সাইফুল ইসলাম, মানিকগঞ্জ: মানিগঞ্জের ঘিওরে প্রশাসনের সহায়তায় অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। এতে ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে বসতবাড়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কৃষি জমি। ড্রেজার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই মাসের পর মাস ধরে অবৈধ খননযন্ত্র দিয়ে বালু তোলেন তারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদেরও ম্যানেজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। গণমাধ্যমকর্মীদের যদি ম্যানেজ করা না যায় তাহলে কয়েক দিনের জন্য ড্রেজার বন্ধ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে লোক দেখানো অভিযান চালানো হয়। দু’চারদিন পর আবারও শুরু হয় বালু উত্তোলন। ফলে অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ হয় না কখনো।
সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘিওরের ধলেশ্বরী নদীর বেগুন নারচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে মাসের পর মাস ধরে অবৈধ খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন। এর পাশেই আরেকটি খননযন্ত্র দিয়ে বালু তুলছেন জাফর, আফজাল চক্র। পয়লা ইউনিয়নের সিধুনগর এলাকার ঠাকুরবাড়ী পুকুরে দুটি খননযন্ত্র বসিয়েছেন আবু বকর ও সেলিম। বাতরন্দ্র গ্রামে আরেকটি ড্রেজার বসিয়েছেন আবু বকর। তিনি পয়লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক।
বেগুন নারচী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ধলেশ্বরী নদীর ভাঙ্গন থেকে বিদ্যালয় ও বসতবাড়ী রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। আর সেখানে অবৈধ খননযন্ত্র বসিয়ে বালু তুলছেন ড্রেজার ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সংগ্রহের সময় কথা হয় ড্রেজার ব্যবসায়ী ও পয়লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আবু বকরের সঙ্গে। শুরুতেই তিনি জানান, ইউএনও, এসিল্যান্ড ও ওসিকে ম্যানেজ করেই ড্রেজার ব্যবসা করি। ঠাকুরবাড়ী পুকুরে যে ড্রেজার বসিয়েছি সেটা উদ্বোধন করেছেন ইউএনও, এসিল্যান্ড ও মৎস্য কর্মকর্তা।
আবু বকরের দাবি, আপনারা রোদে পুড়ে ড্রেজার খুঁজতে যাবেন কেন? আসবেন, কল করবেন, চা-পানি খাবেন, পাঁচশ-এক হাজার টাকা নেবেন, সম্পর্ক ভালো থাকবে। তা না করে যদি নিউজ করেন, তাহলে ইউএনও বলবে, হয় সাংবাদিক ম্যানেজ করো না হলে ড্রেজার দুদিন বন্ধ রাখো। ড্রেজার দু’চারদিন বন্ধ রাখার পর আবারও চালু করবো। মাঝে আপনারা ঠকবেন।
বাসুদেববাড়ী হয়ে বেগুন নারচী এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে বসানো ড্রেজারের ছবি তুলতে গেলে আগেই খবর পান ড্রেজার ব্যবসায়ী ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সভাপতি সানোয়ার হোসেন। এই প্রতিবেদককে ফোন করে তিনি বলেন, ভাই আমি দৌলতপুর আসছি। বাসুদেববাড়ী জাফর-আফজাল আছে। আমি বলে দিচ্ছি, আপনি ওদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যান। ঘন্টা খানেক পর আমি এসে আপনাকে টাকা দিচ্ছি।
ড্রেজার ব্যবসায়ীদের সহায়তার বিষয়ে কথা হয় ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান ও মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের সঙ্গে। এসিল্যান্ড ছুটিতে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, ড্রেজার ব্যবসায়ী আবু বকরকে আমি চিনি না। ওনার পুকুরে ড্রেজার বসানো হয়েছে কিনা, তাও আমি জানি না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান বলেন, অবৈধ ড্রেজার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আমরা নিয়মিত অভিযান চালাই। যাদের কথা বললেন এদের বিরুদ্ধেও খুব দ্রুত অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।