পেলের নিথর দেহ সমাধি হবে ‘স্বর্গের কাছে’
স্পোর্টস ডেস্ক : রাত ২টায় আলবার্ট আইনস্টাইন হাসপাতাল থেকে বের করা হয় পেলের কফিন। সান্তোসের ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে কফিন নিয়ে সাইরেন বাজিয়ে গাড়ি পৌঁছে ৪টায়। এত রাতেও কান্নার আওয়াজে চারপাশ ভারী করে তোলে অপেক্ষমাণ হাজারো ভক্ত।
ফুটবলসম্রাটকে শেষবার দেখতে আগের দিন বিকেল থেকেই স্টেডিয়ামের বাইরে ভিড় জমিয়েছিল তারা। ভোর ৪টায় পেলের কফিন স্টেডিয়ামে আসার পর থেকে বাড়তেই থাকে ভিড়, যা সামলাতে রীতিমতো হিমশিম ক্লাব কর্তৃপক্ষ। ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনোসহ কে নেই সেই ভিড়ে?
স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় স্টেডিয়াম। তখন থেকেই আবেগের প্লাবণ। ২ ও ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করে সবাই ছুটে যেতে চেয়েছিল কফিনের কাছে। কারো হাতে বিশাল পতাকা-ব্যানার, কেউ পুরো শরীরে এঁকেছে পেলের উল্কি তো কেউ পুরো পরিবারসহ এসেছে পেলের ১০ নম্বর জার্সি পরে।
ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামের এই মাঠের সবুজ ঘাসে বল পায়ে আল্পনা এঁকেছিলেন পেলে। সান্তোসকে সাফল্যের শিখরে নিয়ে গিয়েছিলেন জাদুকরী ফুটবলে। সেই মাঠেই গতকাল শেষবার ভক্তরা আবেগ আর ভালোবাসায় শেষ শ্রদ্ধা জানাল তিনবার বিশ্বকাপ জেতা এই কিংবদন্তিকে। পেলের ছেলে এদিনহো হাত বোলাচ্ছিলেন বাবার কফিনে। হাসপাতাল থেকে স্টেডিয়ামে আসার একটা ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন তিনি। সেখানে লিখেছেন, ‘আমাদের রাজাকে বাড়ি নিয়ে এলাম। ’
৫৮ বছরের এমিলিও লিমা চোখের জল মুছতে মুছতে ব্রাজিলীয় পত্রিকা ও গ্লোবোকে জানালেন, ‘আট বছর বয়সে পেলের খেলা দেখেছি। চোখে মায়ার মতো লেগে আছে তাঁর ফুটবল। ’ আবেগী হয়ে পড়েছিলেন তরুণ এমিলিও, ‘আমার মা পেলের ভীষণ ভক্ত ছিলেন। ছয় মাস আগে তিনি মারা যান। মায়ের হয়ে আমি এসেছি পেলেকে শ্রদ্ধা জানাতে। ’
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো আরো বেশি আবেগী, ‘আমরা প্রতিটি দেশের কাছেই আবেদন জানাতে যাচ্ছি, যেন অন্তত একটি স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয় পেলের নামে, তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম পেলের গুরুত্ব বুঝতে পারবে। ’ পেলের ছেলে আর স্ত্রীকেও সান্ত্বণা জানান তিনি।
১৯৭৪ সালের ২ অক্টোবর ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়ামে সান্তোসের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন পেলে। খেলা শেষে হাঁটু গেড়ে বসে পড়েছিলেন মাঠের মাঝখানে। উঁচু করেছিলেন দুই হাত। গ্যালারির সব দর্শক দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান এই কিংবদন্তিকে। অভিবাদনের এই ছবিটা স্মরণীয় হয়ে আছে ইতিহাসে। গতকাল সেই বেলমিরো স্টেডিয়ামে শেষবার এলেন পেলে। সেই মাঝখানেই রাখা হলো তাঁর নিথর দেহ। ভরা গ্যালারি শেষবার যেভাবে শ্রদ্ধা জানাল এই কিংবদন্তিকে, সেই ছবিও খোদাই হয়ে থাকবে ফুটবল ইতিহাসে।
টানা ২৪ ঘণ্টা শ্রদ্ধা জানাতে পারবেন ভক্তরা। এরপর আজ সকাল ১০টায় শুরু হবে পেলের অন্তিমযাত্রা। সান্তোসের বিভিন্ন রাস্তা ঘুরে তা শেষ হবে নেক্রোপোল একুমেনিকাতে। পেলের ইচ্ছাতেই তাঁকে সমাধিস্থ করা হবে সেখানে। নেক্রোপোল একুমেনিকাতে যাওয়ার পথে ‘কালো মানিকে’র কফিন নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর পৈতৃক বাড়ির সামনে দিয়ে। শতবর্ষী মা দোনা সেলেস্তে আরান্তেসকে শেষবার দেখানো হবে ছেলের মরদেহ। নিজের সব স্মৃতি হারিয়ে ফেলা দোনা ছেলের মৃত্যুখবর জানেন না বলে দাবি ব্রাজিলীয় গণমাধ্যমের।
ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী নেক্রোপোল একুমেনিকার নবম তলায় শেষ শয্যায় সমাহিত থাকবেন ‘ও রেই’ খ্যাত পেলে। কারণ তাঁর বাবা দোনদিনহো ফুটবল খেলতেন ৯ নম্বর জার্সি পড়ে। বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে মৃত্যুর আগে নবম তলায় সমাহিত হওয়ার ইচ্ছে জানিয়েছিলেন পেলে। তবে ডেইলি মেইল জানাচ্ছে পেলেকে সমাহিত করা হতে পারে ১৪ তলায়। ১৯৯১ সালে গিনেস বুকে নাম তোলা ১.৮ হেক্টরের এই সমাধিস্থলকে ডাকা হয় ‘স্বর্গের খুব কাছে’ নামে। এত উঁচু সমাধিস্থল নেই আর কোথাও। এই ভবনে ব্যবস্থা আছে ১৬ হাজারের বেশি কবরের। আছে মিউজিয়াম আর জলপ্রপাত।
তবে আজ শেষকৃত্যে এই স্থানে যাওয়ার অনুমতি আছে শুধু পেলের পরিবারের সদস্যদের। এই ভবনের ১৪ তলা থেকে খুব ভালোভাবে দেখা যায় ভিলা বেলমিরো স্টেডিয়াম। এ জন্যই পেলে মৃত্যুর আগে সমাধিস্থ হতে চেয়েছেন নেক্রোপোল একুমেনিকায়। স্বর্গের খুব কাছ থেকে হয়তো দেখতে চান প্রিয় দল সান্তোসের খেলা!
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।