জুমবাংলা ডেস্ক: জনপ্রিয় অনলাইনভিত্তিক গেম পাবজি ও ফ্রি ফায়ার বন্ধ করাটা সমাধান না উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, মাথা ব্যথা করলেই মাথা কেটে ফেলতে হবে এটা আসল সমাধান না।
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অ্যাপ ও সাইট বন্ধ করা গেলেও ছেলেমেয়েদের এসব গেম খেলা থেকে দূরে রাখা যাবে না। এটি বন্ধ করার অর্থ হলো-অ্যাপগুলো বাংলাদেশে আর পাওয়া যাবে না।
মন্ত্রী জানান, বর্তমান অনলাইন দুনিয়াতে ভিপিএন আছে, ডার্ক ওয়েব আছে। সেগুলো দিয়েই ছেলেমেয়েরা গেইম খেলার সঙ্গে যুক্ত হবে। তারা খেলা চালিয়ে যাবে। তাছাড়া ভিপিএন অনেক প্রয়োজনীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। ফলে এটি বন্ধ করে দিলে অনলাইন জগত ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের বেশিরভাগ অভিভাবকই ডিজিটাল বিষয়ে দক্ষ নন। সেটা না থাকাতেই অনলাইন গেইমে আসক্ত হয়ে পড়েছে শিশু কিশোররা। এর সমাধানের জন্য অভিভাবকদের ডিজিটাল দক্ষতার প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ‘সময় টিভি’র হেড অব আইটি সালাউদ্দীন সেলিম জানান, টিকটক, লাইকি, বিগোলাইভের মতো অ্যাপগুলো বন্ধ নয়, ডিজিটাল কনটেন্ট ফিল্টারিংয়ের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এই প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করলেই কিন্তু সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তবে এই প্ল্যাটফর্মগুলোর সুবিধা নিয়ে অনেকেই ক্যারিয়ার গড়েছেন।
তিনি বলেন, “বর্তমানে কয়েক বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে টিকটক এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় সোশ্যাল কমিউনিটি নেটওয়ার্ক। “মাত্র গত কয়েক বছরেই দেশের কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের মাধ্যমেই বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে এসেছে। তাই বন্ধ না করে পলিসি মেকার ও যারা আইডল কনটেন্ট ক্রিয়েটর তারা উদ্যোগী হয়ে তরুণ সমাজকে ভালো মানের কনটেন্ট তৈরিতে উৎসাহিত করতে পারেন। তাহলে সেটা হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।”
তিনি আরও বলেন, পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো অ্যাটাকিং গেমস বন্ধ করার ব্যাপারে যে সুপারিশ আসছে সেক্ষেত্রেও একটু ভাবার দরকার আছে। এগুলো বন্ধ না করে বয়সভিত্তিক বিবেচনায় আনা যেতে পারে। অর্থাৎ এগুলো শুধু ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়সের ব্যবহারকারীদের জন্য নিয়ম বেঁধে দিলে শিশুদের ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। অপরিণত বয়সেই যে সব শিশুরা আসক্ত হয়ে পড়ছে সেটা অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
গত বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) সব অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে অবিলম্বে পাবজি-ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধের লিখিত আদেশ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদেশে তিন মাসের জন্য এসব গেম অনলাইনে বন্ধ রাখার কথা বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে লাইকি, টিকটক, বিগো লাইভসহ ক্ষতিকর অ্যাপ এবং পাবজি, ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তিন মাসের জন্য নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। আর চার সপ্তাহের মধ্যে বিটিআরসির চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে পাবজি- ফ্রি ফায়ারসহ ক্ষতিকর গেম বন্ধে আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন ই-স্পোর্টস স্পেশালিষ্ট ওয়ালিউর রহমান সোহান। রোববার (২২ আগস্ট) ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
ফেসবুক পোস্টে ওয়ালিউর রহমান সোহান বলেন, আনন্দের সাথে সবাইকে জানাতে চাই যে, আমি মোহাম্মদ ওয়ালিউর রহমান, ই-স্পোর্টস এর পক্ষে দেশে পাবজি মোবাইল ও ব্যাটেল গ্রাউন্ড গেমস বন্ধের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তার বিপক্ষে আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ কাজে আমাদের আইনি সহায়তা দেবেন ব্যারিস্টার অনিক আর হক এবং অ্যাডভোকেট আরেফা পারভীন তাপসী। আমরা একজোট হয়ে এ ব্যাপারে লড়াই করব বলে আশা করছি।
ফেসবুক পোস্টে তিনি আরও বলেন, আমি দেশের সব পাবজি প্লেয়ার ও ফ্রি ফায়ার গেমস লাভারদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, কারণ তারা আমাদের প্রতিনিয়ত সঠিক তথ্য দিয়ে সাহায্য করে যাচ্ছেন। আশা করি, শেষ পর্যন্ত আপনাদের সবার এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
এর আগে ফ্রি ফায়ার ও পাবজির আসক্তি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে এটি বন্ধে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে সুপারিশ করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারও আগে পাবজি সাময়িকভাবে বন্ধ করা হলেও পরে আবার চালু করা হয়েছিল।
দক্ষিণ কোরিয়ার গেম ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান ব্লু হোয়েলের অনলাইন ভিডিও গেমস পাবজি ২০১৭ সালে চালু হয়। এরপর থেকে এই গেমটি দ্রুত বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে অ্যাঙ্গরি বার্ড, টেম্পল রান, ক্যান্ডি ক্রাশের মতো গেমগুলোকে পেছনে ফেলে সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন গেমের তালিকায় শীর্ষে জায়গা করে নেয় পাবজি।
অন্যদিকে চীনা প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে তৈরি করা যুদ্ধ গেম ফ্রি ফায়ার একইভাবে তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে করোনা মহামারির ফলে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ফলে শিক্ষার্থীরা এসব গেমে আসক্ত হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।