হেদায়েত উল্লাহ সৌখিন, গাইবান্ধা: ‘এই রিকশা যাবে’ বলতেই স্নিগ্ধ হাসি দিয়ে হারুন বলেন, ‘হ যামু’। কথা তার অস্পষ্ট। কোথায় যাবেন বা কয় টাকা দেবেন বলে যাত্রী হারাবার সুযোগটাও দিতে চান না তিনি।
মোটরচালিত ভ্যান-রিকশার ভিড়ে একজন যাত্রী যেন হারুনের কাছে ডুমুরের ফুল। ভাঙ্গা প্যাডেল রিকশায় প্রতিবন্ধি চালককে দেখে ব্যস্ত মানুষেরা তাকে এড়িয়ে মোটরচালিত ভ্যান বা অটোরিকশায় উঠে পরে যেন স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। হারুনের আহার জোটানোর চেষ্টাকে গলা টিপে দিয়ে যায় তারা।
অসহায় হারুন অলস ভঙ্গিতে আবার বসে পরে হারানো যাত্রীর দিকে ‘হা করে’ অপলকে তাকিয়ে থাকে। এরপর নিজের অজান্তেই ঠোঁট জোড়া বন্ধ হবার চেষ্টা করলেও অনাহারে সৃষ্ট শুষ্ক দাঁত মাঝেমধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
ভূমিহীন প্রতিবন্ধী এই হারুন শেখ গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার শালমারা ইউনিয়নের মধ্য উলিপুর গ্রামের মৃত ফহিম উদ্দিন শেখের মেঝো ছেলে। বয়স ৩৫। জন্মগত প্রতিবন্ধি হারুনের হাতে শক্তি নেই বললেই চলে। পায়েও শক্তি কম। তবুও দুই ছেলেসহ চারজনের সংসার চলে তার অবশ পায়ে।
সারাদিনে কত টাকা আয় হয়? প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আগে দুইশ আড়াইশ হলেও গত এক বছর থেকে একশ টাকাও হয় না।’
এতে পরিবারের সবার তিনবেলা খাবার জোটে কি না জিজ্ঞাসা করলে তার অস্পষ্ট উচ্চারণের ব্যাখ্যা যেন আরও দুর্বোধ্য হয়ে ওঠে। একটি মাত্র ভাঙ্গা ঘরে তিনি কোনমতে দিনাতিপাত করছেন অসহায় পরিবার নিয়ে। পুরাতন ভাঙ্গা ঘরটি মেরামত করাও তার পক্ষে অসম্ভব।
সমাজের বিত্তবান মানুষের কাছে হারুনের চাওয়া বেশি কিছু না, মাত্র একটা ছোট অটোরিকশা। এটা পেলে সহজে যাত্রী বহন করে পরিবারকে বাঁচাতে পারবেন বলে জানান তিনি।
হারুনের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় মেম্বার মো: তবিবর রহমান বলেন, ‘হারুন আমার ওয়ার্ডের সবচেয়ে হতদরিদ্র ও ভূমিহীন ছেলে। সে খুবই নম্র ও ভদ্র স্বভাবের। তার কোনও উপকারে আসতে পারলে যথাসাধ্য চেষ্টা করব।’
হারুনকে সমাজসেবা অফিস ও জেলা পরিষদের মাধ্যমে সহযোগীতার আশ্বাস দেন শালমারা ইউপি চেয়ারম্যান মো: আনিসুর রহমান আনিস।
বাড়ছে শীতের তীব্রতা, বৈরি আবহাওয়ায় টিকে থাক হারুনের মনোবল। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কুয়াশা চিরতরে দূর হোক প্রতিবন্ধি এই যুবকের পরিশ্রমের উষ্ণতায়। তার মলিন মুখে ফুটে উঠুক মিষ্টি রোদ্দুরের আভা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।