আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের পর থেকে পাকিস্তানজুড়ে যে বিক্ষোভ সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে তাতে ৮ জন নিহত হয়েছে এবং প্রায় এক হাজার বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
লাহোরের মডেল টাউনে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের বাড়ি আক্রমণ করে বিক্ষোভকারীরা। আজ ভোররাতে এই আক্রমণ হয়। তখন বাড়িতে নিরাপত্তারক্ষী ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। প্রায় পাঁচশ বিক্ষোভকারী সেখানে গিয়ে বাড়ির সামনে পার্ক করে রাখা গাড়িগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
পুলিশের এক অফিসার বলেছেন, বাড়ির ভিতরেও পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়েছিল। পরে বিশাল পুলিশবাহিনী সেখানে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা চলে যায়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বলেছেন, ইমরানের সমর্থকেরা যেভাবে সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট করছে, আগুন ধরিয়ে দিয়েছে, যেভাবে হিংসাশ্রয়ী বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, তাতে তিনি সেনা নামাতে বাধ্য হলেন। আপাতত ইসলামাবাদ শহর এবং পাঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়াতে সেনা নামানো হয়েছে।
সেনার তরফ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, ইমরানের সমর্থকেরা সেনার সদরদপ্তর, বিভিন্ন শিবির আক্রমণ করেছে। পরিকল্পনামাফিক আক্রমণ হচ্ছে। সেনার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হচ্ছে। তারা সংযত থেকেছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে সেনাকে বদনাম করা হচ্ছে। কারা এর পিছনে আছে তা সেনা জানে। এবার কড়াহাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা হবে।
পাকিস্তানে সাবেক সরকার প্রধান বা রাজনীতিকদের গ্রেফতার করা কোন নতুন ঘটনা নয়। তবে সেখানে সেনাবাহিনীকে এভাবে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করার ঘটনা খুবই বিরল।
পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এ পর্যন্ত অনেক সেনা অভ্যুত্থান করেছে এবং তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে তারাই দেশটি শাসন করেছে।
ইমরান খান যখন ২০১৮ সালে ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসেন তখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার মধুর সম্পর্ক ছিল। অনেক বিশ্লেষকের ধারণা, সেনাবাহিনী সাহায্য নিয়েই তিনি সেবার বিজয়ী হন। কিন্তু চরম অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে একটা পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি হয়।
গত কয়েক মাসের ঘটনায় বোঝা যায়, তাদের সম্পর্ক এখন কতটা বৈরি হয়ে উঠেছে। ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর ইমরান খান হয়ে ওঠেন সেনাবাহিনীর সবচেয়ে কঠোর সমালোচক।
ইমরানের দল দাবি করেছে, ফয়সলাবাদে পুলিশ তাদের কর্মীদের উপর গুলি চালিয়েছে। এর ফলে একজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
দলের নেতা জুলফি বুখারি বলেছেন, ‘আমরা আশা করছি, ইমরান খানের উপর কোনো অত্যাচার হচ্ছে না। তার গায়ে হাত তোলা হচ্ছে না।’
আরেক নেতা ফারুখ হাবিব বলেছেন, ‘ইমরানকে যতক্ষণ মুক্তি দেয়া না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই বিক্ষোভ চলবে।’
পেশোয়ারে পিটিআই কর্মীরা নির্বাচন কমিশনের ভবনে ঢুকে ব্য়াপক ভাঙচুর করেছে। কমিশনের নথিপত্র তারা জ্বালিয়ে দিয়েছে। কমিশনের অফিসের সামনে রাখা বাইকে আগুন ধরানো হয়েছে। একটি অ্য়াম্বুলেন্স বুথেও তারা আগুন লাগায় বলে অভিযোগ।
জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল গুতেরেস বলেছেন, তিনি পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন করছেন, তারা যাতে শান্তিপূর্ণ পথে বিক্ষোভ দেখায়। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, ইমরানের ক্ষেত্রেও যেন আইনি পথেই চলা হয়। (বিবিসি, ডয়চে ভেলে)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।