
জুমবাংলা ডেস্ক : পদ্মা সেতুর জন্য দেশের সব মানুষই অপেক্ষায় রয়েছে। কবে এ স্বপ্নের পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হবে। চলবে গাড়ি, চলবে রেল। কবে থেকে শুরু হবে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে স্বাভাবিক এ চলাচল। নির্মাণাধীন স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেখতে যায় অনেকেই।
এ চিন্তা-চেতনাকে মাথায় রেখেই ঢাকার ধামরাই উপজেলার সুতিপাড়া গ্রামের এক স্কুলছাত্র নিজ বাড়ির পাশে প্রতীকী পদ্মা সেতু নির্মাণ করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে মানুষকে। তার নাম মো. সোহাগ আহাম্মেদ (১৭)। সে ভালুম আতাউর রহমান খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান শাখার দশম শ্রেণীর ছাত্র ও সুতিপাড়া গ্রামের মো. সুলতান উদ্দিন আহাম্মেদের ছেলে।
হুবহু পদ্মা সেতুর আদলে নির্মিত তার পদ্মা সেতু দেখতে প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষানুরাগীরা তার প্রশংসা ও তাকে টাকা পয়সা দিয়ে সম্মানিত করছে। তার এ দুর্লভ প্রতিভা দেখে মানুষজন অবাক বিস্ময়ে তার নির্মিত এ প্রতীকী পদ্মা সেতুর পানে তাকিয়ে বিস্মিত হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা বেনজীর আহমদ, সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা এমএ মালেক, সাবেক অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান মো. আফসার উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মোহাদ্দেছ হোসেন, পৌর মেয়র গোলাম কবীর মোল্লা ও সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাজাসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ওই শিক্ষার্থীর নির্মিত পদ্মা সেতু পরিদর্শনে গিয়ে তার প্রশংসা করেছেন। তাকে নগদ অর্থ দিয়েও সম্মানিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে পদ্মা সেতুর নাম শুনেই সোহাগের ইচ্ছে হয় সে নিজে ওই পদ্মা সেতুতে গিয়ে কাজ করবে। কিন্তু পরিবারের চাপে তা কিছুতেই সম্ভব হয়নি। কিছুতেই পদ্মা সেতু বানানোর ইচ্ছেটা মাথা থেকে নামাতে পারে না সোহাগ।
কিছুদিন পর থেকেই মাটি আর বাঁশ দিয়ে সেতু বানানোর কাজ শুরু করে সোহাগ। সেতু বানানোর কিছু সময় পরই সেতুটি ভেঙ্গে যায়। এরপর আবার বাঁশ ও মাটি দিয়ে নতুন আঙ্গিকে শুরু হয় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ। পড়ালেখা বাদ দিয়ে এনিয়ে পড়ে থাকতে দেখে মা-বাবাও বকাঝকা করেন তাকে।
পরে ২০১৯ সালে আবার আরেকটি সেতু তৈরি করে সোহাগ। কিন্তু মনের মতো পাকাপোক্ত না হওয়ায় সেটাও আবার ভেঙ্গে যায়। এর পর ইন্টারনেট থেকে পদ্মা সেতুর নকশা দেখে ২০২০ সালের ১ নভেম্বরের থেকে আবার তৃতীয়বারের মতো পদ্মা সেতুর আদলে সেতু বানানোর কাজ শুরু করে সোহাগ।
দীর্ঘ ৯ মাস পর চলতি বছরের ৩০ জুন সোহাগের পদ্মা সেতুর আদলে সেতু বানানোর কাজ সমাপ্ত হয়। এর পরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার নির্মিত প্রতীকী পদ্মা সেতু ভাইরাল হয়ে যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দর্শনার্থীরা ওই সেতুটি দেখতে আসে।
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থী সোহাগ বসত বাড়ির আঙ্গিনায় ফাকা একটি জায়গায় পদ্মা সেতুটি তৈরি করেছে। সেতুটির নিচ দিয়ে রেললাইন, চারটি লেন ও বাতির ব্যবস্থাও করা হয়েছে। এ পদ্মা সেতুটি তৈরি করা হয়েছে মূলত মাটি, বাঁশ, সিমেন্ট, মোবাইলে ব্যবহার করা ছোট বাতি ও সাদা কালো রং দিয়ে। সেতুর নিচে মাটি খুঁড়ে বানানো হয়েছে পদ্মা নদী। সেতুটির এক প্রান্তে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। সেতুটির দুই লেনের মাঝে লাগানো হয়েছে ছোট ফুলের চারা।
দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন আসছে এই সেতুটি দেখতে। সবচেয়ে বেশি দর্শকের সমাগম হয় বিকালের দিকে। দর্শকদের আপ্যায়নের জন্য চা-স্টল, ফুসকা ও চটপটির দোকানসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীর বিপণী বিতান বসে।
পদ্মা সেতু নির্মাণকারী মো. সোহাগ আহম্মেদ বলেন, আমি ছোট বেলা থেকেই বিভিন্ন প্রতীকী রাস্তা-ঘাট, সেতুসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করতাম। পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান যেদিন বসানো হয় সেদিন থেকেই পদ্মা সেতুর আদলে সেতু বানানোর কাজ শুরু করি। দুই বছরে দুটি সেতু বানালেও তা ভেঙ্গে যায়। পরে ২০২০ সালে ইন্টারনেটে পদ্মা সেতুর নকশা পাওয়ার পর নভেম্বর মাসের এক তারিখ থেকে আবার সেতু বানানোর কাজে মনোনিবেশ করি। আমার মা-বাবাও বকাঝকা করতো।
সে বলে, কিন্তু এখন এ সেতু দেখতে দর্শনার্থী ভিড় জমানোয় আমার মা-বাবা অনেক খুশি হন। এ পর্যন্ত কয়েক হাজারের মতো মানুষ এসেছে প্রতীকী এ পদ্মা সেতু দেখার জন্য। প্রতিদিনই নতুন নতুন দর্শনার্থী আসছে।
বড় হয়ে কি হওয়ার ইচ্ছা জানতে চাইলে সোহাগ বলে, আমি বড় হয়ে একজন ভালো ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। আমার দেশে সেতু বানানোর জন্য আজ চায়না থেকে প্রকৌশলী এনে সেতু তৈরি করা হচ্ছে। এমন যেন আর না হয়। আমরা যারা বাংলাদেশের সন্তান আছি তারা যেন আমাদের দেশসহ বিদেশে গিয়ে কাজ করতে পারি আমি এমন একজন দক্ষ প্রকৌশলী হতে চাই।
সোহাগের বাবা সুলতান উদ্দিন আহম্মেদ জানান, পড়াশোনা বাদ দিয়ে সোহাগ যখন মাটি আর বাঁশ নিয়ে পরে থাকতো তখন আমার খুব রাগ হত। আমি ওকে অনেক বকাঝকা করতাম। ওর কাজে ও সফল হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ওর নির্মিত পদ্মা সেতু দেখতে আসছে। এখন গর্বে আমার বুকটা ভরে যায়।
এ বিষয়ে সুতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম রাজা জানান, সোমবার সকালে সুতিপাড়া গ্রামে সোহাগ আহাম্মদের বানানো পদ্মা সেতুটি দেখেছি। আমার এলাকার একজন ছেলের এমন প্রতিভা আসলেই প্রশংসার। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলাদেশে এমন প্রতিভাবান শিক্ষার্থীদের প্রতিভা বিকাশে সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করবো। এরাই আগামীর ভবিষ্যৎ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



