জুমবাংলা ডেস্ক : অ স্ত্রো পচারের পর পেটে সার্জিক্যাল আটারি বা কাচি রেখে দেন চিকিৎসক। এভাবে চলে দীর্ঘ ২০ বছর। অবশেষে সোমবার (১০ জানুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে অ স্ত্রো প চা রের মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছে সেই সার্জিক্যাল আটারি।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা: ওয়ালিউর রহমান নয়ন। তারই তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ভুক্তভোগী রোগী বাচেনা খাতুন। বাচেনা খাতুন চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার চিৎলা ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের আব্দুল হামিদের স্ত্রী।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের সার্জারি কনসালটেন্ট (সিনিয়র) ডা: ওয়ালিউর রহমান বলেন, ‘জানুয়ারির ৪ তারিখ থেকে বাচেনা খাতুনকে আমরা নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের জন্য অ স্ত্রো পচার পিছিয়ে যাচ্ছিল। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ হওয়ায় সোমবার তার অ স্ত্রো পচার করা হয়েছে। তার পেটে থাকা দীর্ঘদিনের সার্জিক্যাল আটারি অপসারণ করা হয়েছে।’
উল্লেখ্য, গত ৩ জানুয়ারি ‘অপারেশনের ২০ বছর পর রোগীর পেটে মিলল কাঁচি’ শিরোনামে অসুস্থ বাচেনা খাতুনকে নিয়ে পত্র-পত্রিকা প্রতিবেদন প্রকাশ হলে মেহেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগে হইচই পড়ে যায়। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। এরপর ৪ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের নারী সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি হন বাচেনা খাতুন।
এর মধ্যে পেটের যন্ত্রণা বেড়ে যায় আরো কয়েকগুণ। ডায়াবেটিস পরীক্ষাসহ খাবার কিনতে কিনতে একেবারে নিঃস্ব তিনি। যে ক্লিনিক থেকে অপারেশন করা হয়েছিল সেই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ সব খরচ বহনের আশ্বাস দিলেও কোনো অর্থ দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন বাচেনা খাতুন।
এদিকে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে অ স্ত্রো পচার বার বার পিছিয়ে যাচ্ছিল। সোমবার ডায়াবেটিস পরীক্ষার পর দুপুর ১২টার দিকে অ স্ত্রো পচার শুরু হয়। দুপুর সোয়া একটার দিকে তার অ স্ত্রো পচার সম্পন্ন হয়।
জানা গেছে, সহায়-সম্বল বিক্রি করে ২০০২ সালের ২৫ মার্চ মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার রাজা ক্লিনিকে পিত্তথলির পাথর অ স্ত্রো প চার করিয়েছিলেন বাচেনা খাতুন। অ স্ত্রো প চার করেছিলেন সার্জারি বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মিজানুর রহমান। তার সঙ্গে সহকারী হিসেবে ছিলেন রাজা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. পারভিয়াস হোসেন রাজা ও অ্যানেস্থেসিয়া করেন ডা. তাপস কুমার।
অপারেশনের এক সপ্তাহ পর বাচেনা খাতুনকে প্রেসক্রিপশন দিয়ে ছাড়পত্র দেয়া হয়। কিন্তু সুস্থ হতে পারেননি। পেটের ব্যথা নিয়ে অসহ্য যন্ত্রণায় বছরের পর বছর ডাক্তারের কাছে ছুটেছেন তিনি। খুইয়েছেন অর্থ-সম্পদ। অবশেষে ২০-২৫ দিন আগে রাজশাহীর একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে করালে পেটে সার্জিক্যাল আটারি সন্ধান পাওয়া যায়। এটি নিয়ে এলাকায় হইচই পড়ে।
অ স্ত্রো প চারের সময় পেটের মধ্যে সার্জিক্যাল আটারি রেখেই সেলাই করে দিয়েছিলেন চিকিৎসক। পুনরায় ডা: রাজার শরণাপন্ন হলে তিনি ঠিক হয়ে যাওয়ার কথা বলে ফেরত পাঠান। চিকিৎসকের কাছে পাত্তা না পেলেও বাচেনার পেটের যন্ত্রণা বাড়তেই থাকে। পরে আবার ডা: রাজার সঙ্গে দেখা করেও কোনো লাভ হয়নি। পরে সুস্থ হতে বিভিন্ন এলাকার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেন বাচেনা খাতুন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিতে বিক্রি করতে হয় শেষ সম্বল দুটি গরু।
এদিকে গত ৫ জানুয়ারি অ স্ত্রো প চার করা চিকিৎসক ও ক্লিনিক মালিকের বিরুদ্ধে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে মেহেরপুর স্বাস্থ্য বিভাগ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা: জাওয়াহেরুল ইসলাম। কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর গাংনীর সেই রাজা ক্লিনিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান স্বাস্থ্য বিভাগের এ কর্মকর্তা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।