যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সাইদুর রহমান দেশ ছেড়েছেন প্রায় ২০ বছর আগে। সে দেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন, ছেড়েছেন বাংলাদেশি পাসপোর্টও। বছর দুয়েক আগে দেশে ফিরে সাভারের হেমায়েতপুরে নিজের পৈতৃক সম্পত্তি বিক্রি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বাংলাদেশি পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের কোনটিই না থাকায় চেষ্টা করেও সম্পত্তির খাজনাই দিতে পারেননি।

সাইদুর বিদেশে অবস্থানকালে, এমনকি দেশে ফিরেও আইনিভাবে তার সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্ব দিতে পারেননি কাউকে। তাই ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা’ সংশোধন হওয়ার বিষয়টিকে ‘খুশির খবর’ হিসেবে দেখছেন এই প্রবাসী।
গেল ফেব্রুয়ারিতে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বিধিমালায় সংশোধন আনে অন্তর্বর্তী সরকার, যার মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া সম্পন্নের জন্য বাংলাদেশি পাসপোর্টের বাধ্যবাধকতার বিষয়টি তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন পাসপোর্টের পরিবর্তে চাইলে জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদ ব্যবহার করেও কাজটি সম্পন্ন করা যাবে।
সাইদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আগেরবার দেশে যাওয়ার পরে আমি বেশ কয়েকবার ভূমি অফিসে গিয়েছি, আমি অনেক চেষ্টা করেও খাজনাটাই দিতে পারিনি। এবার পাওয়ার অব অ্যাটর্নির রুলসে পরিবর্তন করার কারণে আমাদের ঝামেলা কমল। আশা করছি নতুন নিয়ম অনুযায়ী আমার কাজটা সহজেই সম্পন্ন করতে পারব।”
প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘সুবিধার জন্যই’ যে এই বিধিমালায় পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেটি বলেছিলেন খোদ সরকার প্রধানই। গেল ৬ জুন ঈদুল আজহায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বিধিমালা সংশোধনের কথা বলেন।
তিনি বলেছিলেন, “প্রবাসী ভাই-বোনদের অনেকদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে পাওয়ার অব অ্যার্টনি বিধিমালা সংশোধন করা হয়েছে।”
গেজেট প্রকাশের আগেরদিন গত ১১ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল প্রথম ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বিধিমালা সংশোধন করে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে ‘জটিলতা অবসানের’ বিষয়টি সামনে আনেন।
তিনি বলেছিলেন, “২০১৫ সালের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা নিয়ে প্রবাসীরা প্রচুর অভিযোগ করতেন। এই বিধিমালা অনুযায়ী কেউ যদি পাওয়ার দিতে চাইত, তবে তার পাসপোর্ট থাকা লাগত।
“বাংলাদেশের দূতাবাসে গিয়ে তাকে পাসপোর্ট জমা দিতে হত। প্রবাসীদের সন্তানরা অনেকে বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেন না। তাদের পক্ষ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি হতে গেলে অনেক জটিলতা হত।”
সংশোধন অনুযায়ী প্রবাসী বাংলাদেশিদের যদি বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকে তাহলেও তাদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন বলে সেদিন বলেছিলেন তিনি।
তার ভাষ্য, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির পাসপোর্টে ‘no visa required’ থাকলে, তার জন্ম সনদ থাকলে কিংবা জাতীয় পরিচয়পত্র থাকলে তিনি বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।
এর ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অনেকের ‘ভোগান্তি লাঘবে’ বিরাট ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এ সংশোধনীর বিষয়ে আইনজীবী ইসফাকুর রহমান গালিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গেজেটে স্পষ্টভাবে কোনো কারণ বলা না হলেও, এটি সামগ্রিকভাবে আইনি প্রক্রিয়ার আধুনিকীকরণ এবং জালিয়াতি রোধের জন্য যাচাইয়ের বৈচিত্র্য বাড়ানোর উদ্দেশ্যে করা বলে মনে করছি।
“এই পরিবর্তন পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সম্পাদন প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক করে তুলেছে। পূর্বের বিধিমালার দলিলে পাওয়ার দাতা ও গ্রহীতার পাসপোর্টের বিবরণ বাধ্যতামূলক ছিল, যা অনেকের জন্য অসম্ভব, বিলম্ব ও খরচ বৃদ্ধি, প্রবাসীদের জটিলতা, সাধারণ নাগরিকদের জন্য অসুবিধাজনক এবং জালিয়াতির ঝুঁকি বাড়াত।”
আইনজীবীদের কেউ কেউ মনে করছেন এই সংশোধনীর’ মাধ্যমে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির প্রক্রিয়াকে আরও ‘সহজ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ করা হয়েছে। প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিদেরই সবচেয়ে ‘সুবিধা হয়েছে’।
তবে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ‘মূল সমস্যা’ যেহেতু সম্পত্তি লেনদেনে, তাই এটিকে সম্পূর্ণ যৌক্তিক করতে সংশ্লিষ্ট আইনের ‘একীভূত সংস্কার’ প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি কী
‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ বা আমমোক্তারনামা একটি পূর্ণাঙ্গ আইনি দলিল, যার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি অন্য একজনকে তার আইনি প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন।
এই প্রতিনিধি মালিকের পক্ষে সম্পত্তি দেখাশোনা, ক্রয়-বিক্রয়, নিবন্ধন বা অন্য যে-কোনো আইনগত কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারেন।
বাংলাদেশের ‘স্ট্যাম্প অ্যাক্ট, ১৮৯৯’ এর ২(২১) উপধারায় বলা হয়েছে, যে দলিলের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তিকে অপর কোনো ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে কোনো কাজ সম্পাদন, ‘ডিক্রি বা রেজিস্ট্রি’ সম্পাদন, তত্ত্বাবধান কিংবা অন্যান্য আইনগত কার্যক্রম করার ক্ষমতা দেওয়া হয়, সেটিই পাওয়ার অব অ্যাটর্নি।
অর্থাৎ, লিখিতভাবে কারও পক্ষে কাজ করার ক্ষমতা অন্য কাউকে প্রদান করাই হল পাওয়ার অব অ্যাটর্নি। এটি মৌখিকভাবে নয়, বরং অবশ্যই লিখিত আকারে হতে হয়, কারণ এটি একটি আইনগত দলিল।
এই দলিলের মাধ্যমে যাকে মোক্তার বা অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ করা হয়, তিনি মালিকের পক্ষে সম্পত্তি বিক্রি, হস্তান্তর, বন্ধক রাখা, খাজনা আদায় কিংবা সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের মতো কাজ করতে পারেন। তবে এই ক্ষমতা অর্পণের ক্ষেত্রে সীমবদ্ধতাও রয়েছে, অর্থাৎ কোন কোন ক্ষেত্রে মোক্তার পাওয়া ব্যক্তি তার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবেন না।
সাধারণত মোক্তারনামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দুই ধরনের হয়ে থাকে। সাধারণ মোক্তারনামা (আমমোক্তারনামা) এবং বিশেষ মোক্তারনামা (খাসমোক্তারনামা)।
সাধারণ মোক্তারনামায় মোক্তার দাতার পক্ষে বিস্তৃত বা সর্বজনীন ক্ষমতা প্রদান করা হয়। অর্থাৎ, প্রতিনিধি মালিকের পক্ষে নানা ধরনের কাজ করতে পারেন। অন্যদিকে, বিশেষ মোক্তারনামা বা খাসমোক্তারনামা নির্দিষ্ট কোনো কাজের জন্য দেওয়া হয়। যেমন একটি নির্দিষ্ট জমির বিক্রয় বা নিবন্ধন সম্পাদনের জন্য।
যে-সব আমমোক্তারনামা জমিজমা বা স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তরের সঙ্গে যুক্ত নয়, সেগুলো কেবল নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে নোটারি করে নেওয়াই যথেষ্ট। তবে, যদি মোক্তারনামা জমি বা ফ্ল্যাটের মতো স্থাবর সম্পত্তিসংক্রান্ত হয়, তাহলে অবশ্যই সেটি নিবন্ধন করতে হয়।
বিদেশে বসবাসরত বা অবস্থানরত কেউ যদি কাউকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিতে চান, তবে তাকে সংশ্লিষ্ট দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে দলিলটি সম্পাদন ও প্রত্যয়ন করতে হয়। এরপর সেই দলিল বাংলাদেশে পাঠিয়ে কার্যকর করা যায়।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি তাই শুধু একটি কাগজ নয়, বরং এমন এক দলিল যা অন্য কাউকে আইনি ক্ষমতা প্রদান করে মালিকের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দেয়। এই দলিলের মাধ্যমে মালিক অনুপস্থিত থাকলেও তার সম্পত্তি ও স্বার্থের সুরক্ষা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়।
১৩০ বছর পর প্রথম সংস্কার হয় ২০১২ সালে
অবিভক্ত ভারতে ১৮৮২ সালে ৬টি ধারার সমন্বয়ে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অ্যাক্ট ১৮৮২’ প্রণীত হয়। দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে বাংলাদেশে ওই আইনের বহুমাত্রিক ব্যবহার দেখা দেওয়ায় আইনটি ‘সময়ের দাবি পূরণে যথার্থ না’ হওয়ায় ২০১২ সালে সংস্কারের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিল ২০১২’ সংসদে উত্থাপিত হয়। এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছিলেন, “বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠী স্থায়ীভাবে বিদেশে বসবাস করছে। তারা তাদের ভূমি ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা, বিক্রয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করে থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রকারের সেবা গ্রহণের বা ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত কার্যাদি সম্পন্ন করতে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ব্যবহার বেড়েছে।”
প্রস্তাবিত বিলে ভূমি ব্যবস্থাপনা, ভূমির উন্নয়ন, হস্তান্তর, বিক্রি, ঋণগ্রহণের বিপরীতে বন্ধক প্রদান ইত্যাদি অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদে ‘অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি’ এবং অন্যান্য সাধারণ কাজে ‘সাধারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির’ মাধ্যমে ক্ষমতা অর্পণের বিধান রয়েছে। নির্দিষ্ট মেয়াদে অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নির ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করা হয়।
ভূমি ও ফ্ল্যাটের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে নানারকম জাল জালিয়াতিমূলক কর্মকাণ্ড বিবেচনায় নতুন আইনটি কার্যকর হলে জাল জালিয়াতি অনেকাংশে ‘কমে আসবে’ বলে প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করা হয়েছিল তখন।
পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে ‘পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অ্যাক্ট ১৮৮২’ রহিত করে একটি নতুন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইনটি সংসদে পাস হয়।
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি আইন ২০১২-এর অধীনে ২০১৫ সালে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়, যা ওই বছরের ২৩ জুলাই গেজেটভুক্ত হয়।
এর ১০ বছর পর বিধিমালার দুটি ধারা সংশোধন করে চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি গেজেট প্রকাশ করে অন্তর্বর্তী সরকার।
বিধিমালায় কী পরিবর্তন এল
এই সংশোধনের প্রেক্ষাপট হিসেবে প্রবাসীদের হয়রানি কমানোর কথা বলা হয়েছে, যাতে তারা বিদেশি নাগরিকত্ব বা অন্য কোনো পাসপোর্ট থাকা সত্ত্বেও জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মসনদের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি সম্পাদন করতে পারবেন।
সংশোধনীতে বিধি ২-এর দফা ৩-এ দুটি নতুন দফা (৩ক) ও (৩খ) যুক্ত করে পর্যায়ক্রমে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র সন্নিবেশিত করা হয়েছে। আর দফা ৬ এর পর নতুন দফা (৬ক) এ পাসপোর্ট যুক্ত করা হয়েছে।
বিধি ১০-এ বাংলাদেশের বাইরে থেকে সম্পাদিত পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কথা রয়েছে, যেখানে উপবিধি ৪-এ উল্লিখিত ‘পাওয়ার দাতার পাসপোর্টের বিবরণসহ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘পাওয়ার দাতার পাসপোর্টের বা No Visa Required স্টিকার সংবলিত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির বিদেশি পাসপোর্ট বা জাতীয় পরিচয়পত্রের বা জন্মসনদের বিবরণসহ’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
উপবিধি ৪-এর পর নতুন উপবিধি (৪ক) যুক্ত করা হয়েছে, সেখানে পাওয়ার দাতা, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রমাণিকরণের ছয় মাসের মধ্যে সে প্রমাণিকৃত পাওয়ার অব অ্যাটর্নি ও তার প্রতিলিপি বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়টি যুক্ত করা হয়েছে।
এছাড়া তফসিল ক-এর ফরম-৩ এর দফা ৪-এর উল্লিখিত ‘পাওয়ার দাতার পাসপোর্টের বিবরণসহ’ শব্দের পরিবর্তে ‘বিদেশি পাসপোর্টের বা জাতীয় পরিচয়পত্রের বা জন্মসনদের বিবরণ’ শব্দগুলো যুক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আইনজীবী ইসফাকুর রহমান গালিব বলেন, “পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বিধিমালা পরিবর্তন করে পাসপোর্টের বিবরণের পরিবর্তে জন্ম সনদের বিবরণ বা জাতীয় পরিচয়পত্রের বিবরণ ব্যবহারের সুযোগ রাখা হয়েছে। সংশোধনটি প্রধানত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ‘No Visa Required (NVR)’ ভ্রমণ-সম্পর্কিত ক্ষমতা প্রদান এবং পরিচয় যাচাইয়ের প্রক্রিয়া সহজ করার প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে।
“পাসপোর্ট অ্যাক্ট, ১৯২০-এর ধারা ২-এর সাথে সমন্বয় করে, পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দলিলে পাওয়ার দাতা এবং পাওয়ার গ্রহীতার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য পাসপোর্টকে একমাত্র বাধ্যতামূলক না করে জাতীয় পরিচয়পত্রকে বিকল্প হিসেবে যুক্ত করা হয়েছে। এটি বিশেষ করে প্রবাসীদের জন্য, যারা বিদেশে থাকায় পাসপোর্ট সহজলভ্য নয় বা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে থাকে।”
আগের বিধিতে কতটা ভোগান্তি ছিল?
পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে কাজ করা আইনজীবী কুতুব উদ্দীন এটি নিয়ে প্রায়ই প্রবাসীদের ভোগান্তিতে পড়ার বিষয়টি প্রত্যক্ষ করেছেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা এমন অনেককে দেখেছি বিদেশে থাকেন, তারা জমি বিক্রি করতে পারছেন না। কারও নামে হস্তান্তর করবেন সেটাও পারছেন না। কখনো দেখা যায়, বাংলাদেশে কোনো কাজে বা ছুটিতে এসেছেন, যাওয়ার আগে তার জমিজমা কাউকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব দিয়ে যাবেন, কিন্তু বাংলাদেশি পাসপোর্ট না থাকায় বা জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় সেটি দিতে পারতেন না।
“কারণ দেশে এসেও তাকে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে হত। বিদেশে বসেও সেসব দেখানোর বাধ্যবাধকতা ছিল, এমনকি পাসপোর্টের তথ্যাদিও ‘পাওয়া অব অ্যাটর্নির’ দলিলে উল্লেখ করতে হত।”
তবে যাদের বাংলাদেশি পাসপোর্ট আছে, তাদের তেমন সমস্যায় পড়তে হত না, বললেন এই আইনজীবী।গত বছরের এপ্রিলে ফারজানা নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীর পাওয়ার অব অ্যাটর্নির কাজ সম্পন্ন করতে সহায়তা করেছিলেন কুতুব উদ্দীন।
ফারজানা ঢাকার রায়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা ছিলেন, তার মালিকানাধীন বেরাইদ এলাকার ২৯ শতাংশ জমি বন্ধু মামুনুর রশীদকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এটি সম্পন্নের প্রক্রিয়া তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, “এখান থেকে সবকিছু প্রস্তুত করে কুরিয়ার করে পাওয়ার দাতার কাছে পাঠানো হয়েছিল। তিনি সেখানকার কনস্যুলার অফিসে নির্ধারিত কর্মকর্তার সামনে সব কাগজপত্র প্রদর্শন করে দলিলে স্বাক্ষর করেছেন। তারপর সেটি আবার কুরিয়ারে দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন।
“এরপর সেই দলিলটি দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত শাখা থেকে অনুমোদন করিয়ে নেওয়া হয়। সবশেষে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নির্ধারিত শাখা থেকে সেটির নিবন্ধন সম্পন্ন করা হয়।”
এরপর সে দলিল দিয়েই মামুনুর রশীদ ওই জমি দেখাশোনা, ভোগদখল বা বিক্রিও করতে পারবেন।২০২৩ সালের মার্চ থেকে রাজধানীতে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, প্রাতিষ্ঠানিক প্লট, ফ্ল্যাটের বরাদ্দ ও ইজারা গ্রহণে আমমোক্তার নিয়োগ বা বাতিলের ক্ষেত্রে রাজউক থেকে আগে অনুমোদন নিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করার বিধান করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক।
আগে প্লট বা ফ্ল্যাটে আমমোক্তার নিয়োগ বা বাতিলের বিষয়টি রাজউককে অবহিত করার বিধান না থাকায় অনেকক্ষেত্রে ‘নানা জটিলতা’ তৈরি হয়। সেটি নিরসনে এবং ‘জালিয়াতি কমাতে’ বিধানটি করার কথা জানানো হয়েছিল।
ফলে তখন থেকে রাজউকের অনুমতি ছাড়া কেউ চাইলেই আমমোক্তারনামা করে জমি বা ফ্ল্যাট অন্য কারও কাছে বিক্রি করতে পারছেন না। আবার কাউকে আমমোক্তার করা হলে সেটি বাতিল করার জন্যও রাজউকের অনুমতি লাগবে।
রাজধানীতে প্লট ও ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে আমমোক্তারনামা প্রদান কিংবা বাতিলের ক্ষেত্রে রাজউকের অনুমোদনের বিষয়টি বহাল থাকার কথা বলেছেন সংস্থার উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-১) মো. মাহবুবুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভূমিসংক্রান্ত জালিয়াতি রোধে এটি করা হয়েছে এবং এটি কার্যকর রয়েছে।”
এটি কীভাবে করা হয়, তা তুলে ধরে তিনি বলেন, “প্রথমে আমাদের কাছে আবেদন করতে হয়, তারপর কোনো একটি সুনির্দিষ্ট তারিখে শুনানির জন্য ডাকা হয়। সেখানে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার নিয়ম রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অনুমোদন করা হয়।”
তবে প্রবাসীদের ক্ষেত্রে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নিয়ে কিছু জটিলতা দেখা দেওয়ায় পরে বিষয়টি শিথিল করা হয়। সেক্ষেত্রে কোনো প্রবাসী সশরীরে উপস্থিত হতে না পারলে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দূতাবাসের মাধ্যমে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন রাজউকের এই কর্মকর্তা।
ফলে এখন প্রবাসীরা উপস্থিত না থেকেও পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রদান বা গ্রহণের কাজটি সম্পন্ন করতে পারবেন।
আইনের অসামঞ্জস্যতা ‘সমাধান হয়নি’
আইনজীবী ইসফাকুর রহমান গালিবের মতে, সংশোধনটি এমন কোনো বড় অসামঞ্জস্যতা ‘সমাধানের জন্য নয়’। গেজেটে এই পরিবর্তনের সুনির্দিষ্ট কারণ বলা হয়নি, কিন্তু এটি প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য ‘ভ্রমণ-সম্পর্কিত’ পাওয়ার অব অ্যাটর্নি প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্দেশ্যে করা বলে তার মনে হচ্ছে।
তিনি বলেন, “এই বিধিমালায় কয়েকটি অসামঞ্জস্যতা রয়েছে, যা জালিয়াতি এবং অপব্যবহার বাড়ায়। এগুলো ২০২৫-এর সংশোধনে স্পর্শ করা হয়নি। কিন্তু আইনের ধারা ৪-এ অপরিবর্তনীয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নির সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট নয়, যা রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর সাথে সাংঘর্ষিক হয়। এতে অপ্রয়োজনীয় বিলম্ব হয়।”
হঠাৎ করেই দেশের বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন সাধারণ ভোক্তারা
সংশোধনটি ‘আংশিকভাবে যৌক্তিক’ দাবি করে এই আইনজীবী বলেন, “এ পরিবর্তনে প্রবাসীদের সুবিধা হল, এতে যুক্ত বিধি জালিয়াতি রোধে পরোক্ষ সাহায্য করে। অন্যান্য অসামঞ্জস্যতা উপেক্ষা করে শুধু একটি ‘অ্যাসপেক্ট’ পরিবর্তন অপর্যাপ্ত, কারণ পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মূল সমস্যা সম্পত্তি লেনদেনে। এটি ‘প্যাচওয়ার্ক অ্যাপ্রোচ’ বলে মনে করি, যা দীর্ঘমেয়াদে অকার্যকর। সম্পূর্ণ যৌক্তিক হতে হলে একীভূত সংস্কার দরকার।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



