আমরা আগেই জেনেছি, ভৌগোলিক অবস্থান ও প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের কারণে বাংলাদেশ একটি দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে আছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোধ করা যায় না, তবে উপযুক্ত পূর্বপ্রস্তুতি এবং কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে এসব দুর্যোগে প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
দুর্যোগপূর্ব করণীয়
১. যথাসম্ভব উঁচু জায়গায় বসতভিটা, গোয়ালঘর ও হাঁস-মুরগির ঘর তৈরি করতে হবে।
২. নদী তীরবর্তী এলাকায় বেড়ি বাঁধের ভিতরে এবং সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে বেস্টনির ভিতরে বসতভিটা তৈরি করতে হবে।
৩. বাড়ির চারপাশে বাঁশঝাড়, কলাগাছ, ঢোলকলমি, ধৈঞ্চা ইত্যাদি গাছ লাগাতে হবে। এসব গাছ বন্যার স্রোত অনেকটা প্রতিরোধ করতে পারে।
8. ঘরের ভিতরে উঁচু মাচা বা পাটাতন তৈরি করে তার উপর খাদ্যশস্য, বীজ ইত্যাদি সংরক্ষণ করতে হবে, যাতে ঘরে পানি ঢুকলেও এগুলো নষ্ট না হয় ।
৫. প্রতিটি পরিবারে দা, খুন্তি, কুড়াল, কোদাল, ঝুড়ি, নাইলনের দড়ি, বাঁশের চাটাই, টিনের ভাঙা টুকরা, আলগা চুলা, রেডিও, টর্চ লাইট ও ব্যাটারি জোগাড় করে রাখতে হবে।
৬. পুকুরের পাড় উঁচু করতে হবে এবং টিউবওয়েল ও ল্যাট্রিন যতটা সম্ভব উঁচু স্থানে বসাতে হবে। প্রয়োজনে অতিরিক্ত পাইপ লাগিয়ে টিউবওয়েলের মুখ উঁচু করতে হবে।
৭. শুকনা খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, থৈ, গুড় এবং প্রয়োজনীয় ঔষধপত্র বিশেষ করে খাবার স্যালাইন ঘরে মওজুদ রাখতে হবে। দুর্যোগকালীন সময়ের জন্য কিছু পরিমাণ গোখাদ্যও সংরক্ষণ করতে হবে।
৮. পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সাঁতার শেখার ব্যাপারে উৎসাহী করতে হবে।
দুর্যোগকালীন করণীয়
১. বন্যা শুরু হলে নিয়মিতভাবে পানি বাড়া বা কমা | পর্যবেক্ষণ কিংবা এসম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাসের প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
২. বন্যার সময় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পলিখিন বা পানিরোধক প্যাকেটে মুড়ে ঘরের চালের নিচে পাটাতনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পাবার সঙ্গে সঙ্গে খাবার পানি কলসিতে ভরে ভালো করে ঢেকে পলিথিন দিয়ে বেঁধে এবং সেই সাথে কিছু শুকনো খাবার যেমন চিড়া, মুড়ি, গুড় একটি পাত্রে ভরে ভালো করে পলিথিন বা প্লাস্টিক ব্যাগে মুড়ে মাটির নিচে পুঁতে রাখতে হবে।
৩. গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগিগুলোকে উঁচু স্থানে সরিয়ে রাখতে হবে।
৪. বন্যায় বাড়িঘর ডুবে গেলে নিকটস্থ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে হবে। ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষেত্রে ১, ২, ৩ ও ৪ নং সতর্ক সংকেত পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্রে যাবার প্রয়োজন নেই। তবে ৫নং বিপদসংকেত শোনার পর শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী ও মেয়েদের আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়ে দিতে হবে এবং মহাবিপদ সংকেত শোনার পর সবাইকে অবশ্যই আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে আশ্রয় নিতে হবে। আশ্রয়কেন্দ্র না থাকলে কাছাকাছি পাকা, উঁচু বা বহুতল বাড়ি, স্কুল-কলেজ বা অন্য প্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিতে হবে।
৫. দুর্যোগে বিশুদ্ধ বা নিরাপদ পানি পান করতে হবে। যে টিউবওয়েলের মুখ পানিতে ডোবেনি এমন টিউবওয়েলের পানি পানের জন্য নিরাপদ। প্রয়োজনে পানি ভালোভাবে ফুটিয়ে কিংবা পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বা ফিটকারি ব্যবহার করে পান করতে হবে।
৬. যে কোনো দুর্ভোগের সময় ছোট শিশুদের প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। অসুস্থ, প্রতিবন্ধী, গর্ভবর্তী নারী ও বৃদ্ধদের প্রতি অধিক যত্নশীল হতে হবে।
৭. ন্যাকালীন সময়ে যাতায়াতের জন্য নৌকা না থাকলে কলাগাছের ভেলা তৈরি করে নিতে হবে।
৮. পরিবারের সকল সদস্যকে বিভিন্ন সংক্রামক রোগের টিকা নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
How Can Cities Create Resilience in the Face of Natural Disasters | ArchDaily
৯. আশ্রয়কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সামাজিকভাবে উদ্যোগী হতে হবে।
১০. আশ্রয়কেন্দ্রে ল্যাট্রিন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা যাতে যথাযথ থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।