জুমবাংলা ডেস্ক : দেশে তিন দশক ধরে ব্যবসা করছে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি শেভরন। বিগত সরকারের আমলে চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে নিলেও বিল বকেয়া পড়ায় নতুন বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয় তারা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের পুরো বকেয়া পরিশোধ করেছে। এরপরও কাজ শুরুর পরিকল্পনা জমা দেয়নি কোম্পানিটি। প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) সূত্র বলছে, চলমান গ্যাস–সংকট মেটাতে উৎপাদন বাড়ানোয় জোর দিয়েছে সরকার। কিন্তু এতে সহায়তা করছে না শেভরন। জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে কম্প্রেসর বসানোর কথা তাদের। এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখন কাজ শুরু করতে গড়িমসি করছে।
গত বছরের ৪ এপ্রিল পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিয়ে শেভরন বলে, বকেয়া বিল পুরোপুরি শোধ না করা পর্যন্ত জালালাবাদ কম্প্রেসর প্রকল্পের বিনিয়োগ পিছিয়ে দিচ্ছে তারা। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় (৫ আগস্ট) পর্যন্ত শেভরনের বকেয়া ছিল ২৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতি মাসের নিয়মিত বিলের পাশাপাশি গত ১৭ এপ্রিল বকেয়ার পুরোটা শোধ করে দেয়।
জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়াতে কম্প্রেসর বসানোর কথা তাদের। এ বছরের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ এখন কাজ শুরু করতে গড়িমসি করছে।
এরপর ২০ এপ্রিল শেভরনকে এক চিঠিতে পেট্রোবাংলা বলেছে, যেহেতু সব বকেয়া শোধ করা হয়েছে, শেভরন দ্রুত জালালাবাদে কাজ শুরু করবে বলে আশা করছে পেট্রোবাংলা।
৩০ বছর ব্যবসা করেও মাত্র কয়েক মাসের বিল বকেয়া থাকায় কেন জালালাবাদে বিনিয়োগ বন্ধ করা হলো? কবে তারা কাজ শুরু করবে, কবে শেষ হবে? এর জবাবে শেভরনের মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন ম্যানেজার শেখ জাহিদুর রহমান বলেন, সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রকাশ করে না শেভরন। বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে পারস্পরিক সুবিধা লাভের সুযোগ নিয়মিত মূল্যায়ন করে তারা। তবে দীর্ঘমেয়াদি নীতি অনুসারে, শেভরন বাংলাদেশে তার বাণিজ্যিক বিষয়গুলোর সুনির্দিষ্ট বিবরণ প্রকাশ করে না।
পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চিঠির আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর দেয়নি শেভরন। তবে ১৫ মে শেভরন ও পেট্রোবাংলার যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানেও বিষয়টি তোলে পেট্রোবাংলা। জবাবে শেভরনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বিনিয়োগের প্রস্তাবটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে পরিকল্পনা জানাবেন।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা জানান, এপ্রিল-জুন সময়ের বাজেট অনুমোদন করেছে শেভরন। এতে জালালাবাদে বিনিয়োগের বিষয়টি নেই। তার মানে শিগগিরই কাজ শুরুর সম্ভাবনা নেই। কাজ শুরু করার পর এটি শেষ করতে দুই বছর সময় লাগতে পারে।
বিদেশি কোম্পানি এখানে আসেই মুনাফা করতে। তারা যেহেতু চাপ দিয়ে বকেয়া আদায় করেছে, পেট্রোবাংলার এখন চুপচাপ থাকা ঠিক হবে না। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, শেভরন কাজ শুরুর বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে। তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। যাতে দ্রুততম সময়ে তারা কাজ শুরু করে, তা নিয়ে শিগগিরই আবার আলোচনা করা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ১৯৯৫ সালে প্রথম উৎপাদন অংশীদারি চুক্তি (পিএসসি) সই করে শেভরন। ১৯৯৮ সালে সিলেটের জালালাবাদ গ্যাসক্ষেত্র থেকে উৎপাদন শুরু হয়। আর ২০০৭ সালে উৎপাদনে আসে বিবিয়ানা। এর বাইরে মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্রেও উৎপাদন করছে তারা। ২০১৫ সালে এ অঞ্চল থেকে বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা করে তারা। মিয়ানমার থেকে ইতিমধ্যে চলে গেছে শেভরন। বাংলাদেশে থাকা তাদের সম্পদ বিক্রি করতে চীনের একটি কোম্পানির সঙ্গে আলোচনাও করে ২০১৭ সালে। পরে সেটি আর এগোয়নি।
পেট্রোবাংলার দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত চিঠির আনুষ্ঠানিক কোনো উত্তর দেয়নি শেভরন। তবে ১৫ মে শেভরন ও পেট্রোবাংলার যৌথ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক ছিল। সেখানেও বিষয়টি তোলে পেট্রোবাংলা। জবাবে শেভরনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তাঁরা বিনিয়োগের প্রস্তাবটি প্রধান কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন। সেখান থেকে অনুমোদন পেলে পরিকল্পনা জানাবেন।
বর্তমানে দেশে স্থলভাগের তিন ব্লকের (১২, ১৩, ১৪) তিনটি গ্যাসক্ষেত্র পরিচালনা করে শেভরন। এগুলো হচ্ছে সিলেটের জালালাবাদ, হবিগঞ্জের বিবিয়ানা ও মৌলভীবাজার গ্যাসক্ষেত্র। জালালাবাদ থেকে এখন দিনে উৎপাদিত হয় ১৩৮ মিলিয়ন ঘনফুট, বিবিয়ানা থেকে ৯৩৬ মিলিয়ন ঘনফুট এবং মৌলভীবাজার থেকে ১৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। তিনটি গ্যাসক্ষেত্রেই তাদের উৎপাদন কমছে। বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত আগেই বাড়িয়েছে। আরও বাড়িয়ে ২০৩৯ সাল করতে চায় শেভরন। এতে রাজি নয় সরকার। মৌলভীবাজারের মেয়াদ আছে ২০৩৮ পর্যন্ত। আর জালালাবাদের মেয়াদ ২০৩৪ পর্যন্ত। ২০২২ সালে পাঁচ বছর করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় তারা। মেয়াদ বাড়ানোর সময় নতুন কূপ খনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা দিয়েছিল শেভরন।
এর বাইরে গত সরকারের সময় রসিদপুর, ছাতক ও ১১ নম্বর ব্লকে (সুনামগঞ্জ-শেরপুর-ময়মনসিংহ) গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চেয়েছিল তারা। বঙ্গোপসাগরেও দরপত্র ছাড়া পাঁচটি ব্লকের গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ চেয়েছিল শেভরন। পরে সমুদ্রে দরপত্র আহ্বান করা হলেও অংশ নেয়নি তারা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর শেভরনের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফরে আসে। সরকারকে নতুন বিনিয়োগ পরিকল্পনার কথা জানায়। রসিদপুর, ছাতক ও ১১ নম্বর ব্লক নিতে আবারও আগ্রহ প্রকাশ করে তারা। তবে গত নভেম্বরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি বিশেষ ক্ষমতা আইন বাতিল করে সরকার। এর ফলে দরপত্র ছাড়া কাজ দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই আর।
শেভরনের তিনটি গ্যাসক্ষেত্রেই মজুত শেষের দিকে। এখনো দেশের গ্যাসক্ষেত্রের মধ্যে উৎপাদনে শীর্ষে আছে হবিগঞ্জের বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্র। এটি থেকে আরও দুই বছর গ্যাস উৎপাদন করা যাবে। এরপর উৎপাদন অনেক কমে আসতে পারে। বাকি দুটি গ্যাসক্ষেত্র থেকেও উৎপাদন অনেক কমে গেছে। ফলে নতুন কোনো মজুত না পেলে দুই বছর পর গ্যাস উৎপাদন লাভজনক না–ও হতে পারে শেভরনের জন্য। তাই নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে হিসাব–নিকাশে আছে মার্কিন কোম্পানিটি।
বিবিয়ানা গ্যাসক্ষেত্রে চুক্তির মেয়াদ ২০৩৪ সাল পর্যন্ত আগেই বাড়িয়েছে। আরও বাড়িয়ে ২০৩৯ সাল করতে চায় শেভরন। এতে রাজি নয় সরকার। মৌলভীবাজারের মেয়াদ আছে ২০৩৮ পর্যন্ত। আর জালালাবাদের মেয়াদ ২০৩৪ পর্যন্ত। ২০২২ সালে পাঁচ বছর করে মেয়াদ বাড়িয়ে নেয় তারা। মেয়াদ বাড়ানোর সময় নতুন কূপ খনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা দিয়েছিল শেভরন।
শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন উদ্যোগ, আসছে ৯টি সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজ
ভূতত্ত্ববিদ বদরূল ইমাম বলেন, বিদেশি কোম্পানি এখানে আসেই মুনাফা করতে। তারা যেহেতু চাপ দিয়ে বকেয়া আদায় করেছে, পেট্রোবাংলার এখন চুপচাপ থাকা ঠিক হবে না। প্রতিশ্রুতি অনুসারে শেভরনের কাজ করাটা বাঞ্ছনীয়। পেট্রোবাংলাকে শক্ত হতে হবে, কাজ শুরু করতে চাপ প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।