পেটে গজ রেখেই সেলাইয়ের ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্ট্যাম্পে রোগীর অঙ্গীকারনামা নিলো লালমনিরহাটের নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টার কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে শহরের বিনিময় ফিলিং স্টেশনে রোগী ফারুক মিয়ার কাছে অঙ্গীকারনামা লিখে নেন ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান মাসুদ।
এর আগে রোববার রোগীকে ১০ হাজার টাকায় ম্যানেজে ব্যর্থ হলে বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
রোগী ফারুক মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মান্নানের চৌপতি মাশানকুড়া এলাকার ফজলুল হকের ছেলে। পেশায় স্থানীয় বটতলা মোড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।
ফারুক মিয়া ও স্থানীয়রা জানান, গত ঈদ উল আযহার দেড় সপ্তাহ পরে পেটে ব্যথা অনুভব হলে লালমনিরহাট শহরের নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারে ভর্তি হন ব্যবসায়ী ফারুক। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরতরা জানান, এপেন্টিসাইটিস অপারেশন করতে হবে। তাদের পরামর্শে লালমনিরহাট সাচিক সভাপতি ডা. ভোলানাথ ভট্টাচার্যের তত্ত্বধানে অপরেশন করে ৪ দিনে ১৮ হাজার ৫ শ’ টাকা বিল দিয়ে চলে আসেন তিনি।
কিছুদিন পরে সুস্থ না হয়ে উল্টো শরীরের সমস্যা বেড়ে গেলে ফারুককে তার পরিবার রংপুর শহরের পারফেক্ট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে ডা. সাহেব আলী পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে জানান, পেটে কোনো বস্তু রয়েছে। যা পুনরায় অপারেশন করে বের করতে হবে। সেই চিকিৎসকের পরামর্শে দ্বিতীয় বারের মত অপারেশন করে পেট থেকে বের করা হয় গজ ব্যান্ডেজ। সেখানে ২০ দিন চিকিৎসা শেষে প্রায় ৬০/৭০ হাজার টাকা ব্যায় করে কিছুটা সুস্থতা নিয়ে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বাড়ি ফেরেন ব্যবসায়ী ফারুক মিয়া।
এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সকালে লালমনিরহাট যান ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ফারুক মিয়া। বিষয়টি জানতে পেয়ে নিরাময় ক্লিনিকের মালিক শামছুল আলম রোগী ফারুককে কৌশলে ডেকে নিয়ে দিনভর আপসের চেষ্টা চালান। তাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার চেষ্টা করলে কৌশলে বেরিয়ে আসেন ফারুক মিয়া।
পরে বিষয়টি জানা জানি হলে ‘লালমনিরহাটে পেটে গজ রেখে সেলাই’ শিরোনামে একটি সংবাদ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে ক্লিনিক কৃর্তপক্ষ নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে তাড়াহুরা করে সোমবার রাতে শহরের বিনিময় ফিলিং স্টেশনে জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সিরাজুল হকের অফিসে রোগীকে নিয়ে আপস মীমাংসায় বসেন। সেখানে ১৭ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়ে রোগী ফারুক মিয়ার কাছে জোর করে দেড়শ’ টাকা মূল্যের দুটি নন জুড়িশিয়াল ফাঁকা স্ট্যাম্পের স্বাক্ষর নেন বলে জানান ফারুক মিয়া। বিষয়টি নিয়ে কোথাও অভিযোগ না করতেও অনুরোধ করা হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত ফারুক মিয়া বলেন, দুর্গাপুর ইউপি সদস্য সাত্তার মিয়া, ইউপি আওয়ামী লীগের সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ বিনিময় ফিলিং স্টেশনে গেলে নিরাময় ক্লিনিকের ম্যানেজার মাসুদ ১৭ হাজার টাকা দিয়ে কোথাও অভিযোগ দিতে নিষেধ করেন। এ সময় একটি একশ টাকা ও একটি ৫০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পে জোর করে স্বাক্ষর নেন। লিখতে বললে তারা পরে লিখে নেবেন বলে জানান। কিন্তু মঙ্গলবার তাদের ইচ্ছামত শর্তে লেখা একশ টাকার স্ট্যাম্পটি ফেসবুকে দেখেছি। তবে ৫০ টাকার ফাঁকা স্ট্যাম্পটি তাদের কাছে রেখে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
বিনিময় ফিলিং স্টেশনের মালিক ও জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহভাপতি সিরাজুল হক বলেন, ক্লিনিক পক্ষ ও ক্ষতিগ্রস্ত রোগীর পরিবার তার চেম্বারে বৈঠক করে সমাধান করেছেন। তবে তিনি ওই সময় উপস্থিত ছিলেন না। তাই ফাঁকা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরের বিষয়টি জানেন না বলেও জানান তিনি।
নিরাময় ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান মাসুদ বলেন, জোর করে নয়, বৈঠকে বসলে রোগী স্বেচ্ছায় অঙ্গিকার নামা প্রদান করেন। তবে অব্যবহৃত ৫০ টাকার স্ট্যাম্পটির বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
নিরাময় ক্লিনিকের মালিক শামছুল আলমকে একাধিকবার ফোন করলে তিনি সাংবাদিকদের ফোন রিসিভ করেননি।
লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বলেন, বিষয়টি লোকমুখে শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।