পাঁচ বছরের শিশু উদ্ধারের কাহিনী

123জুমবাংলা ডেস্ক : ৫ বছরের একটা নিষ্পাপ শিশু অপূর্ব রাব্বী। যে বাচ্চাটা সারাদিন বাপ-মায়ের কোল, বাড়ি-ঘর আলোকিত করে রাখতো। সেই বাচ্চাটা হটাৎ করে প্রতিদিনের মতো মক্তবে যাওয়ার পর থেকে নিখোঁজ।

নিখোঁজের ২ ঘণ্টা পর সম্ভাব্য সব জায়গায় বাবা-মা খোঁজাখুঁজি করে বন্দর থানায় অভিযোগ করেন।

বাচ্চাটা অপহরণের শিকার হয়। সংবাদটা শোনার পর থেকে স্বাভাবিকভাবে আমি নিজে কোনো কিছু ভাবতে পারছিলাম না। অজানা আশঙ্কা, চিন্তার বলীরেখা আমার কপালে। বারবার মনের কোণে ভেসে উঠতেছিল ওয়ারীর সাত বছরের শিশু সায়মার কথা। যে বিকেলে মাকে বলে বের হয়েছিল খেলতে। ফিরল লাশ হয়ে। ছোট্ট শিশুটিকে ধর্ষণের পর নির্মমভাবে হত্যা করে ঘাতক।
৩-৪ দিন পূর্বে সুনামগঞ্জে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় শিশু তুহিনকে। প্রথম পাতায় হেডলাইন হয়ে যায় সমস্ত পত্রিকায়। শুধু মনে হচ্ছিল আমি ব্যর্থ হলে হয়ত আগামীকালকে আবার তুহিনের মত সমস্ত পত্রিকায় হেডলাইন হবে, ‌‘৫বছর বয়সী রাব্বী নির্মমভাবে…’

সারাটা দিন-রাত গতকাল ঘুম, বিশ্রাম, খাওয়াদাওয়া কর‍তে পারিনি। মাথায় বিভিন্ন ছক, প্ল্যানসমূহ অপারেশন সর্বোপরি রাব্বীকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার বাবা-মায়ের কাছে এটাই ভাসতেছিল।

বাংলাদেশ পুলিশের রত্ন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, জনাব হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয় এবং
নারায়ণগঞ্জ জেলার সুযোগ্য পুলিশ সুপার জনাব হারুন অর রশীদ, বিপিএম (বার), পিপিএম (বার) মহোদয় সবকিছু শুনে নির্দেশনা প্রদান করেন রাব্বীকে উদ্ধার করতে এবং অনুমতি ক্রমে সাথে সাথে অপারেশন শুরু ব্রাক্ষণবাড়িয়ায়।

তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করি রাব্বীর সম্ভাব্য অবস্থান। একটা সুতোর জটের মত টান দেওয়ার পর অন্য একটা খুলতে থাকে। পর্যায়ক্রমে টার্গেট আইডেন্টিফিকেশন করি। গভীর রাতে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চলে, নদী খাল বিলের পাশে প্রায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন একটা বাড়ি থেকে রাব্বীকে উদ্ধার। হ্যাঁ রাব্বীকে সুস্থভাবে উদ্ধার করা হয়। ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা পুলিশ আমাদের নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের টিমকে যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন।

রাত ২ টায় এসআই নাহিদের ফোন কল দেখে কিছুটা দ্বিধান্বিত, কিছুটা চিন্তিত আর আল্লাহর কাছে দোয়া করতে ছিলাম যেন দুঃসংবাদ না শুনি।

গতকাল (১৬/১০/২০১৯) সকালে মক্তবে যাওয়ার জন্য বের হলে রাব্বীকে ফুটবল কিনে দেওয়ার কথা বলে শাহপরান নামের এক আত্মীয় ব্রাক্ষণবাড়িয়ায় নিয়ে যায়। আত্মীয়-স্বজন, পরিচিত কেউ অপহরণ করলে সাধারণত বাচ্চা চিনে ফেলায়, মুক্তিপণ আদায় করে বাচ্চা গুলোকে খুন করে ফেলে ভবিষ্যতে ঝামেলা হবে ভেবে। রাব্বীর ক্ষেত্রেও এটা হবার পসিবিলিটি বেশি ছিল।

এসআই নাহিদ মাসুমকে দিয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়ার, বাঞ্চারামপুর থানার অভিযুক্ত আসামি শাহ পরানের (৩৫) নিজ ঘর থেকে অপূর্ব রাব্বীকে সুস্থ স্বাভাবিক উদ্ধার করতে পেরেছি এটাই সবচেয়ে আনন্দের সংবাদ। রাব্বীর বাবার চোখের পানি খুশিতে গড়িয়ে পড়তে থাকে। গভীর রাতে গ্রামের খাল বিল, ডোবা, দিয়ে ঘরের পেছনের দরজায় আসামি পালিয়ে যায়। তাকে ধরতে অভিযান অব্যাহত। শীঘ্রই তাকে ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।

আপনার আত্মীয় যখন মাদকাসক্ত তখন আর সে আপনার আত্মীয় থাকে না। তার কাছে আপনি বা আপনার সন্তান, পরিবার কেউই নিরাপদ না। নিকটস্থ থানায় যোগাযোগ করে মাদকাসক্ত আত্মীয় স্বজন যেউ হোক ধরিয়ে দেন।

১২ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার অপারেশন সফল না করতে পারলে দেশে আজ রাব্বী হত্যা ইস্যু ছড়িয়ে যেতো মিডিয়ায়! সবসময় তথ্য দিন, নিরাপদ থাকুন, ভালো থাকুন। ছোট বাচ্চাদের নজরে রাখুন।

লেখক: অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, খ-সার্কেল, নারায়ণগঞ্জ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *