জুমবাংলা ডেস্ক: দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলা সাতক্ষীরা চিংড়ি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত। কিন্তু বর্তমানে এই জেলার কৃষকরা বিভিন্ন ফল উৎপাদনের দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছেন। এর মধ্যে স্বল্প পরিশ্রমে ও অধিক লাভ হওয়ায় পতিত জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। এতে আর্থিকভাবে লাভোবান হওয়ার পাশাপাশি চাষিদের ঘরে সুদিন ফিরেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাতক্ষীরায় আম, ড্রাগন ও মাল্টা চাষাবাদ হচ্ছে বিঘার পর বিঘা জমিতে। এখন জেলার ১৪২ হেক্টর জলাবদ্ধ পতিত জমিতে পানিফল চাষ শুরু করেছেন প্রান্তিক চাষির। উৎপাদিত পানি ফল জেলার চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে।
চাষিরা জানান, পানিফল সাতক্ষীরার মানুষের কাছে অতি পরিচিত। এটি স্থানীয়দের কাছে পানিসিংড়া নামে পরিচিত। জলাবদ্ধ জমিতে এই ফলের চাষ হয়। শুধু গ্রামে নয়, শহরের বাজারেও পানি ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ভাদ্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত জলাবদ্ধ জমিতে পানি ফলের চারা রোপণ শুরু করেন চাষিরা। আর অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত চলে ফল বিক্রি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন ভোরে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা যাত্রীবাহী বাস, ভ্যানগাড়ি, ইজিবাইকের মাধ্যমে বস্তায় ভরে এই পানিফল বিক্রির জন্য নিচ্ছেন সাতক্ষীরা সদর, যশোর, খুলনাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। এছাড়াও কলারোয়া পৌর সদরের মুরারীকটি থেকে যুগিবাড়ী পর্যন্ত সাতক্ষীরা-ঢাকা মাহাসড়কের দুইপাশেও পানিফল বিক্রি করেন চাষিরা।
কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি গ্রামের চাষি রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এ বছর আমি ৬ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছি। খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে পানিফল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার। এখনও জমিতে ফল রয়েছে, আশা করছি এবার ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অন্য ফসলের থেকে পানিফল চাষে দ্বিগুণ লাভ হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এই ফল চাষে আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।’
সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার পানিফল চাষি আব্দুল ওহাব ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, তারা পতিত ৩ বিঘা জমিতে পানিফল চাষ করেছেন। বর্তমানে ফল তুলে বিক্রি করছেন। গত মৌসুমে খরচ বাদে পানিফল চাষ করে প্রায় ৫০ হাজার টাকা লাভ হয়েছে। এবার ফলন ও বাজারমূল্য দুটোয় ভালো। তাই গত বছরের তুলনায় এবছর বেশি লাভ হবে বলে আশা করছেন তারা।
কলারোয়া উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের চাষি ইয়াকুব্বর আলী বলেন, ‘এ বছর নিজের ৭ বিঘা জমিতে পানিফলের চাষ করেছি। বৃষ্টিপাত বেশি না হওয়ায় স্যালো মেশিনের সেচ দিয়ে এ বছর ফলের আবাদ করেছি। ফল ভালো হয়েছে। তবে বৃষ্টির পানি পেলে ফলন বাড়তো, লাভ আরও বেশি হতো।’
কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি গ্রামের চাষি আবু হাসান বলেন, ‘কলারোয়া পৌর সদরের মুরারীকটি থেকে যুগিবাড়ী পর্যন্ত সাতক্ষীরা-ঢাকা মহাসড়কের দুইপাশের পতিত ও জলাবদ্ধ জমির পানির উপর যতদূর চোখ যায় শুধুই পানি সিঙ্গারার (পানি ফল) গাছ।’
পানিফল চাষিদের দাবি সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক প্রান্তিক কৃষকরা পানিফল চাষের সুযোগ পাবেন। ফলে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবেন ঠিক তেমনই গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।
কলারোয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হোসেন জানান, ‘পানিফল একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময় ফসল। কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোনো পতিত পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে পানিফল চাষ করা সম্ভব। তুলনামূলক এর উৎপাদন খরচ কম। পানিফলের পুষ্টিমান অনেক বেশি, খেতেও সুস্বাদু।’
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মোহাম্মদ জামাল উদ্দীন বলেন, ‘কর্মসংস্থানের পাশাপাশি সল্প সময়ে অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা পানিফল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া, সদর ও দেবহাটা উপজেলায় পানিফলের চাষ হচ্ছে। গত বছরে ১১৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিলো। চলতি বছর ১৪২ হেক্টর জমিতে ফলটি চাষ হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কেমিক্যালমুক্ত সতেজ এই পানিফল দেশের বাজারে বিস্তার লাভ করবে এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয় কৃষকদের।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।