বিনোদন ডেস্ক : প্যারিসে অশান্তির ঝড়। স্টেজে ওঠার পর গান করতে পারলেন না শিল্পি ইমরান। দর্শকদের মধ্যে হাতাহাতি-মারামারি এবং একজন দর্শক গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্যারিসের আনাচে-কানাচে সব জায়গায় ‘টক অফ দ্য টাউন’ ইমরানের স্টেজে ওঠার পর গান করতে না পারা। কেন, কি কারণে আর কারাই বা এই উশৃংখল তরুণ কেন তাকে গান করতে বাধা দিল? কেনই বা পুলিশ এসে তাৎক্ষণিক তাদের স্টেজ থেকে নামিয়ে দিল ?এগুলো নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ফ্রান্সে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে । প্যারিসে বৈশাখী মেলা গতকাল প্রবাসীদের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল। দীর্ঘদিন করোনায় ঘরে আটকে থাকার পর এই উৎসবে সব শ্রেণি-পেশার প্রবাসীরা এসেছিল উদযাপন করতে, একটু আনন্দ বিনোদন সবার মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে।দুপুর দুইটা থেকে চলা এই অনুষ্ঠানে স্থানীয় শিল্পীদের গানের পর সন্ধ্যার দিকে আসেন দেশীয় আমন্ত্রিত শিল্পীরা। ঝিলিক এবং সিথীর গানের পর ইমরান যখন স্টেজে উঠলেন এবং গান শুরু করলেন তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই উশৃংখল তরুণরা স্টেজের দিকে একে একে লাফিয়ে উঠলো ইমরান মাহমুদুলকে লক্ষ্য করে। এরপর পুরো অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে যায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ স্টেজ নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং শিল্পী ইমরান সহ স্টেজে থাকা তার সহ কো-আর্টিস্ট এবং কলাকুশলীদেরকে স্টেজ থেকে নামিয়ে দেয়া হয় গান বন্ধ করে। পাশাপাশি উৎশৃংখল তরুণ-যুবকদের পুলিশ নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হন এবং একজনকে পুলিশ গ্রেফতার করে
গ্রেপ্তারকৃত যুবকের পরিচয় তাৎক্ষণিক মেলেনি।স্বরলিপি শিল্পী গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা এবং আয়োজক নজরুল ইসলাম বলেন, অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দর চলছিল। তাদের সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী সবকিছু ঠিকঠাক ছিল। তবে এই ঘটনাটিকে তিনি পূর্ব পরিকল্পিত এবং অনাকাঙ্খিত বলে মনে করেন।
বৈশাখী মেলার অন্যতম স্পন্সর হোসেন সালাম বলেন, এ অনুষ্ঠানটি করতে আমাদের অনেক সময় দিতে হয়েছে। অনেক অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে। প্রবাসীদের আনন্দ দেয়াই ছিলো আমাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু এ ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা আমাদেরকে মর্মাহত করেছে। ভবিষ্যতে স্পন্সর করতে আরো সতর্ক হতে হবে । শা- গ্রুপের চেয়ারম্যান শাহ আলমও উপস্থিত ছিলেন এবং এই বৈশাখী মেলার অন্যতম একজন স্পন্সর। তিনি বলেন, আমি সবসময়ই বিভিন্ন বাংলাদেশি প্রোগ্রাম ও কালচারাল প্রোগ্রামগুলোতে স্পন্সর করে থাকি। প্রবাসীদের একটা মিলনমেলা হয় এখানে, নিজেরাও আনন্দ ভাগাভাগি করি, কিন্তু আজকের এই ঘটনায় সত্যি খুব মর্মাহত হয়েছি। এ ধরনের কাণ্ড যে বা যারা ঘটিয়েছে তা সত্যিই গ্রহণযোগ্য নয়, কারণ ভবিষ্যতে এধরনের কোন প্রোগ্রাম করতে হলে এদেশের পুলিশ এবং প্রশাসন আমাদেরকে ভালো দৃষ্টিতে আর দেখবে না। এ বিষয়টা নিয়ে কমিউনিটির মধ্যে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে ।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেশকিছু কমিউনিটি নেতা বলেন, স্বরলিপি বৈশাখী মেলার আয়োজন করেছে। এখানে দুটো গ্রুপ রয়েছে। তাদের ভেতরে হয়তো কোনো দ্বন্দ্ব রয়েছে। আর এই দ্বন্দ্বের জের ধরেই এই উৎশৃংখল তরুণ-যুবকদের কেউ ব্যবহার করেছে অনুষ্ঠানটি পণ্ড করার জন্য।
জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন বলেন, যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন উশৃংখল যুবকদের স্টেজ থেকে নামাতে, কিন্তু একটা পর্যায়ে তারা না নামলে কিছু যুবক স্টেজে থেকে এবং স্টেজের নিচ থেকে হাতাহাতি এবং টানাটানি শুরু করতেই সূত্রপাত ঘটে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার।
অনেক প্রবাসী দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা এসেছিলাম পরিবার নিয়ে এখানে একটি আনন্দঘন মুহূর্ত কাটাবো এবং ইমরানের গান শুনবো, কিন্তু তারা লক্ষ্য করেছেন যে, ইমরানকে গান গাইতে স্টেজে না দেয়াই উদ্দেশ্য ছিল ওইসব উৎশৃংখল যুবক এবং তরুণদের। ইমরান গান শুরু করার কয়েক মিনিটের মধ্যে উশৃংখল তরুণরা যখন স্টেজে একে একে লাফিয়ে উঠছিল তখন অনেকেই তার পরিবার এবং আত্মীয়-স্বজনকে নিয়ে স্টেজ এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হন।নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একজন সাংবাদিক বলেন, তার স্ত্রীকে নিয়ে তিনি এসেছিলেন অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে কিন্তু এই তরুণ-যুবকদের ধাক্কাধাক্কি এবং ঠেলাঠেলি মধ্যে পড়তে হয় তার স্ত্রীকে এবং তিনি কিছুটা আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাৎক্ষণিক এই অনুষ্ঠান থেকে চলে যেতে বাধ্য হন। বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠানটিতে হাজার হাজার দর্শকের সমাগম ঘটেছিল। পাশাপাশি বিদেশিরাও এসেছিলেন এই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করতে। সামাজিক সংগঠন BCF-এর প্রেসিডেন্ট এমডি নূর বলেন, অনুষ্ঠানটি খুব সুন্দর চলছিল এবং ঝিলিক সিথী গান করলো। এরপর স্টেজে ইমরান আসলো আর তখনই তরুণ-যুবকরা স্টেজে লাফিয়ে উঠলো। বিষয়টি রহস্যজনক। তিনি মনে করেন, আয়োজকদের এখানে দুর্বলতা রয়েছে। তারা কোনো সিকিউরিটি, তেমন কোনো কার্যক্রম রাখেনি। এতে করেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে এবং প্যারিসে অশান্তির ঝড় বিরাজ করছে। ইমরান বাংলাদেশের একজন অন্যতম সেলিব্রিটি। ব্যক্তিগত শত্রুতার জন্য তাকে স্টেজে গান গাইতে নাও দিতে পারে উশৃংখল তরুণদের কেউ একজন- অনেকেই ধারণা করছেন।
সরাসরি হোটেলে দেখা করতে গেলে ইমরান কোনো মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। তার ম্যানেজার মিঠু বলেন, এরকম ঘটনাগুলো আসলে অনাকাঙ্ক্ষিত। তবে একজন সেলিব্রিটির জন্য এগুলো স্বাভাবিক। এতে মন খারাপের কিছু নেই।
শিল্পী ঝিলিক এবং সিথী বলেন, আমরা এই অনুষ্ঠানটিকে একটি আনন্দের অংশ হিসেবে নিয়েছি। ঘুরতে এসেছিলাম। পাশাপাশি এ অনুষ্ঠানটি করে গেলাম, বেশ ভালো লেগেছে । ফ্রান্সে অফিওরা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কৌশিক রাব্বানী বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত এরকম কালচারাল প্রোগ্রামগুলো করে থাকি, কিন্তু আজকের এই ঘটনাটি এদেশের প্রশাসনকে ভাবিয়ে তুলবে। পুনরায় কোনো অনুষ্ঠান করতে গেলে তারা চিন্তা করবে আমাদের পারমিশন দিবে কি-না। এ ধরনের অনুষ্ঠানগুলো করতে আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে। তবে শেষ কথা হলো প্যারিস বাংলাদেশি কমিউনিটিতে এখন যে একটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে সেটা কেটে যাবে। সবাই এই ঘটনাটিকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেই মনে করছেন। ভবিষ্যতে যাতে ফ্রান্সে কোনো কালচারাল প্রোগ্রাম বা কমিউনিটি প্রোগ্রাম হলে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সেদিকে সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে এবং পরিকল্পনা করে সিকিউরিটি ব্যবস্থা করতে হবে। শিল্পী ইমরানের স্টেজে ওঠার পর গান করতে না পারার কষ্ট বেদনা বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ছাপ ফেলেছে। কমিউনিটিও মনে করে যে, এ ধরনের একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।