জুমবাংলা ডেস্ক : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার্থী ও অভিবাবক প্রবেশ বিষয়ক নিয়ম নীতি না মানার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। ফলে পরীক্ষার হলে প্রবেশের আগে প্রশ্ন ফাঁসের সমূহ সম্ভাবনা থেকে যাচ্ছে।
নিয়ম অনুযায়ী সময় শুধুমাত্র পরীক্ষার্থীই তার নির্ধারিত শিফটে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন। তার আগে পরে কোনো পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবক কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। তবে, শিক্ষকদের সাথে তাদের আত্মীয় ও পরিচিতজনরা চাইলে দেখা করতে পারবেন। এর সুযোগ নিয়ে আত্মীয় বা পরিচিত শিক্ষার্থীদের শিফটের আগেই নিজ কক্ষে নিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
এর আগে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে কলা ও মানবিক অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক সৈয়দ কামরুল আহসান নিজ কক্ষে ঘনিষ্ঠ তিনজন পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষার পূর্বেই প্রশ্নপত্র দিয়ে দেন বলে অভিযোগ আছে।
জাবিতে শিফটে পরীক্ষা হওয়ার কারণে প্রশ্নের ধরণ প্রায় একই রকম থাকে। ফলে একজন শিক্ষক প্রথম শিফটেই বুঝতে পারেন প্রশ্নের ধরন কেমন হবে। আবার প্রতিটি শিফটের মাঝে ২০ মিনিট বিরতি আছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি চাইলে পরীক্ষার্থীকে খুব সহজেই প্রশ্ন সমাধানে সাহায্য করতে পারেন।
গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) ১ম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। পরীক্ষার প্রথম দিন থেকেই শিক্ষকদের কাছে অবাধ যাতায়াত করছেন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও পাঁচ দিনে কার্যত কোনো পরিবর্তন চোখে পড়েনি। আর আঞ্চলিক সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা বলছেন, প্রশাসন থেকে লিখিত কোনো নির্দেশনা না দেয়ায় জোরালো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছেন না।
গত পাঁচ দিন বিভিন্ন অনুষদ সরেজমিন ঘুরে এবং বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে দেখা যাচ্ছে, নির্দিষ্ট কিছু অনুষদে দু-তিনটি বিভাগ এবং কয়েকজন শিক্ষকের কাছে অনেক বেশি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক নিয়মিত যাতায়াত করছেন। বিএনসিসি ও রোভার স্কাউট সদস্যরা প্রবেশে বাধা দিলেও শিক্ষকরা ফোন করে ছেড়ে দিতে বলেন। ক্ষেত্র বিশেষে শিক্ষকরা নিচে এসে পরীক্ষার্থীকে উপরে নিয়ে গেছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ও মানবিকী অনুষদের তিন দিনের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, প্রায় ১০০ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ভবনটিতে প্রবেশ করেছেন। তিন দিনে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক (২৮ জন) গেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষকদের কাছে। দর্শন বিভাগে ২৪, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে ১৭, ইতিহাস বিভাগে ১৫ এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের কাছে ১৪ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক প্রবেশ করেছেন।
অন্যদিকে তিন দিনে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক (১৫ জন) গেছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ হেল কাফীর কাছে এবং প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খানের কাছে (১০ জন)।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের চার দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, চার দিনে ৪৭জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ভবনটিতে প্রবেশ করেছেন। এর মধ্যে দ্বিতীয় দিন ১৬, তৃতীয় দিন ১০, চতুর্থ দিন ১২ এবং পঞ্চম দিন (তিন শিফট) ৯ জন প্রবেশ করেছেন।
এর মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে গেছেন ১২ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক। আর ইনস্টিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (আইবিএ-জেইউ)- তে ৯, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগে ৭ এবং সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে গেছেন ৬ জন।
জীববিজ্ঞান অনুষদ (ফার্মেসি ভবন)- এর দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে ২১ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক ভবনটিতে প্রবেশ করেছেন। এরমধ্যে ১১ জন গেছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে। ফার্মেসি বিভাগে গেছেন ৫ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগে ৪ জন।
অন্যদিকে দুই দিনে সবচেয়ে বেশী পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক (৭ জন) গেছেন প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মু. নজিবুর রহমানের কাছে।
এছাড়া কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, পরিবেশ বিজ্ঞান এবং ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের তিন দিনের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, বিভিন্ন ব্যাচের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী থিসিস, ল্যাবসহ দাপ্তরিক কারণে বিভাগে প্রবেশ করেছেন। এছাড়া পঞ্চম দিন ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগে ৬ জন পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক বিভিন্ন শিক্ষকের কাছে গেছেন।
বিএনসিসি ও রোভার স্কাউটের সমন্বয়কারীরা জানান, তারা বাধা দিলেও শিক্ষকরা ছেড়ে দিতে বলেন। আবার কিভাবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষকদের অতিথিদের নিয়ন্ত্রণ করবে তার কোনো নির্দেশনা নেই। তাই তারা শিক্ষকদের অতিরিক্ত অতিথি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এজন্য প্রশাসনের সহযোগিতাও কামনা করেন।
এ নিয়ে বিভিন্ন অনুষদের শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপত্তা কমিটির দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরা নিজেদের অসহায়ত্বের কথা জানান। বলেন, এ বিষয়ে কোন লিখিত নির্দেশনা না থাকায় শুধু মৌখিক নির্দেশনার ভিত্তিতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের ক্ষেত্রে তারা কোন হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।
কলা ও মানবিকী অনুষদের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী ও ইতিহাস বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আরিফা সুলতানা বলেন, ‘এ বিষয়ে মৌখিক নির্দেশনা আছে, কিন্তু অনেক শিক্ষক তা মানছেন না। এ নিয়ে তো আমরা তাদের চাপ দিতে পারি না। তবে যেসব শিক্ষকের নামে অভিযোগ আসছে তাদেরকে আমরা বিষয়টি জানিয়েছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (শিক্ষা-১) ও বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব মো. আবু হাসানের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বিষয়টি উপ- উপাচার্য (শিক্ষা)-র নজরে আনেন। তিনি ডিনদের কঠোর হতে অনুরোধ করেন।
এ রকম ঘটনা আজকেও (বুধবার) প্রতি শিফটে হচ্ছে জানালে তিনি বলেন, আবারও আমি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যাতে কোনো শিক্ষক অতিথিদের ভেতরে নিতে না পারেন।
উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি খুবই হতাশাজনক। আমরা নির্দেশনা দিচ্ছি, পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে কোনো শিক্ষক কোনো পরীক্ষার্থীকে ভেতরে নিতে এবং তার রুমে নিয়ে যেতে পারবেন না। সূত্র : ঢাকা টাইমস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।