পৃথিবীতে এত বেশি ধাতু, আর এত কম অধাতুর কারণ কী? অধাতুর চেয়ে ধাতু পরস্পরের এত ঘনিষ্ঠ কেন? অবশ্য চেহারা দেখে গন্ধক আর ফসফরাস অথবা আয়োডিন আর কার্বনকে ভুল করার কথা না। কিন্তু নায়োবিয়াম ও ট্যান্টেলাম, পটাসিয়াম ও সোডিয়াম অথবা মোলিবডেনাম ও টাংস্টেনকে আলাদা করতে গিয়ে অনেক সময় বিশেষজ্ঞরাও মুশকিলে পড়ে যান।
…সংখ্যার স্থানবদলে যোগফলের কোনো রদবদল ঘটে না। এটি সম্ভবত গণিতের অন্যতম ‘অলঙ্ঘ্য’ নিয়ম। কিন্তু রসায়নে পারমাণবিক ইলেকট্রন খোলকের পর্যায়ে নীতিটি সর্বদা যথাযথ প্রযোজ্য নয়… মেন্ডেলিভের (পর্যায়) সারণির দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের মৌলের ব্যাপারে অবশ্য কিছু গোলমেলে নেই।
এ পর্যায়ের প্রতিটি মৌলেরই নতুন ইলেকট্রনটি পরমাণুর প্রত্যন্ত খোলকে (কক্ষপথে) রক্ষিত। আরও একটি মাত্র ইলেকট্রন যোগ করলেই পূর্ববর্তীটি থেকে একেবারে আলাদা এক নতুন পদার্থে এর রূপান্তর ঘটে। সিলিকনের সঙ্গে অ্যালুমিনিয়ামের কোনো সাদৃশ্য নেই। গন্ধক থেকে ফসফরাস পুরোপুরি আলাদা। অচিরেই ধাতব চারিত্র্যের বদলে দেখা দেয় অধাতব দ্রব্যগুণ। এর কারণ সহজেই বোঝা যায়। পরমাণুর প্রত্যন্ত খোলকে ইলেকট্রনের বাহুল্য এগুলোকে ‘কৃপণ’ করে তোলে। এরা ইলেকট্রন হারাতে চায় না।
এখন চতুর্থ পর্যায়ে আসা যাক। পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম প্রথম শ্রেণির ধাতু। আশা করি, এগুলোর পরপরই আবার অধাতুগুলোর দেখা মিলবে। কিন্তু হায়, আমাদের জন্য হতাশাই অপেক্ষিত। কারণ, স্ক্যান্ডিয়াম থেকে শুরু করে এদের প্রত্যেকেরই বাড়তি ইলেকট্রনটির প্রত্যন্ত খোলকের চেয়ে এর আগের খোলকটিই বেশি পছন্দ। ‘শব্দের’ স্থানবদল। কিন্তু এই বদলিতে ‘যোগফলের’, মৌলের ধর্ম সমষ্টির পরিবর্তন ঘটে।
প্রত্যন্ত থেকে দ্বিতীয় খোলকটি প্রত্যন্তটির তুলনায় ঢের বেশি রক্ষণশীল আর মৌলের রাসায়নিক ধর্মকে তা অল্পই প্রভাবিত করে। এই মৌলগুলোর পার্থক্য তাই তেমন প্রকট নয়।
স্ক্যান্ডিয়াম যেন ‘স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে’ যে তার তৃতীয় খোলকটি অসম্পূর্ণ। এতে ১৮টি ইলেকট্রনের জায়গায় আছে মাত্র ১০টি। সম্ভবত, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়াম তাকে বেমালুম ‘ভুলে’ নতুন পাওয়া নিজস্ব ইলেকট্রনগুলো চতুর্থ খোলকে সাজিয়ে রেখেছে। স্ক্যাণ্ডিয়ামে ন্যায়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হলো।
ক্রমান্বয়ে দশটি মৌলের সারিতে প্রত্যন্তের পূর্ববর্তী খোলকটিই পূর্ণ হচ্ছে। প্রত্যন্ত খোলক মাত্র দুটি ইলেকট্রনসহ অপরিবর্তিত রইল। কোনো পরমাণুর প্রত্যন্ত খোলকে এমন ‘স্বল্পসংখ্যক’ দুটি ইলেকট্রনের অস্তিত্ব ধাতুর ক্ষেত্রে উদ্ভট ঘটনা। সে জন্যই স্ক্যান্ডিয়াম-দস্তা ‘পরিসরে’ কেবলই ধাতু রয়েছে। প্রত্যন্ত খোলকে মাত্র দুটি ইলেকট্রন, তাই কেনই-বা এরা যৌগ তৈরির সময় ওখানে ইলেকট্রন গ্রহণ করবে?
বিক্রিয়ালিপ্সু মৌলকে ইলেকট্রন দুটি দিয়ে দেওয়াই তো তাদের পক্ষে সহজতর। তা ছাড়া নির্মীয়মাণ প্রত্যন্তের পূর্ববর্তী খোলক থেকে বাড়তি ইলেকট্রন ধারেও তাদের আপত্তি নেই। ফলত, তাদের পক্ষে বহুরূপী হরেকরকম ধনাত্মক যোজ্যতা প্রদর্শন সম্ভব। যেমন ম্যাঙ্গানিজের কথাই ধরা যাক। তার পক্ষে ধনাত্মক দ্বি- (দুই), ত্রি- (তিন), চতুঃ- (চার), ষড়- (ছয়), এমন কি সপ্তযোজী হওয়াও কঠিন নয়। পর্যায় সারণির পরবর্তী পর্যায়গুলোতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি লক্ষণীয়। ধাতুর বহুল সংখ্যা ও অধাতুর তুলনায় এগুলোর পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতর সাদৃশ্যের কারণ এটাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।