রঞ্জু খন্দকার, রাজশাহী থেকে: রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে জয়ী হয়েছেন সুলতানা আহমেদ ওরফে সাগরিকা। তিনি হিজড়া সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশে প্রথম কাউন্সিলর হলেন বলে জানিয়েছেন।
গত বুধবার রাসিক নির্বাচনে ভোট নেওয়া হয়। এতে সাগরিকা ৬ হাজার ২৬৩ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মোসা. নাজমা খাতুন পান ৫ হাজার ৪৭ ভোট। রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন এ ফল ঘোষণা করেন। সাগরিকা সংরক্ষিত ৭ নম্বর (১৯, ২০ ও ২১) ওয়ার্ড থেকে আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন।
নির্বাচনে ব্যাপক পরিশ্রম এবং জয়ী হওয়ার পর এত বেশি ফোনে কথা বলতে হয়েছে যে সাগরিকার গলা ভেঙে গেছে। এ কারণে শুক্রবার ফোন করে জুমবাংলা তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারেনি। তবে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী আতিকুল ইসলাম কৌশিক জুমবাংলার সঙ্গে কথা বলেন।
আতিকুল জুমবাংলাকে বলেন, ভোটের সময় বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, প্রচার-প্রচারণায় সাগরিকা আপাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। প্রচুর কথা বলতে হয়েছে। এ কারণে আপা কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে এক সাক্ষাৎকারে সাগরিকা বলেন, ‘নির্বাচনের ফল পক্ষে আসার পর থেকে এত এত ফোন এসেছে যে কথা বলতে বলতে গলা ভেঙে গেছে। আমার আর কথা বের হচ্ছে না। আনন্দে ভাসছি। বিভিন্ন দপ্তর থেকে ফোন এসেছে। সবার কাছ থেকে প্রশংসা পাচ্ছি। সবাই মিলে রাতে আনন্দমিছিলও করেছি।’
সে সময় সাগরিকা বলেন, তিনি দেশে হিজড়া সম্প্রদায় থেকে নির্বাচিত প্রথম কাউন্সিলর। তিনি জয়ী হওয়ায় সবার আগে একটি প্রতিশ্রুতি পূরণে অগ্রাধিকার দেবেন। সেটি হলো তাঁর নির্বাচনী এলাকার তিনটি ওয়ার্ডেই সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরের কার্যালয় করা হবে। আগে এসব ওয়ার্ডে নারী কাউন্সিলরের কোনো কার্যালয় ছিল না। কার্যালয় করার ফলে মানুষ তাঁকে সহজে পাবেন। এটা তাঁর তিন ওয়ার্ডের মানুষের কথা বলার প্ল্যাটফর্ম হবে।
এর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় জুমবাংলার সঙ্গে কথা বলেন সাগরিকা। তখন তাঁকে নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করে জুমবাংলা।
সে সময় জুমবাংলাকে সাগরিকা বলেন, হিজড়া সম্প্রদায়ের লোক হওয়ায় রাত-বিরেতে তাঁর চলাচলে অসুবিধা হয় না। ফলে জনগণের প্রয়োজনে তিনি যখন-তখন ছুটে যেতে পারবেন।
সাগরিকা আরও বলেছিলেন, আগে হিজড়াদের সঙ্গে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নবজাতককে আশীর্বাদ করা ও দোকান থেকে সাহায্য সংগ্রহের কাজ করতেন তিনি। জীবনে সইতে হয়েছে নানা নির্যাতন ও কটু কথা। হিজড়াদের অনেকেই এখন মূলধারার সমাজে মিশে কাজ করতে চায়। নির্বাচিত হলে শুধু নিজ সম্প্রদায় নয়, সব মানুষের জন্যই কাজ করতে চান তিনি।
সাগরিকার বাড়ি রাজশাহী নগরের শাহমখদুম থানার শিল্পীপাড়া এলাকায়। হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্য হওয়ায় লোকজনের টিপ্পনীর কারণে নবম শ্রেণির বেশি পড়তে পারেননি। তিনি ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।