জুমবাংলা ডেস্ক: পাবনার সাঁথিয়ার শুঁটকি মাছের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এই শুঁটকি মাছ। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রাখছে সাঁথিয়ার শুঁটকি মাছ।
এ বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার শুঁটকি রপ্তানি করা হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া প্রায় ৩০০ পরিবার শুঁটকির চাতালে কাঁচা মাছ সরবরাহ করে এ থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার গৌরীগ্রাম ইউনিয়নের সাতানিরচর-আরাজি গোপিনাথপুর শুঁটকির চাতালে নারী ও পুরুষ শ্রমিকেরা কাজ করছেন। শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ব্যাস্ত সময় পার করছেন শুঁটকিপল্লির বাসিন্দারা। বর্ষা শেষে বিল ও নদীর পানি কমতে শুরু করায় সাঁথিয়া উপজেলার ঘুঘুদহের বড়বিল, ছোটবিল, সোনাইবিল, মুক্তাহারের বিল, কাটিয়াদহের বিল, ধলাইবিল, গ্যারকার বিল সোনাতলা বিল, পাথারের বিল, সুজানগরের গাজনার বিল, নাটোরের চলনবিলসহ অন্তত ২০টি বিল থেকে কাঁচা মাছ এই ক্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। এসব মাছের মধ্যে রয়েছে পুঁটি, খলসে, বাইং, চিংড়ি, টেংড়া,চাঁদা, শোল, টাকি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির সুস্বাদু দেশয়য় মাছ।
উপজেলা মৎস্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে এখানে শুঁটকি মাছ প্রক্রিয়াজাত করা হয়, যা দেশের চাহিদা পূরণেরর পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে। চলতি মৌসুমে তিন থেকে চার মাস মেয়াদী এই চাতালে প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি কোটি টাকা মূল্যের ৮০ থেকে ৯০ মেট্রিকটন শুঁটকি মাছ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এসব শুঁটকি মাছ পাঠানো হচ্ছে ব্রাহ্মনবাড়িয়া ও নীলফামারি জেলার সৈয়দপুরে। সেখান থেকে রপ্তানি করা হচ্ছে ভারতে।
উপজেলার সাতানিরচর,আরাজি গোপিনাথপুর, গৌরীগ্রাম, হুইখালী, কলাগাছি, মাজগ্রাম, পুরানচর, ঘুঘুদহ, তালপট্রি, মানপুর, পাগলা, রঘুনাথপুরসহ প্রত্যন্ত বিল এলাকার প্রায় তিন শতাধিক পরিবার শুঁটকির চাতালে কাঁচা মাছ সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। প্রতিমণ শুঁটকি তৈরি করতে খরচ হয় প্রায় ৮ হাজার টাকা এবং সেটা বিক্রি হয় ১৫/১৬ হাজার টাকা। শুঁটকি তৈরির কাজে নিয়োজিত রিশমা, আলোকা, কামনা রানী, মুক্তি, নিলুফা, শিরিন, আমিন,রবিউল,আবুল,কাদেরসহ বেশ কয়েকজন নারী ও পুরুষ শ্রমিক জানান, তিন কেজি তাজা মাছ শুকিয়ে এক কেজি শুঁটকি তৈরি হয়। শ্রেণিভেদে শুঁটকির বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৪০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।
উপজেলার সাতানিরচরের মৎস্যজীবি ‘ইমরান,নাজমুল,উকিল,সাত্তার ও নাজিম বলেন, আমরা কয়েক বছর ধরে এই শুঁটকির চাতালে মাছ বিক্রি করি। প্রতিদিন আমাদের প্রায় ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় হয়।
উপজেলার সাতানিরচরের ফারুক ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন বলেন, আমি প্রায় ৩০ বছর ধরে এই পেশায় আছি। আমার চাতাল থেকে এ মৌসুমে প্রায় ৮০ থেকে ৯০ মেট্রিকটন শুঁটকি মাছ উৎপাদন করতে পারবো বলে আশাবাদী। শুঁটকি মাছ উৎপাদনে সরকারি ঋণ সহায়তা পেলে এখান থেকে প্রতি বছর বিপুল পরিমান শুঁটকি মাছ উৎপাদন করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে সাঁথিয়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা খাদেমুল ইসলাম জানান, ‘এই শুঁটকি মাছ নিঃসন্দেহে সাঁথিয়ার একটি সম্ভাবনাময় খাত, যা দেশে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে ভূমিকা রেখে চলেছে। এই খাতের উন্নয়নের জন্য মৎস্যজীবীরা চাইলে মৎস্য খাতে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবেন। আমার পক্ষ থেকে তাদেরকে যেকোনো ব্যাপারে সহযোগিতা করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।