কমল দাশ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে প্রত্যন্ত পাহাড়ি এলাকায় বিদেশি ফল ‘অ্যাভোকাডো’ চাষ করে তাক লাগিয়েছেন তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা মো. ওমর শরীফ।
এই তরুণ উদ্যোক্তার জোহরা এগ্রো ফামর্স অ্যান্ড নার্সারি নামে নিজস্ব কৃষি খামারে গত বছর থেকে অ্যাভোকাডোর গাছে ফলন আসতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি তার খামারে গিয়ে দেখা গেছে, গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে মানবদেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী ফল অ্যাভোকাডো। ফলগুলো এখন অনেকটাই পরিপক্ব। খাওয়ার উপযোগী হয়েছে। খামার মালিক নিজেই গাছ থেকে কয়েকটি ছিড়ে আগত দর্শনার্থীদের এই বিদেশি ফলের স্বাদ গ্রহণ করাচ্ছেন।
জোহরা এগ্রো ফামর্স অ্যান্ড নার্সারির মালিক মো. ওমর শরীফ জুমবাংলাকে বলেন, ‘আমি দেখলাম সারা বাংলাদেশে ব্যাপকহারে আম বাগান হচ্ছে। এটার বিকল্প খুঁজতে গিয়ে কয়েক বছর আগে ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০টা অ্যাভোকাডো গাছের চারা সংগ্রহ করে পাহাড়ের এই বাগানে লাগাই। গত বছর থেকে কয়েকটি গাছে ফলন আসতে শুরু করে। এ বছর তিনটি গাছে ফল এসেছে। তিন গাছে প্রায় ১২০ কেজি ফল হবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েকদিনের মধ্যে গাছ থেকে অ্যাভোকাডো ফল সংগ্রহ করে বাজারজাত করা হবে। বাজারে এই ফলের দাম অনেক। আমাদের দেশে এই ফলের দাম প্রতি কেজি ১২শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা।’
ওমর শরীফ বলেন, পৃথিবীতে পুষ্টিকর ফলগুলোর মধ্যে অ্যাভোকাডো একটি। কেননা, এর মধ্যে আছে নানা ঔষধি গুণও। কেউ এই ফলের চাষ করতে চাইলে আমরা তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করবো।
আগামীতে নিজের বাগানে ফলটির চাষের পরিধি বাড়ানোর পাশাপাশি এর চারাও বাজারজাত করা হবে বলে জানান তিনি।
পুষ্টিবিদদের মতে, অ্যাভোকাডো একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ ভেষজগুণ সম্পন্ন সুস্বাদু ফল। এটি অন্য ফলের তুলনায় মিষ্টি কম হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীর জন্য উপযোগী। ফলের আকার অনেকটা পেয়ারা বা নাশপাতির মতো। একেকটা ফলের ওজন প্রায় ৪০০-৮০০ গ্রাম হয়। ফলের ভেতরে বেশ বড় ডিম্বাকার বীজ থাকে। আহার্য অংশ মাখনের মত মসৃণ, হালকা মিষ্টি স্বাদের। পেঁপের মতো কাঁচা-পাকা ফল, সবজি, ভর্তা, সালাদ, শরবতসহ বিভিন্নভাবে খাওয়ার সুবিধা আছে। টোস্টে মাখনের পরিবর্তে অ্যাভোকাডো ক্রিম দিয়ে খাওয়া এবং সালাদ ও স্যান্ডুইচে মেয়নেজের পরিবর্তে অ্যাভোকাডোর ক্রিম দিয়ে আহার করা স্বাস্থ্যসম্মত।
অ্যাভোকাডোর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ প্রোটিন, খনিজ পদার্থ, ভিটামিন এ, সি, ই ও কে। আছে প্রচুর পটাসিয়াম, যা কলার চেয়ে ৬০ ভাগ বেশি। ১৮ ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, ৩৪% স্যাচুরেটেড ফ্যাট। উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ভালো কোলেস্টেরল, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমায়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে। অর্থাৎ শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে। এটি শিশুদের জন্য একটি উৎকৃষ্ট মানের খাবার। শিশুদের পুষ্টি শোষণে সহায়তা করে। যকৃৎকে সুরক্ষা দেয়। জন্ডিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফল বিজ্ঞানী উইলসন পোপেনোর মতে, অ্যাভোকাডো হচ্ছে পৃথিবীর মানুষের জন্য ঈশ্বরের একটি বড় উপহার।
মিরসরাই উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী নুরুল আলম বলেন, ‘উপজেলায় অ্যাভোকাডো চাষের বিষয়টি আমার জানা নেই। ওমর শরীফের বাগানে গিয়ে দেখে আসবো। এখন অনেকে বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেন। অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টিগুণে ভরা। এ ফল বিভিন্ন রোগ-প্রতিরোধ করে। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের পথ্য হিসেবে কার্যকর।’
শুধু অ্যাভোকাডো নয়, ওমর শরীফের এই কৃষি খামারে আছে অনেক দেশি-বিদেশি ফলের গাছ। আছে বর্তমান বিশ্বের দামি আম মিয়াজাকি (সূর্যডিম), কিউজাই, ব্যানানা ম্যাংগো, ইন্দোনেশিয়ান ব্রুনাই কিং, কিং অব চাকাপাত, আলফেনসো, আলফানচুন, থাই ব্যানানা। আছে দারুচিনি, লবঙ্গ, পুলসান, রাম্বুটান, আপেল, তেঁতুল, থাই সফেদা, চেনাক ফ্রুট, থাই বেরিকেডেট মাল্টা, বারোমাসি মাল্টা, চাইনিজ কমলা, দার্জিলিং কমলা, চায়না-৩ লিচু, লটকন, ভিয়েতনামি ও শ্রীলঙ্কান নারিকেল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।