জুমবাংলা ডেস্ক: রাঙ্গামাটি জেলার কাঠের ফার্নিচারের পাশাপাশি এখানকার উৎপাতি পাহাড়ের বাঁশের তৈরী ফার্র্ণিচারের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
বাঁশের তৈরি এসব ফার্নিচার স্থানীয়ভাবে চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাহিরে ও যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। কাঠের তৈরি ফার্ণিচারের চেয়ে অনেকটা হালকা, টেকসই ও অল্প দামে পাওয়ায় বাঁশের তৈরি ফার্নিচারের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে এবং দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এ ফার্নিচারের অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
তবে প্রচুর চাহিদা থাকার পরে ও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে কারখানা বন্ধ থাকায় বাঁশের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসা কিছুটা মন্দা অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বাঁশের তৈরি ফার্নিচার ব্যবসা আবারো চাঙ্গা হবে বলে আশা ব্যবসায়ীদের।
রাঙ্গামাটিতে বাঁেশর ফার্নিচার সাধারণতঃ স্থানীয় ভুদং বাঁশ দিয়ে তৈরি করা হয়। এ বাঁশ অন্যান্য বাঁেশর চেয়ে মোটা ও লম্বা হয়। তবে বাঁশ থেকে ফার্নিচার তৈরির আগে পানির মধ্যে দুই থেকে তিন সপ্তাহ রাসায়নিক দ্রবনের মধ্যে ডুবিয়ে রাখতে হয়। এ ট্রিটমেন্টের ওপর নির্ভর করে থাকে বাঁশের ফার্নিচারের স্থায়িত্ব।
বাশেঁর তৈরি ফার্নিচারের সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে ইতিমধ্যে এ শিল্পকে নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে কাজ শুরু করেছেন বলে জানিয়েছেন রাঙ্গামাটির স্থানীয় বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা আশিকা মানবিক সংস্থার নির্বাহী পরিচালক বিপ্লব চাকমা।
তিনি জানান, বাশেঁর তৈরি ফার্ণিচারের ব্যবসা শুরু করার পর এর মাধ্যমে তিনি স্থানীয় বেকার সমস্যা সমাাধানের পাশাপাশি পাহাড়ের বাশেঁর তৈরি এ শিল্পকে দেশব্যাপী পরিচিতি করার সুযোগ পাচ্ছেন। বাশেঁর তৈরি ফার্নিচারের দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বলে জানান এ শিল্প উদ্যোক্তা।
বিপ্লব চাকমা জানান, পাহাড়ে বাঁশের তৈরি ফার্নিচারের ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে বর্তমানে বাঁেশের তৈরি ফার্নিচারের কারখানা বন্ধ রয়েছে এবং ট্রান্সপোর্ট বন্ধ থাকায় এখন এ ব্যবসা মন্দা যাচ্ছে। তবে পরস্থিতি ভালো হলে আগামীতে পুরোদমে কাজ শুরু করা হবে বলে জানান তিনি। তবে করোনা পরিস্থিতিতে কিছু কিছু ফার্ণিচারের আসবাবপত্র তৈরি করা হচ্ছে জানান তিনি।
বর্তমানে রাঙ্গামাটি শহরের স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় তাদের বাঁশের তৈরি ফার্নিচারের নিজস্ব একটি শো-রুম রয়েছে বলে জানান তিনি। রাঙ্গামাটিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ শিল্পকে অর্থনৈতিকাবে এগিয়ে নিতে পারলে তা এখানকার বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিকরাসহ দেশের অর্থনৈতিক চাকাকে অনেক সচল করতে পারবে বলে আশা এ শিল্প উদ্যোক্তার। রাঙ্গামাটি ছাড়া ও খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানে একটি করে ফার্নিচারের কারখানা রয়েছে বলে জানান বিপ্লব চাকমা।
পাহাড়ে সম্ভাবনাময় বাঁশের ফার্নিচার দিনদিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এবং বেকার সমস্যা সমাধানে ও বিশেষ ভূমিকা রাখছে বলে জানান এর সাথে সংশ্লিষ্টরা।
বাঁশ থেকে ফার্নিচার তৈরি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর বেকার যুবক-যুবতীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিভাগ।
এ বিষয়ে রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অং-সুই-প্রু চৌধুরী জানান, জেলা পরিষদের আওতাধীন স্থানীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প বিভাগের পক্ষ থেকে বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মকর্মস্থানের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
তিনি জানান, প্রশিক্ষণের প্রশিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি রাঙ্গামাটিতে বাঁশের তৈরি ফার্নিচারের প্রশংসা করে বলেন, পাহাড়ে তৈরি বাঁশের ফার্নিচারের যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এ শিল্পকে কাজে লাগাতে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এ বিষয়ে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
মন মাতানো ডিজাইনের বাঁেশর ফার্নিচারের মধ্যে রয়েছে শোফাসেট,চেয়ার,স্ট্যান্ড ল্যাম্প, শোফিসসহ নানান প্রকারের নিত্য ব্যবহার্য্য ফার্নিচার। এসব বাঁেশর ফার্নিচার হালকা, পরিবেশ বান্ধব ও স্বপ্ল মূল্যে পাওয়া যাওয়ায় এর স্থানীয় মানুষের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থানীয় চাহিদার পাশাপাশি এসব ফার্ণিচার জেলার বাইরেও সরবরাহ করা হয়।
পার্বত্য চট্টগ্রামের বাঁশ শিল্পকে আরো এগিয়ে নিতে ও পরিবেশ বান্ধব ফার্নিচার তৈরিতে সংশ্লিষ্টরা এগিয়ে আসলে এ শিল্প আরো অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে মনে করছে অনেকেই।-বাসস
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।