জুমবাংলা ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো জেলার নামে নয়, নতুন দুটি বিভাগ পদ্মা ও মেঘনা নদীর নামেই হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কুমিল্লা ও তার আশপাশের জেলা নিয়ে মেঘনা বিভাগ এবং ফরিদপুর ও তার আশপাশের জেলা নিয়ে পদ্মা নদীর নামে বিভাগ করা হবে। গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি বা একনেক সভায় তিনি এ কথা বলেন।

সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি এ সময় প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন অনুশাসনও তুলে ধরেন। গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বিফ্রিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রি ড. শামসুল আলম। এ সময় পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মামুন-আল-রশীদ, আর্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগমসহ পরিকল্পনা কমিশনের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় ১০ প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের জন্য একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়। এ প্রকল্পের ব্যয় হবে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। এ সময় কুমিল্লা ও ফরিদপুর বিভাগ নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কুমিল্লা ও তার আশপাশের জেলা নিয়ে মেঘনা বিভাগ এবং ফরিদপুর ও তার আশপাশের জেলা নিয়ে পদ্মা নদীর নামে বিভাগ করা হবে। গত অক্টোবরে আওয়ামী লীগের এক সম্মেলনে কুমিল্লাকে বিভাগ হিসেবে ঘোষণা করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দাবি জানান কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার। কিন্তু সেদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, কুমিল্লা বিভাগ নয়, তিনি নতুন বিভাগ করে নাম দেবেন মেঘনা। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফরিদপুর বিভাগ হবে পদ্মার নামে। আর কুমিল্লা বিভাগ হবে মেঘনা নামে। কুমিল্লা নাম দেয়া হবে না। কারণ, কুমিল্লার নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কু’ নাম দেব না। কুমিল্লা নামের সঙ্গে মোশতাকের নাম জড়িত। কুমিল্লার নাম নিলেই মোশতাকের নাম মনে পড়ে যায়। তাই কুমিল্লার নাম আসবে না। তা ছাড়া ফরিদপুরের নামেও বিভাগ দিচ্ছি না।’
এদিকে সভায় ডিজিটাল অর্থনৈতিক পরিবেশ তৈরিসহ ১০ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৪৪৭ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ৩ হাজার ৬৮২ কোটি ২৮ লাখ টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ১৫৩ কোটি ৮১ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে ৩ হাজার ৬১০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, এলডিসি উত্তরণে জাতিসংঘের যে সংস্থা কয়েকদিন আগে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশকে সুপারিশ করেছে সে সংস্থাকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, এলডিসি উত্তরণে তিনটি সূচকেই আমরা এ প্লাস পেয়ে পাস করেছি। তিনি আরও বলেন, করোনা মোকাবিলায় আমরা সফল হয়েছি। এখন ওমিক্রণ মোকাবিলায় সকলকে সর্তক থাকতে হবে। বিশেষ করে মাস্ক পরতে হবে। এম এ মান্নান জানান, ‘ডিজিটাল গভর্নমেন্ট ও অর্থনীতি সমৃদ্ধকরণ’ প্রকল্পটি ডিজিটাল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য একটি ডিজিটাল লিডারশীপ তৈরি করা হবে। উদীয়মান প্রযুক্তি বিষয়ে ২০ হাজার যুবক ও যুবমহিলাদের প্রশিক্ষণ দেয়া, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ডিজিটালাইজেশন, ডিজিটাল ইকোনমিতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানকে বিনিয়োগে উৎসাহ প্রদান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২ হাজার ৫৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ৩৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা এবং বিশ্বব্যাংকের ঋণ থেকে ২ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে- মোংলা বন্দর হতে চাঁদপুর-মাওয়া-গোয়ালন্দ হয়ে পাকশী পর্যন্ত নৌ-রুটের নাব্যতা উন্নয়ন। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন, ব্যয় ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আওতায় চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে ক্রীড়া স্কুল প্রতিষ্ঠা, ব্যয় ৩১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। ৫টি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (সিলেট, বরিশাল, রংপুর, রাজশাহী এবং ফরিদপুর) বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিট স্থাপন, ব্যয় ৪৫৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় একটি করে ৫৬০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, ব্যয় ৭১৩ কোটি টাকা। জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো মানব সম্পদ ও প্রযুক্তি দক্ষতা উন্নয়ন, ব্যয় ১৩ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সেচ অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প, ব্যয় ৩২২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার এন্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট, ব্যয় ১ হাজার ১৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা এবং বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩১৩ কোটি টাকা।
পর্যায়ক্রমে দেশের সবগুলো বিভাগী শহরে ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে খাস বা পতিত জমি ব্যবহার করতে হবে। এতে যুব সমাজ ক্রীড়ার সঙ্গে আরও বেশি যুক্ত হতে পারবে। এছাড়া যুবকরা যেন জঙ্গিবাদ বা খারাপ কোনো দিকে না যায় সেদিকে নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের মান ঠিক রাখার নির্দেশও দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে বলেছেন, উন্নয়ন কাজে যে টাকা খরচ হয় তা যেন সঠিক কাজে লাগে।
বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনাগুলো দিয়েছেন। এক্ষেত্রে নদী ড্রেজিং সংক্রান্ত প্রকল্পে যেহেতু পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ও নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় যুক্ত থাকে। তাই এক্ষেত্রে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সমন্বয় করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া ড্রেজিং কার্যক্রমে সাবধানতা অবলম্বন করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি হাওড় এলাকায় এলিভেটেড রাস্তা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। যাতে শীতকালে ধান চাষ করা যায় এবং বর্ষাকালে পানি চলাচল করতে পারে। বর্ষাকালে সেচকাজে ভ‚-উপরিস্থ পানি ব্যবহার করার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
এক প্রশ্নের জবাবে এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন দেরি শুধু বাংলাদেশে নয়, সুইজারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডেও হয়। আমার পরিচিত একজন সুইজারল্যান্ডে থাকেন। তিনি জানান, দুই বছরের রাস্তার কাজ ৪ বছরেও শেষ হচ্ছে না। তারপর আমরা চেষ্টা করছি যাতের প্রকল্প বারবার সংশোধন না হয়। অনেক সময় জমি অধিগ্রহণসহ নানা কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেরি হয়।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, কুমিল্লা বিভাগের নাম মেঘনা ও ফরিদপুর বিভাগের নাম পদ্মা নদীর নামে করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও আরো আগে তিনি এ বিষয়ে বলেছিলেন। এছাড়া সংশোধিত প্রকল্পের ক্ষেত্রে এর কারণ ও নতুন কাজ বিষয়ে ব্যাখ্যা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে মডেল মসজিদগুলো যেন ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হয়। এটা যেন জঙ্গিবাদ উৎসাহীত না হয়। সেদিকে নজর রাখতে হবে। এছাড়া দক্ষিণাাঞ্চলে ধানচাষ বাড়াতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে লবণ সহিষঞ্চু ধান চাষ বাড়ার তাগিদ দিয়েছেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



