স্কুলের ছেলেমেয়ে সবার জানা পৃথিবী গোল, চেহারাটা বলের মতো, আর মহাশূন্যে তার সফরের পথটা কেমন। অনেক দিন আগে লোকে ভাবত, পৃথিবী আকারে চ্যাপ্টা চাকতির মতো বা একটু উত্তল (প্রাচীন যোদ্ধাদের বর্ম গোছের), কিছু একটার ওপর ভর করে আছে। কীসের ওপরে ভর করে আছে, তা নিয়ে নানা মুনির ছিল নানা মত। প্রাচীন ভারতের লোকেরা ভাবত পৃথিবী একটা গোলার্ধ।
পৃথিবী টেবিলের ওপরের মতো চ্যাপ্টা, অনেক দিন যে লোকে এটা ভাবত, তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। অবাক হওয়ার কথা হলো, মানুষ নিজের বুদ্ধির সাহায্যে আমাদের গ্রহের সত্যিকার আকার বের করতে পারে। অবশ্য এটা করতে হাজার হাজার বছর কেটে যায়, লোকে যখন সমুদ্রে এবং স্থলপথে দীর্ঘ যাত্রা শুরু করে, তখন ব্যাপারটা বোঝা সহজতর হয়।
লোকে দেশ-বিদেশে ভ্রমণ শুরু করে এত দিন আগে যে প্রথম যাত্রাগুলোর কথা কোনো ইতিহাস বলতে পারবে না। দাবানল, বন্যা, ক্ষুধা, উত্তর থেকে নেমে-আসা বরফ, মরুভূমি থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে-পড়া বালি, ইত্যাদির কারণে মানুষে বাধ্য হয় স্থান পরিবর্তনে।
আদিম মানুষের যাত্রা এত মন্থর ছিল যে সেটাকে ভ্রমণ না বলে দেশান্তর যাত্রা বলাই উচিত। যা-ই হোক, অনেক বছরব্যাপী এসব যাত্রায় লোকে হাজার হাজার কিলোমিটার পথ অতিবাহিত করত। ইতিহাসের পরের যুগে মানুষ পণ্য বিনিময়ের জন্য যেত অন্য জায়গায়। তলোয়ার, ছুরি ও ধাতুর শক্ত পাত্রের বদলে শিকারীরা দিত জন্তু-জানোয়ারের চামড়া, যারা চাষ করত তারা কাপড়, সুন্দর ব্রেসলেট ও গলার হারের বদলে দিত খাদ্যশস্য।
গোটা একটা উপজাতির পক্ষে এ পণ্য বিনিময়ে যোগ দেওয়া সম্ভব নয়। বিশেষ লোকে যেত এক দেশ থেকে অন্য দেশে ব্যবসার জন্য। এরা ছিল সওদাগর। আগের দিনের সওদাগররা ছিল সাহসী উদ্যোগী লোক; প্রকৃতির সঙ্গে লড়াই চালাতে হতো তাদের, বুনো জন্তুর হাত থেকে আত্মরক্ষা করতে হতো; সম্পদলোভী হামলাদারদের বিরুদ্ধেও লড়াই চালাতে হতো।
আজকালকার মানচিত্রে লাইনের একটা ঘন বুনোট চোখে পড়ে—দ্রাঘিমা ও অক্ষাংশ রেখা। গোলকে যেকোনো বিন্দুর অবস্থান ঠিক করতে আমাদের সাহায্য করে লাইনগুলো। ডিগ্রিতে নির্দিষ্ট লাইনগুলো বের করা হয় আঠারো শ বছরেরও আগে। গ্রিসের প্রাচীন জ্যোতির্বিজ্ঞানী টলেমি ভূগোল বিষয়ে সব খবর সংগ্রহ করে পৃথিবীর একটি মানচিত্র তৈরি করেন—গ্রিক এবং তাদের প্রতিবেশীরা পৃথিবীকে যা ভাবত, সেই পৃথিবীর মানচিত্র।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।