমার ভৌমিকের স্ত্রী ড. রত্না দত্ত এফসিএ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক নির্বাহী পরিচালক এ বি এম জহুরুল হুদা।
এদের মধ্যে লে. জে. মো. শফিকুর রহমান, মো. রিয়াজুল করিম এফসিএমএ, এরশাদ মাহমুদ, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবী আহসানুল করিম ও অধ্যাপক এ কে এম তফাজ্জল হক বোর্ডে কোন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করছেন সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনি চেয়ারম্যানসহ উপস্থিত পরিচালকগণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।