জুমবাংলা ডেস্ক : প্রান্তিক নৃগোষ্ঠী ও চরাঞ্চলের শিশুরা গুণগত প্রাথমিক শিক্ষালাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং গুণগত প্রাথমিক শিক্ষায় পিছিয়ে পড়ছে বা ঝরে পড়ছে। দরিদ্রপ্রবণ প্রান্তিক অঞ্চলে গুণগত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নে আরও বিশেষ সহায়তা থাকার কথা থাকলেও সেটি হচ্ছে না। তাই প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও পলিসি বাস্তবায়নকারীদের প্রান্তিক নৃগোষ্ঠী ও দুর্গম চর এলাকার শিশুদের গুণগত শিক্ষা বিষয়ে দ্রুত দৃষ্টি দেওয়া ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ঢাকার সেগুনবাগিচায় এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ইরাব) সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের অ্যাডভোকেসি কর্মশালায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। কর্মশালার আয়োজন করে জাপানভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা শাপলা নীড়। সহযোগিতায় ছিল গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পাপড়ি। কর্মশালায় শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর তোমোকো উচিয়ামা, ইরাব সভাপতি শরীফুল আলম সুমন, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রান্তিক এলাকার প্রাথমিক শিক্ষাবিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু, বিশেষ করে চরাঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট ও প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়িত না হওয়া ও নিজস্ব কমিউনিটির শিক্ষক না থাকার বিষয়গুলো বিভিন্ন পরিসংখ্যান ও তথ্যভিত্তিক উপস্থাপনার মাধ্যমে আলোকপাত করা হয়। এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে সফলতা পেতে হলে প্রান্তিক নৃগোষ্ঠী ও দুর্গম চরাঞ্চলের শিশুদের পেছনে রাখার সুযোগ নেই এবং শিক্ষা অধিকারে সম সুযোগ ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সুযোগ দিতে হবে বলে সভায় আলোচনা করা হয়।
কর্মশালায় পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর বিশেষ করে সাঁওতাল, তুরি, মুশোহর নৃগোষ্ঠী এবং নরসিংদীর প্রান্তিক চরাঞ্চলের প্রাথমিক শিক্ষার তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়।
এতে গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের পক্ষ থেকে বলা হয়- প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর বিশেষ করে সাঁওতাল, তুরি, মুশোহর নৃগোষ্ঠীর শিশুদের জন্য দিনাজপুর সদর উপজেলার ১৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০০ শিশুর জন্য মাতৃভাষায় শিক্ষালাভের সুযোগ নেই। শুধু ওঁরাও শিশুদের জন্য মাতৃভাষায় বইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও কোনো আদিবাসী শিক্ষক নেই।
এ ছাড়া, বর্তমানে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পাঠদানের কারণে চাকরির জন্য বিভিন্ন দক্ষতার প্রয়োজন হবে। এদিক দিয়ে আদিবাসীরা অনেক পিছিয়ে। দ্বিতীয় প্রধান ভাষা হিসেবে তারা বাংলা পড়লেও এটি তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। পড়া বুঝে নিতে তাদের কষ্ট হয়। কিন্তু এসব জায়গায় শিক্ষকের সংকট রয়েছে। আবার বাঙালি শিক্ষকের সব পড়া তারা বুঝে না, নিজেদের ভাষা রপ্ত করার জন্য আদিবাসী কোনো শিক্ষকও নেই। যে কারণে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও হারানোর পথে।
পাপড়ির পক্ষ থেকে বলা হয়, নরসিংদীর প্রান্তিক চরাঞ্চলে শিক্ষক স্বল্পতার কারণে ৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র ৪০ শতাংশ শিক্ষক রয়েছেন। তাই নিয়মিত ক্লাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে ২ হাজার ৫৯৩ জন শিশু। শিক্ষক স্বল্পতা পূরণে চর এলাকার যারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেছেন তাদের এখানে শিক্ষক হিসেবে নিয়ে আসা যায়। আবার করোনাও একটি বড় ক্ষতি করেছে। এসব এলাকার বাবা-মায়ের অসচেতনতাও শিশুদের ড্রপ আউটের অন্যতম কারণ। এই এলাকার বিশেষ করে রায়পুরার মানুষ হানাহানিতে অভ্যস্ত হওয়ায় বাচ্চারা স্কুলে কম যায়। সহায়ক সংস্থা গ্রাম বিকাশ কেন্দ্র ও পাপড়ির সহায়তায় শাপলা নীড় বর্তমানে দিনাজপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তিক নৃগোষ্ঠীর শিশু ও নরসিংদীর রায়পুরার দুর্গম চাঁনপুর চরাঞ্চলের প্রান্তিক শিশুদের শিক্ষা অধিকার বিষয়ে, অধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই ইস্যুতে বিভিন্ন অংশীজনদের যৌথ প্রয়াসে সমন্বিত শিক্ষা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বর্তমানে প্রকল্পটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিজিবি মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন মেজর জেনারেল সিদ্দিকী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।