জুমবাংলা ডেস্ক : টানা বৃষ্টি ও ভারতের পাহাড়ি ঢলে আজও পানিবন্দী ফেনী। এতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
আজ শুক্রবার জেলার ফুলগাজী ও পরশুরামে বন্যার পানি কমলেও জেলার সোনাগাজী এলাকার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার মুখোমুখি হয়েছে ফেনীর বাসিন্দারা। বন্যা আরও কয়েক দিন দীর্ঘায়িত হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
ফেনী শহরের বিভিন্ন বয়সী মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫০-৬০ বছরেও জেলায় এত ভয়াবহ বন্যা হয়নি। ১৯৮৮ সালের বন্যায়ও পুরো জেলা এমন প্লাবিত হয়নি।
গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে ফেনীর বাসিন্দারা, একই সঙ্গে মোবাইল নেটওয়ার্কও নেই। এতে পরিবার-পরিজন কোথায় আছেন, কেমন আছেন, সেই খোঁজখবরটুকুও নিতে পারছেন না অনেকে।
পরশুরাম, ফুলগাজী, ছাগলনাইয়ায় কোনো যান চলাচল করতে পারছে না। বিভিন্ন বাসাবাড়ির ছাদে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের নিরাপদে সরিয়ে নিচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী। সেনা, নৌ, বিজিবি এবং বিভিন্ন জেলা থেকে আগত স্বেচ্ছাসেবকেরা ইঞ্জিনচালিত নৌকায় অনেককে উদ্ধার করছেন।
পানির কারণে বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আবার পানির কারণে চট্টগ্রাম অভিমুখের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ফেনীর লালপোল পর্যন্ত দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম অভিমুখী সবজির গাড়ি, পণ্যবাহী ও মালবাহী গাড়ি ছাড়াও যাত্রীবাহী বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার ভোগান্তিতে পড়েছে। এদিকে গত বৃহস্পতিবার থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা অভিমুখের বাসগুলো ফেনীর লেমুয়া এলাকা পার হতে পারেনি।
টানা বর্ষণ ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মঙ্গলবার থেকে ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম এলাকা প্লাবিত হয়। এতে বেশির ভাগ এলাকার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। গত বুধবার থেকে ফেনী শহরের নিম্নাঞ্চলের বাড়িঘরের নিচতলায় পানি ঢুকে যায়। বৃহস্পতিবার শহরের বেশির ভাগ বাড়ির নিচতলা ডুবে যায়। ফেনীর সোনাগাজী, দাগনভূঞা এলাকার নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকালে শহরে ঢুকতে চাইলেও পারা যায়নি। শহরের প্রধান সড়ক শহীদুল্লা কায়সার সড়ক, ট্যাংক রোডসহ প্রধান প্রধান সড়কের কোথাও কোমরপানি, কোথাও গলা সমান পানি। শুক্রবার সকালে অনেককে পরিবার নিয়ে ফেনী শহর ছাড়তে দেখা গেছে।
এদিকে ফেনীর লালপোল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পানি ওঠায় গতকাল থেকে চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ছাড়া সারা দেশের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে ফেনীর লেমুয়া পর্যন্ত এ সড়কে চট্টগ্রাম অভিমুখে গাড়ি চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রামমুখী অনেক যাত্রী বিশেষ করে নারী, শিশুরা অসহনীয় কষ্টে আছে।
গতকাল থেকে অনেকে ফেনীর মহিপাল এলাকার বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে উঠেছে। আবার কেউ কেউ রুম না পেয়ে হোটেলের বারান্দা, সিঁড়িতেও আশ্রয় নিয়েছে। তবে গতকাল থেকে এসব হোটেলের পানির সংকট শুরু হয়েছে। এদিকে ফেনীতে সুপেয় পানির সংকটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। শুক্রবার মহিপালের বেশির ভাগ দোকানে পানির সংকট দেখা গেছে। অন্যদিকে পানির কারণে শহরের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে।
বেলা ২টার পরে লালপোল এলাকায় কথা হয় নোয়াখালীর সুবর্ণচরের বাসিন্দা রুমনের সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় নোয়াখালীর বাসে উঠেছিলেন। ফেনীর লেমুয়া ব্রিজ আসার পর পানিতে আটকা পড়েন। এরপর সারা রাত সেখানে ছিলেন। সকালে হেঁটে মহিপালের উদ্দেশে রওনা হন। কারণ, মহিপাল থেকে নোয়াখালীর বাস চলাচল করছে।
রুমন বলেন, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, গাড়ির জট চট্টগ্রাম পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাসে সারা রাত কষ্ট করেছি। আবাসিক সুবিধা না থাকায় মহিপালে অনেককে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে; যাদের অধিকাংশ চট্টগ্রামের যাত্রী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।