ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক স্মৃতি ফাতেমা ও তার তিন সন্তানকে গলা কেটে নির্মমভাবে হত্যার রহস্য উদঘাটনে হন্যে হয়ে ঘুরছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ইতোমধ্যে গতকাল রাতে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মূলহোতা পারভেজ (২০) কে।
রোববার (২৬ এপ্রিল) দিবাগত রাতে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) হাফিজুর রহমান। পারভেজ আবদার গ্রামের কাজিম উদ্দিনের ছেলে। পারভেজ ছাড়াও ওই হত্যাকাণ্ডে আরও বেশ কয়েকজন অংশ নিয়েছিলেন বলেও জানা গেছে।
গ্রেপ্তারের পর যা উদ্ধার হল এবং যা জানা গেল
রাতে পারভেজকে উপজেলার জৈনাবাজার আবদার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পিবিআই।
এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতো রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি পায়জামার ভেতর থেকে তিনটি গলার স্বর্ণের চেইন, ফাতেমার কানের দুলসহ কিছু স্বর্ণলংকার উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে আবদার এলাকার একই পরিবারের চারজনকে হত্যার আগে ২০১৮ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি নীলিমা নামে সাত বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের পর মাথায় আঘাত ও শ্বাসরোধ করে পারভেজ হত্যা করেছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় পারভেজের বিরুদ্ধে মামলাও হয়। বয়স বিবেচনায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে মুক্ত হন পারভেজ।
জামিনে মুক্ত হওয়ার পর শিশু নীলিমার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি ও হুমকি দিতে থাকেন তিনি। মামলা প্রত্যাহার না করা হলে তাদের মারপিট করে এলাকা ছাড়া করবে বলেও জানান পারভেজ ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে ২০১৮ সালে ২৮ আগস্ট নিরাপত্তা চেয়ে পারভেজ, তার বাবা কাজিম উদ্দিন, মা মোছা. কামরুন্নাহার ও আবুল কালামের নাম উল্লেখ করে শ্রীপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশু নীলিমার বাবা হাসান ওরফে ফালান।
আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ও তিন সন্তানকে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার পারভেজ এলাকায় বখাটে হিসেবে পরিচিত। মাদকসেবন থেকে শুরু করে বেচাকেনার সঙ্গেও তার সম্পর্ক রয়েছে। মাদক সম্পৃক্ততা ও বখাটে আচরণের কারণে স্থানীয় লোকজন তাকে এড়িয়ে চলতো বলে জানান ওই এলাকার বাসিন্দা হারুন অর রশিদ। পরিবারের সদস্যরা অনেক চেষ্টা করেও তাকে ভালো পথে আনতে পারেননি বলে জানান। অবশেষে ফোর মার্ডার মামলায় পিবিআইয়ের হাতে ধরা পড়লো পারভেজ।
পারভেজের চাচা আসাম উদ্দিন বলেন, পারভেজ অনেক আগে থেকেই মাদক সেবন ও বিক্রির সঙ্গে সম্পৃক্ত। টাকার জোরে একটি মার্ডার মামলা থেকে পারভেজ পার পেয়ে যায়। তখন যদি সে ওই মামলায় পার না পেতো তাহলে এমন রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সাহস পেত না।
গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক হাফিজুর রহমান বলেন, পারভেজের একার পক্ষে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটনো কোনো মতেই সম্ভব নয়। মামলার শুরুতেই ভিন্ন আঙ্গিকে তদন্ত শুরু করে পিবিআই। পূর্বের বিভিন্ন ধরনের ঘটনা পর্যবেক্ষণ, পর্যালোচনা, এলাকার বখাটে, মাদক সেবনকারি ও ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন জনের তথ্য সংগ্রহ করে পিবিআই।
এসব তথ্য পর্যালোচনা করে রোববার রাতে পারভেজকে আবদার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যাকাণ্ডের দায়িত্ব স্বীকার করে। পরে তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় পিবিআই। এ সময় পারভেজের ঘর থেকে তার দেখানো মতে রক্তমাখা কাপড় ও মাটির নিচে চাপা দেয়া অবস্থায় মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ সময় একটি পায়জামার ভেতর থেকে তিনটি গলার চেইন, ফাতেমার কানের দুলসহ কিছু স্বর্ণলংকার উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার জৈনাবাজার এলাকার একটি বাড়ি থেকে মা ও তিন সন্তানের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা- বুধবার (২২ এপ্রিল) দিবাগত রাতের কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা চারজনকে গলা কেটে হত্যা করেছে।
নিহতরা হলেন- আবদার এলাকার প্রবাসী রেদোয়ান হোসেন কাজলের স্ত্রী ইন্দোনেশিয়ান নাগরিক স্মৃতি আক্তার ফাতেমা (৪৫), তার বড় মেয়ে সাবরিনা সুলতানা নূরা (১৬) , ছোট মেয়ে হাওরিন হাওয়া (১২) ও বাক প্রতিবন্ধী ছেলে ফাদিল (৮)।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।