নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম ধাপের নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে উত্তরের জেলা গাইবান্ধাসহ বিভিন্ন জেলায় দুর্নীতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ পরীক্ষায় ‘ইলেকট্রনিক ডিভাইস’ ব্যবহার ও ‘পরীক্ষার হল চুক্তি’ নেওয়াসহ নানা অসদুপায় অবলম্বন করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন চাকরিপ্রার্থীরা।
বিষয়টি নিয়ে উদবিগ্ন হয়ে কয়েকজন পরীক্ষার্থী জুমবাংলাকে ফোন করেছেন। তাঁদের আশঙ্কা, আগামী শুক্রবার অনুষ্ঠিতব্য নিয়োগ পরীক্ষা ঘিরে নানা দুর্নীতিবাজ চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব চক্র টাকার বিনিময়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের কক্ষ চুক্তি নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ লক্ষ্যে তারা যেসব কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। চক্রটি পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস ও এর সমাধানের নীলনকশাও আঁকছে। এ লক্ষ্যে তারা প্রশ্নপত্র সমাধানের জন্য বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সফল ‘এক্সাম-এক্সপার্টদের’ সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করার চেষ্টা করছে।
রুবেল মিয়া নামের একজন চাকরিপ্রার্থী জুমবাংলাকে বলেন, তাঁরা সারা বছর এ নিয়োগ পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। চাকরির জন্য দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। এখন দেখছেন, অনেকে লাখ লাখ টাকার বিনিময়ে ‘ডিভাইস’ ও ‘হল কন্ট্রাক্ট’ পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করছে। এতে তাঁদের মতো সাধারণ চাকরিপ্রার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন। তাঁদের চাওয়া, প্রশাসন দুর্নীতিবাজ চক্রটির বিষয়ে সতর্ক হয়ে তাদের নীলনকশা নস্যাৎ করে দিক।
নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে– এমন একটি কেন্দ্রের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জুমবাংলার সঙ্গে কথা বলেছেন।
তিনি জানান, একটি চক্র তাঁকেও অনৈতিক প্রস্তাব দিয়েছে। চক্রটি জানিয়েছে, তারা ডিভাইসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবে। তাদের লোকদের যেন পরীক্ষার হলে সুবিধা করে দেওয়া হয়, এমন প্রস্তাব আসছে। অবশ্য তিনি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু কজন এভাবে প্রত্যাখ্যান করবেন– সে আশঙ্কা থেকেই যায়।
একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে জুমবাংলাকে ফোন করেছেন পরপর কয়েকবার বিসিএসসহ বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ‘এক্সাম এক্সপার্ট’ এক তরুণ। তিনি একটি সরকারি চাকরিতেও কর্মরত আছেন। সঙ্গত কারণেই তিনিও নাম প্রকাশ করতে চাননি।
ওই তরুণ বলেন, চক্রের এক সদস্য জানিয়েছেন, তারা পরীক্ষা চলাকালে ডিভাইস ব্যবহার করে প্রশ্নপত্র ফাঁস করবেন। সেসব প্রশ্ন সমাধান করার জন্য এক্সাম এক্সপার্ট কিছু লোক দরকার। এই কাজ করে দেওয়ার বিনিময়ে তাঁকে দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানান ওই তরুণ। তবে তিনিও প্রত্যাখ্যান করেছেন।
গাইবান্ধায় বিভিন্ন সময় চাকরির পরীক্ষায় এমন অনিয়ম আগেও হয়েছে। প্রশাসনের কাছে কিছু কিছু ধরাও পড়েছে। এসব নিয়ে প্রশাসন সংবাদ সম্মেলনও করেছে। তবুও চক্রটি থামছে না।
এমন চক্রের তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে উত্তরের জেলা রংপুর, নীলফামারী ও কুড়িগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও।
চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, সামনের নির্বাচন নিয়ে প্রশাসন বেশ ব্যস্ত– এই সুযোগ নিতে চায় দুর্নীতিবাজ চক্রটি। তাই তাঁরা চান, প্রশাসন বিষয়টি নিয়ে সতর্ক পদক্ষেপ নিক। কঠোর নজরদারির পাশাপাশি দরকার হলে প্রযুক্তি ব্যবহার করে পরীক্ষার দিন কেন্দ্রের আশপাশে মুঠোফোনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার সীমিত করে দেওয়া হোক। প্রশাসনের সতর্কতায় মেধাবীরা শিক্ষকতার মতো পেশায় আসার সুযোগ পেলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। চাকরিপ্রার্থীরাও তাঁদের কষ্টের ফল পাবেন বলে বিশ্বাস।
রোকেয়া আক্তার নামের একজন চাকরিপ্রার্থী বলেন, শুধু প্রশাসন সক্রিয় হলেই দুর্নীতিবাজ অনেক চক্রই অসুবিধায় পড়বে। মেধাবীরা কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবেন। তাঁরা নিরুদবেগে পরীক্ষা দিতে পারবেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।