জুমবাংলা ডেস্ক : বরিশালের নবগ্রাম রোডে অবস্থিত হলি কেয়ার মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্র থেকে এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার সকালে নিরাময় কেন্দ্রের চতুর্থ তলার মেঝে থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। নিহত যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নিহত ওই যুবকের নাম চন্দন সরকার (২৫)। তিনি বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বড়পাইকা এলাকার চিত্তরঞ্জন সরকারের ছেলে। নিহতের স্বজনদের দাবি, চন্দনকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। তবে মাদক নিরাময় কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নির্যাতনে মৃত্যু হয়নি, গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছে চন্দন।
বিষয়টি নিয়ে কোতয়ালি মডেল থানার ইনচার্জ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহত যুবকের গলায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।’
নিহত চন্দন সরকারের মামা নিবাস মহুরী বলেন, ‘আমার ভাগনে মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে আসতে চায়নি। সে বলেছিল- এসব কেন্দ্রে অনেক টর্চার করা হয়। আমরা তার কথা শুনিনি।’
নিবাস মহুরী বলেন, ‘গত ৭ আগস্ট হলি কেয়ার সেন্টারে তাকে রেখে গেছি। রশি বা গামছা তো দূরের কথা, সেই সময় কোমরের বেল্টটি পর্যন্ত সঙ্গে নিতে দেয়নি কর্তৃপক্ষ। আজ (শুক্রবার) ভোরে হলি কেয়ার থেকে মোবাইলে আমাকে জানানো হয় চন্দন আত্মহত্যা করেছে।’
চন্দনকে নির্যাতন করে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করেন মামা নিবাস মহুরী। তিনি বলেন, ‘আত্মহত্যা করলে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করবে। কিন্তু এখানে লাশ উদ্ধার পুলিশ করেনি। হলি কেয়ারের লোকজনই বাথরুম থেকে লাশ ফ্লোরে এনে রেখেছে। এটি হত্যাকাণ্ড। আমি এই হত্যার দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।’
হলি কেয়ারের চতুর্থ তলার দায়িত্বে থাকা ভলেন্টিয়ার সরোয়ার বলেন, ‘একজন টয়লেটে আত্মহত্যা করেছে বলে রাত সোয়া ৩টার দিকে আমাকে ডেকে তোলা হয়। উঠে দেখি চন্দন সরকার গলায় গামছা পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা তাকে ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে মেঝেতে এনে রাখি।’
বাথরুমের উচ্চতায় কেউ আত্মহত্যা করতে পারেন কি না- এমন প্রশ্নে সরোয়ার বলেন, ‘তা বলতে পারব না, তবে লাশ সেখান থেকে উদ্ধার করেছি।’
এদিকে ওই মাদক নিরাময় কেন্দ্রে ভর্তি অন্য রোগীরা জানান, ভলেন্টিয়ারের দায়িত্বে থাকা সরোয়ার কথায় কথায় রোগীকে মারধর করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে চন্দন সরকারকে বেদম মারধর করা হয়। শেষ রাতে জানানো হয়- তিনি মারা গেছেন।
অভিযোগের বিষয়ে সরোয়ার বলেন, ‘রাতে চন্দন সরকার পশ্চিম দিকে পা দিয়ে শুয়ে পড়লে অপর রোগী তারিকুল তা নিষেধ করেন। এতে চন্দন ক্ষিপ্ত হয়ে তারিকুলকে ঘুষি মারেন। এ সময় চন্দনকে নিবৃত্ত করতে গিয়ে কয়েকটি “থাপ্পড়” দিয়েছি। কিন্তু তাকে কোনো নির্যাতন করিনি।’
সরোয়ার আরও বলেন, ‘এখানে সকলেই মাদকাসক্ত। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে যেটুকু প্রয়োজন, তার বাইরে কিছুই করা হতো না।’
হলি কেয়ারের ব্যবস্থাপক মাইনুল হক তমাল জানান, কেন্দ্রে মোট ২৮ জন রোগী ভর্তি ছিল। এর মধ্যে একজন ‘এক্সিডেন্টে’ মারা গেছে। এখন ২৭ জন রয়েছে। পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে নিয়ে গেছে। বিস্তারিত তারাই বলতে পারবেন।
কোতোয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Own the headlines. Follow now- Zoom Bangla Google News, Twitter(X), Facebook, Telegram and Subscribe to Our Youtube Channel