প্রধানমন্ত্রীর জন্য হেলিকপ্টারের চলন্ত পাখার নিচেই ছিলেন ডিলু ভাই

শাহরিয়ার আলম : নেত্রী রুপপুর যাবেন, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন, কাছেই জনসভাও করবেন।

আমরা প্রথম হেলিকপ্টারে গেলাম। পদ্মার ধু ধু বালুচরে হেলিপ্যাড বানানো হয়েছে। নামার সময়ই বুঝলাম কি পরিমাণ বালু উড়েছে হেলিকপ্টারের পাখার কারণে। হেলিপ্যাড থেকে বসার কক্ষগুলো অনেকটা দূরে। আমরা সবাই নিরাপদ দূরত্বে চলে গেলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার আসার আগে।

উদ্বোধন হলো, দুপুরের খাওয়া হলো, অনেক নেতা- কর্মী-সাধারণ মানুষের উপস্থিতিতে জনসভা হলো। এবার ফেরার পালা।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বিদায় দিতে ডিলুভাইকে সাথে করে আমরা হেলিকপ্টারের সিড়ির কাছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উঠে গেলেন, হেলিকপ্টারের দরজা বন্ধ হতেই আমরা ৮-১০ পা পিছিয়ে এসে ক্ষনিকের জন্য দাঁড়ালাম তারপর পাখাগুলো ফুলস্পিডে ঘুরতেই সবাই দৌড় লাগালাম দূরে দাঁড়ানো গাড়িগুলোর ভেতরে ঢুকতে। হেলিকপ্টারের পাখাগুলো তখন পূর্ণগতিতে, যে কোন সময় হেলিকপ্টার উড়াল দিবে।

আমি গাড়ির হাতল ধরে পেছনে তাকিয়ে দেখি ডিলু ভাই ওখানে দাঁড়িয়েই আছেন। ভয় পেয়ে গেলাম। এতবড় একটা সচল হেলিকপ্টারের পাখার সামনে ৭৫ বছরের একজন বয়স্ক মানুষ কোনোভাবেই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না।

চিৎকার করে ডিলু ভাইকে আমি ডাকছি ভয়াবহ একটা পরিস্থিতি থেকে বাঁচানোর জন্য। হেলিকপ্টার যে কোনো সময় উড়ে যাবে। ডিলু ভাই দাঁড়িয়েই আছেন।

হেলিকপ্টারের একদম মুখোমুখি দশ হাত দূরে দাঁড়ানো ডিলু ভাইয়ের ছয় ফিট লম্বা ইশ্বরদীর গরমে ঘামে ভেজা পায়জামা ও পাঞ্জাবি উড়ছে, মুজিব কোট উড়ছে, বাবরি করা চুলগুলো, সব পেছন দিকে উড়ছে, কিন্তু ডিলু ভাইয়ের লম্বা শরীরটা খুঁটির মতো দাঁড়িয়েই আছে !

মুহূর্তের মধ্যে ডিলু ভাইয়ের মাথার হাত পাচেক ওপর দিয়ে হেলিকপ্টারটা চলে গেলো। আমি দূর থেকে দৃশ্যটা দেখে হা হয়ে গেলাম। কাছে গিয়ে বললাম এটা কি করলেন !!?? মারা পড়তেন তো।

আত্মবিশ্বাস আর সারাদিনের কর্মসূচির সফলতার একটা তৃপ্তির মৃদু হাসি দিয়ে ডিলু ভাই উত্তর দিলেন, ‘নেত্রীকে সালাম দিবো না ?’। আমি বুঝলাম কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।

ডিলু ভাইকে মহান আল্লাহতালা রাব্বুল আলামীন জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করুন।

লেখক : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য (রাজশাহী-৬ আসন)। ফেসবুক থেকে সংগৃহীত।

Write a Comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *