জুমবাংলা ডেস্ক : পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেছেন, টাকার মান কমতে থাকা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে দেশের অর্থনীতি খাদের পড়ার উপক্রম হয়েছিল। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত রাশ টেনে ধরায় খাদের কিনারেই দাঁড়িয়ে গেছে। পেছেনে ফেরা শুরু হয়নি এখনো। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারলে অক্টোবরে ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হবে।
গতকাল মঙ্গলবার ডেভেলপমেন্ট জার্নালিস্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ডিজেএফবি) আয়োজিত ‘ডিজেএফবি উন্নয়ন সংলাপে’ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরও বলেন, আইএমএফ ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আগস্টে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। সেপ্টেম্বরেও বাড়বে। তবে অক্টোবরে গিয়ে কমতে শুরু করবে। কেননা আমাদের হাতে ২০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য মজুত আছে। আইএমএফের ঋণ পাওয়া যাবে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার। এসব কারণে আমি এক্ষেত্রে আশাবাদী। আমরা আইএমএফ থেকে অবশ্যই ঋণ পাব। এটা গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি। তবে আইএমএফের সঙ্গে ঋণের শর্ত নিয়ে আলোচনা হবে বন্ধুর মতো, মহাজনের মতো নয়।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন ডিজেএফবির সভাপতি হামিদ-উজ-জামান। সংলাপ সঞ্চালনা করেন ডিজেএফবির সাধারণ সম্পাদক সাহানোয়ার সাইদ শাহিন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী আরও বলেন, আইএমএফ আমাদেরই অংশ। আমরা সেখানে চাঁদা দিই। এর আগেও আমরা আইএমএফ থেকে ঋণ পেয়েছি। তাদের এদেশে আসা-যাওয়া একটি রুটিন ওয়ার্ক।
এছাড়া আমাদের অর্থনীতি বড়, আমাদের অর্থের ক্ষুধা আছে। তাই আমরা আগের তুলনায় বেশি ঋণ চেয়েছি। আমরা অবশ্যই ঋণ পাব। শর্তের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু শর্ত তো থাকে। বন্ধুর কাছ থেকেও তো টাকা ধার নিলে বলে কবে টাকা ফেরত দিবি। এছাড়া সামাজিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা অর্থনীতির এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেও মনে করছেন মন্ত্রী।
ভারতীয় ঋণের অর্থছাড়ের প্রবাহ কম উল্লেখ করে এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গেছেন। সেখানে নানাবিধ বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। আশা করি, এই সফরের মাধ্যমে ভারতীয় ঋণে অর্থের প্রবাহ বাড়বে। তাদের অর্থপুষ্ট প্রকল্পগুলো আরও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে। তিনি বলছেন, এই ঋণগুলো অনেকটা আমলানির্ভর। তাদের দেশের সচিবালয় বলে আমরা তাদের সহযোগিতা করি না, আমাদের দেশের সচিবালয় কর্তারা বলেন তারা আমাদের সহযোগিতা করে না। আশা করি, এই জটিলতা কাটবে শীঘ্রই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডলারের দাম ১০০ টাকা পর্যন্ত হলে আমি খুশি হব। এর বেশি হলে কষ্টদায়ক হবে। জ্বালানি তেলের দামও ১০০ টাকার মধ্যে থাকলে ভালো হতো। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৭ শতাংশের লক্ষ্য পূরণ করা যাবে কি না, সেটি নির্ভর করছে অনেক কিছুর ওপর। তবে ৭ শতাংশ হলে আমাদের জন্য আনন্দদায়ক হবে। সাড়ে ৬ শতাংশ হলেও খারাপ কিছু হবে না। দুর্নীতি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, দুর্নীতি সব সমাজেই আছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের সমাজে দুর্নীতি দৃশ্যমান। প্রকল্পের দুর্নীতি কমাতে অনেক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এখনো তেমন কোনো ফল পাওয়া যায়নি। আইন সবার জন্য সমান করতে পারলে দুর্নীতি কমে যেত। আইন প্রয়োগে কোনো খাতির দেখানো উচিত নয়। তেলের দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বলেন, জ্বালানি তেল ভয়ংকর একটা জিনিস। এর দামের ওপর অনেককিছু নির্ভর করে। তেলের দাম বৃদ্ধি আইএমএফের পরামর্শে করা হয়নি। নিজেদের প্রয়োজনে করা হয়েছে। তেলের এই দাম এখন কমতে শুরু করেছে। সামনে আরও কমবে। তবে সেটি আগের দামের পর্যায়ে যাবে না। টাকার মান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘদিন কোকের মুখ বন্ধ থাকলে হঠাৎ খোলার পর ফোঁস করে শব্দ হয়। তেমনই দীর্ঘদিন টাকার মান ধরে রেখে হঠাৎ ছেড়ে দেওয়ায় এত আলোচনা হচ্ছে। এমএ মান্নান বলেন, দুর্নীতি কমানো গেলে দারিদ্র্যের হার কমবে। চলমান এই সংকটে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রথম গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেন, সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত অবকাঠামো, এরপরই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য। বিশেষায়িত ক্যাডার নিয়ে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে ক্যাডার ব্যবস্থায় সংস্কার দরকার। সবার জন্যই একই ক্যাডার হলে ভালো হতো।
সভাপতির বক্তব্যে হামিদ-উজ-জামান বলেন, অর্থনৈতিক এই সংকটকালে এ ধরনের আয়োজন আমাদের জানার ও রিপোর্টিংয়ের ক্ষুধা মেটাতে ভূমিকা রাখবে। এর ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও অব্যাহত থাকবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।