জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে বিনামূল্যে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছিল জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার)। বিভিন্ন স্থানে বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেলেও প্রতিষ্ঠানটির কাছে গুরুত্ব পেয়েছে বাসায় গিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা।এর বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার ছয়শ টাকা। সংগৃহিত সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়াই একদিন পরে রিপোর্ট দেওয়া হতো।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরী (৪০) সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার বাকি চারজন হলেন, হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারি এবং সাঈদ চৌধুরী (৪৭) ও বিপ্লব দাস (২৫)। এর মধ্যে হুমায়ুন ও তানজীনা এক সময় জেকেজিতে কর্মরত ছিলেন। এখন তারা নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ছাড়াই ফল দেন। বাকি দুজন এখনো জেকেজিতে কর্মরত আছেন।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, একজন ভূক্তভোগী তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। জানিয়েছিলেন তার বাসায় হিয়ে নমুনা নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর একদিনের মধ্যেই ফল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তার দেহে করোনা শনাক্ত হয়েনি। পরবর্তীতে অন্য জায়গায় পরীক্ষা করে দেখেছেন তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এমন অভিযোগের পর তারা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে হুমায়ুন্ কবীর ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেকেজির সিইওসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইইডিসিআর এর অনুমতি সাপেক্ষে জেকেজি বিনামূল্য নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিলো। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন শ থেকে সাড়ে তিন শজনের নমুনা সংগ্রহ করতো জেকেজি। শর্ত ছিলো, সরকার নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।
তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ বলেন, বিনামূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও এক পর্যায়ে জেকেজি অর্থ সংকুলনের জন্য বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে অনলাইনে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এই দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, গুলশানের শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে।
তিনি আরও জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার হুমায়ুন ও তানজীনা বলেছেন, সংগ্রহীত নমুনা তারা ফেলে দিতেন। নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করতেন। আইইডিসিআর এর প্যাডে ফল লিখে তা মেইল করে পাঠিয়ে দিতেন। করোনার বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে, তাদের পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ উল্লেখ করা হত। কোনো উপসর্গ না থাকলে তার রিপোর্টে নেগেটিভ উল্লেখ করা হত। এভাবেই ইতোমধ্যে ৩৭ জনের ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



