জুমবাংলা ডেস্ক : চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে পাইকারি আম ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট গড়ে তুলে চাষীদের জিম্মি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেনার সময় পাইকাররা ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে এক মণ হিসেব করে। তবে তারা ক্রেতাদের কাছে সেই আম বিক্রি করা হচ্ছে ৪০ কেজিতে মণ ধরে। এতে প্রতারিত হচ্ছে খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতারা।
এবার বাম্পার ফলন হয়েছে আমের রাজধানী খ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে আমের বাম্পার ফলন হলেও কাঙ্ক্ষিত দাম পাচ্ছেন না বাগান মালিক ও চাষিরা। জেলা তথা বাংলাদেশের মধ্যে বৃহত্তর আম বাজার কানসাটে ওজন নিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বাগান মালিক ও চাষিরা। এদিকে বাগান মালিক ও চাষিদের ন্যায্য দাম পাইয়ে দিতে জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও তা সফলতার মুখ দেখেনি। এদিকে এবার বাগান পরিচর্যাসহ আনুসঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় গাছ ভরা আম থেকেও কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় দুশ্চিতায় রয়েছেন বাগান মালিক ও চাষিরা।
বর্তমানে কানসাট আম বাজারে রকমভেদে আম বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা দাম পর্যন্ত। এরমধ্যে খিরসাপাত আম বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ২০০ থেকে তিন হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। অন্যদিকে ১হাজার ৪০০ থেকে দুই হাজার ১০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে ল্যাংড়া, আম্রপালি বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে থেকে তিন হাজার ৫০০ টাকা মণ দরে, গুটি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে দেড়হাজার টাকা মণ দরে এবং লক্ষ্মণভোগ বিক্রি হচ্ছে রকম ভেদে ৮’শ থেকে এক হাজার ২’শ টাকা পর্যন্ত। বাজারে আম বিক্রি করতে আসা বাগান মালিকরা জানিয়েছেন, গত বছর আমের ফলন কম হলেও দাম পেয়েছেন দ্বিগুণ। এবার বালাইনাশকের দামসহ শ্রমিক খরচ, যাতায়াত ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় পরিচর্যায় খরচও বেড়েছে তাদের।
বাজারে আম বিক্রি করতে এসে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে ৫২ থেকে ৫৪ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে পাইকারি ব্যাবাসয়ীরা ৫৪ বা ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে আম কিনলেও পরে তা অন্যর কাছে ৪০ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করছে। এতে করে আম চাষি ও বাগান মালিকরা লোকসানে পড়লেও লাভবান হচ্ছে সিন্ডিকেট করা ব্যবসায়ীরা। তাদের মতে, চাহিদার তুলনায় বাজারে বেশি আম নামলে কম দামে বিক্রি করতে হয়। কিন্তু ৫২ বা ৫৪ কেজিতে মণ ধরে আম বিক্রি করতে বাধ্য করা অমানবকিতা নয় সেটি একপ্রকার প্রতারণা করা বলেও মনে করেন অনেকেই। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিন্ডিকেটের এক সদস্য নিজেদের অপরাধ ঢাকতে সাফাই গেয়ে বলেন, কানসাটের আম বাজারে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারসহ ব্যবসায়ীরা আসেন। তারা এই বাজার থেকে আম কিনে দেশের বিভিন্ন স্থানের বাজারে বিক্রি করেন। মূলত তারাই স্থানীয় আম চাষিদের কাছ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম নিচ্ছে। আরন নষ্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কায় তারা ওই সব পাইকারদের কাছে আম বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
এদিকে জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চাতরা এলাকার মুনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি পারিবারিকভাবে আম চাষাবাদের সাথে জড়িত। কিন্তু কানসাট আম বাজারে এসে পাইকারের কাছে ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম বিক্রি করেছেন। তিনি বলেন, কাচামাল হিসাব করে ৪৫ কেজি হিসেবে এক মণ ওজন নেওয়ার কথা কিন্তু বাধ্য হয়ে ৫২ কেজিতে মণ হিসেবে বিক্রি করতে হলো। ফলে আম উৎপাদনে যে পরিমাণ খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও উঠে আসবে না। এদিকে যথাযথ উদ্যোগের অভাবে জেলার আম চাষিদের এক প্রকার জিম্মি করেই ৫২ কেজিতে মণ ধরে আম কিনছেন অন্য জেলার ব্যবসায়ীরা বলে মনে করেন কানসাট আম আড়ৎদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুক টিপু। তিনি বলেন, ৫২ কেজিতে ওজন নেওয়া এক ধরণের নৈরাজ্য। এখানে বাইরের ব্যবসায়ীরা লাভবান হচ্ছেন। আম বাজারে একই মাপে ওজন দেওয়ার বিষয়ে প্রশাসনকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নতুবা চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বাগান মালিক ও চাষিরা।
অপরদিকে আম বাজারের ওজন নিয়ে নৈরাজ্য বন্ধ করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ভূমিকা জোরালো করা প্রয়োজন বলে মনে করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মার্কেটিং অফিসার নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, আম বাজারগুলোতে ৪৫ কেজিতে আম কেনাবেচার জন্য একাধিকবার আলোচনাসভা করা হয়েছে এবং এ নিয়ে ব্যবসায়ীদের বারবার বলার পরেও কেউ নিয়মের তোয়াক্কা করছেন না।
উল্লেখ্য, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩৭ হাজার ৮৫৫ হেক্টর জমিতে আমের চাষাবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।