জুমবাংলা ডেস্ক : খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার হাসানপুর গ্রামের আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার পাবদা মাছ চাষ করছেন অর্ধযুগ ধরে। গত বছর থেকে তাঁর পুকুরের মাছ কিনে ভারতে রপ্তানি করছেন দু’জন ব্যবসায়ী। এসব বিক্রি হচ্ছে কলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন বাজারে। পাবদা মাছ চাষ করে বছরে আলাউদ্দিন প্রায় ২০ লাখ টাকা লাভ করছেন।
আলাউদ্দিন জোয়াদ্দার জানান, ১৯৯৬ সালে তিনি মাছ চাষ শুরু করেন। তিনি ৮টি পুকুরে মাছ চাষ করছেন। এসব পুকুরে টেংরা, পাঙাশ, ভাঙন, ফাইশ্যে, রুই, কাতলা, মৃগেল, মিনার কার্প, সিলভার কার্প, বেলে, দাতনে প্রভৃতি মাছ রয়েছে। ২০১৬ সালে তিনি পাবদা মাছ চাষ শুরু করেন। বর্তমানে ৬ একর জমিতে ৩টি পুকুরে এই মাছ চাষ করছেন। এর মধ্যে দেড় একরের দুটি পুকুর হচ্ছে নার্সারি পুকুর। সেখানে পোনা উৎপাদন করেন। সাড়ে ৪ একরের পুকুরে মাছ বড় করা হয়। দেশি প্রজাতির এই মাছ চাষের জন্য গভীর পুকুরের প্রয়োজন। বছরে দুইবার তিনি পুকুর থেকে মাছ ধরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া এ বছর তিনি মিষ্টিপানিতে পরীক্ষামূলকভাবে বাগদা চিংড়ির চাষ শুরু করেছেন। বাগদা চিংড়ি সাধারণত লবণ পানিতে হয়ে থাকে।
আলাউদ্দিন বলেন, তাঁর পুকুরে যে পরিমাণ পাবদা মাছ উৎপাদন হয় তার সব স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে পারেন না। গত বছরের আগস্টে তাঁর কাছ থেকে খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর গ্রামের টিটো মোল্লা মাছ কিনে নিচ্ছেন। তিনি মাছ কলকাতায় রপ্তানি করেন। এ ছাড়া গোপাল নামে খুলনার আরেকজন ক্রেতা পাবদা মাছ কিনে রপ্তানি করেন। গত বছর তার পুকুরের ২২৫ মণ মাছ কলকাতায় রপ্তানি হয়েছিল। এ বছর এখন পর্যন্ত ৮০ মণ মাছ রপ্তানি হয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে আরও দেড়শ মণ মাছ রপ্তানি হওয়ার কথা। প্রতিকেজি মাছ তিনি ৩০০ টাকায় বিক্রি করেন। স্থানীয় বাজারে প্রতিকেজি মাছের দাম কমপক্ষে ৩৫০ টাকা হলেও ক্রেতা কম থাকায় বাইরে পাঠাতে হয়।
নিয়ম মেনে তাঁর পুকুরে খাবার ও ওষুধ দেওয়ার পাশাপাশি পানিতে অপিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখতে সার্বক্ষণিক ৫টি অ্যারেটর চালানো হয়। গত বছর ও চলতি বছর পাবদা মাছ চাষে তাঁর ৬০ থেকে ৬৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ৫৫ লাখ টাকার মাছ বিক্রি করেছেন। এখন পুকুরে যে মাছ আছে তা আরও প্রায় ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারবেন। পাবদা মাছের পুকুরগুলো আলাউদ্দিন বছরে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা দিয়ে লিজ নিয়েছেন।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপপরিচালক তোফাজ উদ্দিন আহমেদসহ একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি আলাউদ্দিনের পুকুর পরিদর্শন করে। তাঁর পুকুর থেকে মাছ ধরার পর তা বরফ দেওয়া বাপে (ককসিটে) করে যশোরের বেনাপোল দিয়ে কলকাতায় পাঠানো হয়।
মাছ রপ্তানিকারক টিটো মোল্লা বলেন, তিনি বগুড়া ও ময়মনসিংহ থেকে পাবদার রেণু পোনা এনে চাষিদের কাছে বিক্রির পাশাপাশি মাছের খাবার ও ওষুধ সরবরাহ করেন। ৪-৫ মাস পর সেই খামার থেকে মাছ কিনে কলকাতায় পাঠান। সেখানে পাবদার ভালো চাহিদা রয়েছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা আবু বকর সিদ্দিক বলেন, গলদা-বাগদা-রুই জাতীয় মাছের এলাকা বলে খ্যাত ডুমুরিয়াতে বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির পাবদা মাছ চাষে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, বেকার সমস্যার সমাধান, আর্থিক সমৃদ্ধি ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে তাঁরা পাবদা চাষে উৎসাহ দিচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।