একজন বিজ্ঞানী একটা পদ্ধতি বাতলেছেন: মিলিয়নের চেহারাটা কেমন, জানতে চাইলে একশ বড় পাতা নিয়ে প্রতিটাতে ১০ হাজার বিন্দু বসাও (এক শ লাইন, প্রতি লাইনে এক শ বিন্দু)। বড় একটা ঘরে সব পাতা টাঙিয়ে দিয়ে ঘুরে তাকালে দেখতে পাবে এক মিলিয়ন বিন্দু। চেষ্টা করে দেখবে নাকি? আগে থেকে তাহলে সাবধান করে দিই: প্রতি সেকেন্ডে তিনটি করে বিন্দু বসিয়ে এক নাগাড়ে কাজ করে গেলেও তোমার লাগবে ১২ ঘণ্টা।
যেকোনো ছেলে-মেয়ের পক্ষে কাজটা বেজায় বেশি, কিন্তু ক্লাসের সবাই উঠে পড়ে লাগলে দুই ঘণ্টার বেশি লাগবে না। তখন কাগজের পাতাগুলো ক্লাসঘরের দেয়ালে টাঙানো যাবে। এ ভাবে সারা ক্লাস ভালো করে বুঝবে মিলিয়ন সংখ্যাটা কত বড়।এখন ভেবে দেখ: যে কারখানায় তোমাদের স্কুলের খাতা তৈরি হয়, তাকে বলা হলো একটার ওপর একটা করে এক মিলিয়ন খাতা রাখা হোক। গাদাটা কতখানি উঁচু হবে? দেড় হাজার মিটারের কম নয়! যা একটা পাহাড় হবে, তাতে কাঁচা বয়সের পাহাড়-চড়িয়েরা বেশ তালিম নিতে পারবে।
এখন একবার কল্পনা করো, এক মিলিয়ন সাধারণ পেনসিল রাখা হয়েছে একটা অন্যটাকে ছুঁইয়ে—১৮০ কিলোমিটার লম্বা একটা লাইন দাঁড়িয়ে যাবে। আর যদি পেনসিল-কারখানা এক মিলিয়ন পেনসিলের মালমশলা দিয়ে একটা মাত্র বড় পেনসিল তৈরি করে? জিনিসটা হবে লম্বায় ১৮ মিটার, ওজনে ৭ টন। শুধু রূপকথার দৈত্য, মাথা যার মেঘ ছোঁয়, শুধু সে এমন একটা পেনসিলে লিখতে পারবে।
এবার কল্পনা করা যাক হাজার মিলিয়ন ব্যাপারটা কী (মার্কিনিরা একে বলে বিলিয়ন, কিন্তু ইংরেজিভাষী অন্যান্য দেশে বিলিয়নের মানে দশ লাখ মিলিয়ন বা ১০০ কোটি)।
আশপাশের ছোটখাটো জিনিসগুলোর আকার এক হাজার মিলিয়ন বাড়ালে সেগুলো প্রকাণ্ড হয়ে দাঁড়াবে। এক হাজার মিলিয়নের স্কুলখাতার গাদা হবে ১ হাজার ৫০০ কিলোমিটার উঁচু। এর চূড়া পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছাড়িয়ে যাবে, শুধু রকেট পৌঁছাবে এর মাথায়।
পঞ্চাশজন ছাত্রের একটা ক্লাস যদি বিনা ছুটিতে দিনে ছয় ঘণ্টা স্কুলখাতা গোনে, আর প্রত্যেকে গোনে ঘণ্টায় তিন হাজার করে, তাহলে হাজার মিলিয়ন শেষ করতে লাগবে তিন বছরের বেশি।
সার বেঁধে হাজার মিলিয়ন পেনসিল সাজালে লাইনটা চারবারের বেশি পৃথিবীকে বেড় দেবে। আর হাজার মিলিয়ন পেনসিলের মালমশলা দিয়ে একটা পেনসিল বানালে সেটা দৈর্ঘ্যে হবে ১৮০ মিটার, প্রস্থে সাড়ে ছয় মিটার এবং ওজনে ৭ হাজার টন। পাইপের মতো পেন্সিলের ভেতরটা ফাঁপা হলে সেখানে প্রায় পনেরটা একতলা বাড়ি বানানো চলবে, একশ জন লোকে থাকতে পারবে সেখানে।
তারা বলবে সগর্বে: আমরা থাকি পেনসিল-নগরে। এখন পৃথিবীর আকার নিয়ে পড়া যাক। পৃথিবীর একেবারে কেন্দ্র পর্যন্ত কুয়ো খুঁড়লে সেটা হবে ৬ হাজার ৩৮০ কিলোমিটার গভীর। সিঁড়ি বা মই বেয়ে ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার বেগে নামতে থাকলে, দিনে-রাত্রে না থেমে তলায় পৌঁছাতে লাগবে প্রায় দুমাস।
অবশ্য এমন কুয়ো খোঁড়া সম্ভব নয়। সবচেয়ে গভীর খনিগুলো তো দুই কিলোমিটারের বেশি গভীর নয়—আর এটা পৃথিবীর বুক থেকে তার কেন্দ্রের যতটা দূরত্ব, তার তিন হাজার ভাগের এক ভাগ।
পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের নিচে কী আছে? প্রশ্নটার উত্তর দেওয়া এখনো কঠিন। এ দিকে ভূপৃষ্ঠ বেশ খুঁটিয়ে অধ্যয়ন করা হয়েছে, লোকে পৌঁছায়নি, এমন জায়গা খুব কম।
কিলোমিটারের উপরিভাগ হলো এমন একটা বর্গক্ষেত্র, যার পাশগুলো এক কিলোমিটার দীর্ঘ, ১০০ হেক্টরের সমান। পৃথিবীর উপরিভাগ তাহলে আয়তনে ৫০ হাজার মিলিয়ন হেক্টর। এর দশ ভাগের সাত ভাগ জল, বাকি তিন ভাগ শুধু স্থল। পৃথিবীর ঘনমান কতখানি?
কিউবিক কিলোমিটার কল্পনায় আনতে পারো? বাক্স হিসেবে ভাবলে এক কিলোমিটার উঁচু, এক কিলোমিটার চওড়া এবং এক কিলোমিটার লম্বা হবে জিনিসটা। এ বাক্সে মস্কোর সব বসতবাড়ি ও দালান ভরে দেওয়া যেতে পারে। আর পৃথিবীর ঘনমান হলো এমন কিউবিক কিলোমিটারের চেয়ে দশ লক্ষ মিলিয়নেরও বেশি!
পৃথিবীর ভর, অর্থাৎ কী পরিমাণ উপাদানে এর গড়ন, তা কল্পনা করা অতি কঠিন। ধরো, ঠিক করা হলো বিশ্বজগতের অন্য একটা জায়গায় পৃথিবীকে সরানো হবে। পৃথিবীর ভর, অর্থাৎ যা দিয়ে তৈরি তার সবটা—পাথর ও ধাতু, বড় বড় পিপেতে পানি, সিলিন্ডার ভর্তি গ্যাস—সব যদি একশ টন ধরে এমন একেকটা মালগাড়িতে তুলে দেওয়া হয়, তাহলে পৃথিবীকে বহন-করা ট্রেনে কত গাড়ি থাকবে?
বিরাট সংখ্যাটা বললে শব্দটা অচেনা ঠেকবে তোমাদের। তাই অন্যভাবে বলা যাক: পৃথিবীর অবস্থান থেকে শেষ মালগাড়িটা যখন ছাড়বে, তখন ইঞ্জিন পৌঁছে গিয়েছে দূর নক্ষত্রের এলাকায়। বিশ্বজগতে সবচেয়ে দ্রুত জিনিস হলো আলোর গতিবেগ—এক সেকেন্ডে তিন লাখ কিলোমিটার।
‘কী সাংঘাতিক বেগ!’ এ কথা বলার সময়ে আলোর রশ্মি পৃথিবীকে আট পাক ঘুরবে। যদি বলো: ‘চাঁদ কত দূরে!’ কথা শেষ করার আগেই আলোর রশ্মি পৌঁছে যাবে চাঁদে। পৃথিবীবাহী ট্রেনের পেছনে গার্ড লণ্ঠন তুলল ইঞ্জিন-চালককে সঙ্কেত জানাতে। কতক্ষণে সঙ্কেতটি পৌঁছাবে চালকের কাছে? ৬০ হাজার বছরের বেশি। তাহলে বোঝ, পৃথিবীর ভর ব্যাপারটা কী!
পৃথিবীবাহী ট্রেনে গার্ড না রাখলে নয়। গাড়ির সংখ্যা অনেক, কিন্তু প্রতি বিশ হাজার মিলিয়ন ট্রাকপিছু একেকটি গার্ড রাখা ঠিক হয়েছে। তবু আশ্চর্য, ট্রেনটির গার্ড জোগাতে লেগে যাবে পৃথিবীর এক-চতুর্থাংশের বেশি লোক—প্রায় ২৫০ কোটি।১ দুজন গার্ডের মধ্যকার ব্যবধান হবে ৩৬ কোটি কিলোমিটার, অর্থাৎ পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্বের প্রায় আড়াই গুণ। সবচেয়ে কাছের বন্ধুর সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে জাগল একজন গার্ডের মনে—ট্রাকগুলোর ছাদ হয়ে স্বাভাবিক হাঁটার গতিতে, ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার হিসেবে চললে তার লাগবে ৬ হাজার ৯০০ বছর।
পৃথিবীর উপরিভাগকে সব লোকের মধ্যে সমানভাবে বিলি করলে প্রত্যেক পুরুষ, নারী ও শিশু পাবে পাঁচ হেক্টর শুকনো জমি, আর বারো হেক্টর পানি। আর পাঁচ হেক্টরে অপর্যাপ্ত শস্য, ফলমূল শাক-সবজি হতে পারে। প্রত্যেককে বিলি করা জমি থেকে খাবার জোগানো চলবে শত শত জনকে।
অবশ্য মরুভূমি আর তুষারাবৃত জায়গাগুলিকে চাষবাসের পক্ষে ঠিক করে নেওয়ার জন্য অনেক কিছু করতে হবে। কিন্তু সেটা করার সামর্থ্য আছে মানুষের। কয়েকজন বিজ্ঞানীর মতে, অবিলম্বে কয়লা, লোহা আর তেলের ঘাটতি দেখা দেবে। এটাও সত্যি নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।