রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে : ফাল্গুনের শুরু থেকেই শোভা ছড়াচ্ছে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের পুকুরপাড়ে থাকা পলাশগাছটি। সেটির ডালপালা ছেঁয়ে গেছে বসন্তের আগমনী বার্তা বয়ে নিয়ে আসা রঙিন পলাশ ফুলে। এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হচ্ছেন এখানে আসা দর্শকেরা।
রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক কিংবা ঘোড়াঘাট-গাইবান্ধা আঞ্চলিক সড়ক থেকে উপজেলা পরিষদের ফটক পেরিয়ে পূর্বদিকে ঢুকলেই হাতের বাম পাশে পলাশবাড়ী কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বর। এই চত্বর চুম্বন করে পূর্ব পাশেই একটি পুকুর। এটিই উপজেলা পরিষদ পুকুর। আর এই পুকুরের উত্তর-পূর্ব পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে রঙিন চুলের পলাশগাছটি।
এই উপজেলার সুলতানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহওয়াজ কবির জানান, মাঝেমধ্যে অফিসের কাজে এখানে আসতে হয়। এখন এখানে আসলেই নজর চলে যায় পলাশগাছটির দিকে। সেদিকে তাকালে পলাশবাড়ী উপজেলা নামকরণের কিছুটা সার্থকতা পাওয়া যায়। পলাশে লাল হয়ে আছে গাছটি।
গত ৭ ফাল্গুন গিয়ে দেখা যায়, পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদে ঢোকার মুখেই একটি পুকুর। পুকুরের পশ্চিম পাড়ে শহিদ মিনার। উত্তর দিকে মাথা তুলেছে উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্সের নতুন ভবন। পুকুরের এই পাড়েই পূর্ব পাশে দাঁড়িয়ে আছে পলাশগাছটি।
কাছে গিয়ে দেখা যায়, গাছের তলে যেন পলাশফুলের বিছানা। ডালে ডালে পাখির ওড়াউড়ি। গাছের তলায় দাঁড়িয়ে কেউ ফুলের শোভা দেখছিলেন। কেউ তুলছিলেন ছবি। সেখানেই কথা হয় শাহওয়াজের সঙ্গে।
শাহওয়াজের সঙ্গে থাকা রূপক ইসলাম বলেন, পলাশ বসন্তের বার্তাবাহী ফুল। গাছে-গাছে পলাশ-শিমুল না ফুটলে ঋতুরাজের সৌন্দর্য ঠিক ফোটে না।
জাতীয় তথ্য বাতায়ন ঘেঁটে জানা যায়, বর্তমান পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে আগে গোবিন্দগঞ্জ থানা পুলিশের একটি আউটপোস্ট ছিল। ১৯১৯ সালে সেটিকে থানায় উন্নীত করা হয়। ওই সময় সেখানে পলাশগাছের বাগান থাকায় এর নামকরণ করা হয় পলাশবাড়ী থানা।
উপজেলার মহেশপুর এলাকার বাসিন্দা শিমু আক্তার বলেন, রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক ও ঘোড়াঘাট -গাইবান্ধা সড়কটির সংযোগস্থলেই পলাশফুলের বাগান ছিল বলে শুনেছি। তবে তা দেখেছে, এমন কেউ বোধহয় এখন নেই।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, পল্লীকবি জসীম উদদীন একবার পলাশবাড়ী বেড়াতে এসেছিলেন। তখন তিনি এই এলাকার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হন। ঢাকায় ফিরে গিয়ে তিনি নিজের বাসার নাম দিয়েছিলেন পলাশবাড়ী। তাঁর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করেছিলেন পলাশ নামে।
পলাশবাড়ীর ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে লেখা একাধিক বই, পত্রপত্রিকা ও উইকিপিডিয়ায়ও এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
উপজেলার সর্বঙ্গ ভাদুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ শরিফুল ইসলাম বলেন, পলাশবাড়ীর সেই সৌন্দর্যে এখন নেই। নেই সেই পলাশবাগান। কিন্তু এখনো পলাশবাড়ী উপজেলা পরিষদের পুকুরপাড়ে এলে মন কিছুটা হলেও ভালো হয়ে যায়। যদিও পুকুরের পানি অনেক সময় নোংরা থাকে। তবুও এই পলাশফোটা পুকুরের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।