জুমবাংলা ডেস্ক : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলের উদ্যোগ নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পুরোনো সৃজনশীল পদ্ধতির শিক্ষাক্রমে রচিত বইগুলো আগামী বছর শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে এসব বই সংশোধনের কাজ শুরু হয়েছে। কালবেলার করা প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-
একটি টিম এই কাজটি করছে। তারা জানিয়েছেন, যেসব বইয়ে বিশেষ করে ঐতিহাসিক ঘটনার ক্ষেত্রে অতিরঞ্জিত কোনো তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে, কিংবা অযাচিতভাবে কাউকে হিরো বানানোর চেষ্টা হয়েছে, পাঠ্যবই থেকে সেই অংশটুকু বাদ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেসব বাণী পাঠ্যবইয়ে রয়েছে, সেগুলো মুছে দেওয়া হবে। তাকে ঘিরে কোনো অতিরঞ্জিত তথ্য বইয়ে ব্যবহার করা হলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে।
জানা গেছে, আগামী বছর পুরোনো শিক্ষাক্রমে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান শুরু হবে। সেজন্য এরই মধ্যে নতুন শিক্ষাক্রমের ওপর লিখিত বিভিন্ন শ্রেণির বইয়ের দরপত্র বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব শ্রেণিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০১২-এর আলোকে প্রণীত সংশোধিত ও পরিমার্জিত বই যাবে।
যেহেতু বিগত সরকারের সময়ে এই শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে, সে কারণে পাঠ্যবইয়ে বিগত সরকারপ্রধানের বাণী এবং বিভিন্ন অতিরঞ্জিত তথ্য রয়েছে। সেজন্য প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে সংশোধনের কাজ চলছে।
এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, পাঠ্যবই সংশোধনের জন্য শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই টিমে প্রতিটি বিষয়ের তিন থেকে পাঁচজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষক। সবমিলিয়ে পঞ্চাশের বেশি ব্যক্তি পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি মাসের মধ্যেই পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ শেষ হবে।
গতকাল এনসিটিবিতে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের ষষ্ঠ তলায় অডিটোরিয়াম ও গ্রন্থাগারে পাঠ্যবই পরিমার্জনের কাজ চলছে। সেখানে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিশেষজ্ঞরা। কথা হয় পাঠ্যবই পরিমার্জন টিমের সদস্য শিক্ষা গবেষক রাখাল রাহার সঙ্গে।
তিনি বলেন, পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ চলছে। তবে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিছু কনটেন্টে হয়তো কিছু লেখা বাদ যেতে পারে। তবে কোনো কনটেন্ট পুরোপুরি বাদ যাবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নন বলে জানান তিনি।
শেখ মুজিবুর রহমানের ইতিহাস পাঠ্যবই থেকে বাদ দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই জানিয়ে রাখাল রাহা বলেন, তার (শেখ মুজিবুর রহমান) ইতিহাস বা তাকে ঘিরে কোনো কনটেন্ট বাদ দেওয়া হবে—এমন কোনো নির্দেশনা আমরা পাইনি। বরং সেগুলোকে রাখার নির্দেশনা রয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। তবে, ইতিহাসের ক্ষেত্রে যদি অতিরঞ্জিত কিছু লেখা হয়, কাউকে হিরো বানানোর চেষ্টা করা হয়, সেটি বাদ দেওয়া হবে।
শেখ হাসিনাকে হিরো বানানোর চেষ্টা হয়েছে—এমন কোনো তথ্য থাকলে তা বাদ দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন, ছাত্রসমাজ তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। সে কারণে তাকে নিয়ে কোনো অতিরঞ্জিত তথ্য থাকলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে। এ ছাড়া কাভারে তার বাণী রয়েছে, সেগুলো বাদ যাবে।
টিমের সদস্য ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন বলেন, পাঠ্যবইয়ের কাভারে শেখ হাসিনার কোনো বাণী থাকবে না। এ ছাড়া অতিরঞ্জিত কোনো ইতিহাস থাকলে সেটিও বাদ দেওয়া হবে। এসব পরিবর্তন করে বই পরিমার্জনের কাজ চলছে।
জানতে চাইলে এনসিটিবি সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তর থেকে একটি টিম গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারা পাঠ্যবই সংশোধনের কাজ করছে। আশা করি, ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এই কাজ শেষ হবে।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন, বিগত সরকারের সময়ে পাঠ্যবইয়ে যেসব বিষয়ে অতিরঞ্জিত কিছু লেখা হয়েছে, সেগুলো বাদ দেওয়া হবে। সেজন্য পরিমার্জনের কাজ চলছে। আশা করছি খুব দ্রুত এ কাজ শেষ হবে এবং বই ছাপানোর কাজ শুরু করা যাবে।
স্বল্প সময়ের মধ্যে বই ছাপিয়ে এক জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া সম্ভব হবে কি না—জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, করোনাকালীন দুই মাসের মধ্যে বই ছাপিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেজন্য আশা করছি এবারও পারব। তবে এ ক্ষেত্রে সব স্টেকহোল্ডারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।