মো: কামরুল হাসান সোহেল : প্রাথমিক শিক্ষা সাধারণত আনুষ্ঠানিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম পর্যায়। সাধারণত কিন্ডারগার্টেনের পরে এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের আগে এই বিদ্যালয়ের অবস্থান। যেহেতু আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ধরা হয়, তাই পরে একটি শিশুকে শিক্ষার্থী হিসেবে গড়ে তোলার পরে উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শন, সুন্দর ভবিষ্যত নির্মাণের বীজ এখানেই বর্ণিত হয়। শুধু বীজ বপনের মধ্য দিয়েই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শেষ হয় না। উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শন ও সুন্দর ভবিষ্যত নির্মানের ধাপ সমূহ তৈরী ও পরিচর্যাও করা হয় এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে শিক্ষার্থী ছাড়াও যারা প্রধান ভূমিকা পালন করেন, তারা হলেন:- (১) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক (২) প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিভাবক (৩) শিক্ষা কর্মকর্তা।
একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকই তার শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে প্রধান ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষকরাই পারেন কোমলমতি শিশুদের মানবসম্পদে রূপান্তর করে দেশকে উন্নত করতে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের জীবন মানের সমূহ উন্নয়ন ঘটাতে। বর্তমানে বাংলাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি। এগুলোতে শিক্ষক আছেন ৩লাখ ৮৪ হাজার ৬৯৭ জন (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের বরাতে ইত্তেফাক অন ডেস্ক)। এই শিক্ষকগন অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন তাদের শিক্ষার্থীদের জীবন মান উন্নয়নে। প্রত্যেকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকগন যে সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে তাদের শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে ভূমিকা রাখছেন তার মধ্যে অন্যতম হলো শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞান দান ও শিক্ষাদান।
পড়া লেখার পাশাপাশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ নানাবিধ সহশিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন যেমন:-
নানা রকম খেলাধুলা শেখানো এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে ও বিভিন্ন পর্যায়ে প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
স্বাস্থ্যবিধি শেখানো এবং তা মেনে চলার অনুশীলন করা।
নাচ, গান, কবিতা আবৃতি শেখানো ও তার প্রতিযোগিতার আয়োজনের মাধ্যমে মননশীলতার উন্নয়ন করা।
হামদ নাত, গজল, কোরয়ান তেলাওয়াত, গীতা পাঠ, বিভিন্ন ধর্মী -ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষণ প্রদান।
বিজ্ঞানের বিভিন্ন পরীক্ষণ ও পর্যবেক্ষণে শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা।
সুন্দর ব্যবহার ও পরোপকারী মনোভাব গঠনে সহায়তা করা। দেশের প্রচলিত আইন সম্পর্কে ধারনা দেয়া এবং তা মেনে চলার সুফল বর্ণনা করা। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়; ট্রাফিক আইন মেনে কিভাবে রাস্তায় চলাচল করা যান যায়।
বিদ্যালয় ব্যতিত অন্যান্য সময়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজ খবর রাখা।
মা-সমাবেশ ও অভিভাবক সমাবেশের আয়োজন করা।
শিক্ষার্থীদের ঝড়ে পা পরা রোধে হোম ভিজি-ভিজিট সহ নানা কার্যক্রম পরিচালনা
উপরে উল্লেখিত কার্যক্রম ছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে শিক্ষক নানা রকম ভূমিকা পালন করেন।
উন্নত জীবনের স্বপ্ন দর্শনে আরো যাদের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন শিক্ষা অফিসার এবং অভিভাবক।
পরিবারকে ধরা হয় প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। অভিভাবকই পারেন বিদ্যালয়ে অর্জিত শিখাকে ব্যক্তি জীবনে প্রয়োগের ক্ষেত্র তৈরি করে দিতে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। শিক্ষকদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে শিক্ষা কার্যক্রমকে প্রাণবন্ত করেন অভিভাবক।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে আরেকটি অংশীদার শিক্ষা অফিসার। শিক্ষা অফিসারগণ শিক্ষার্থীদের মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত গল্পে শিক্ষকদের বিভিন্ন ট্রেনিং এর ব্যবস্থা করে থাকেন। নিয়মিত বিদ্যালয় পরিদর্শনের মাধ্যমে শিক্ষকদের সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন হয়। এতে করে বিদ্যালয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোন চাহিদা থাকলে তা পূরণের কার্যক্রম গ্রহণ করতে পারেন।
এছাড়াও শিক্ষা অফিসারগণ সহ শিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে স্কুল, ইউনিয়ন,উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে নানা রকম খেলাধুলা, বিজ্ঞান মেলা, উন্নয়ন মেলা সহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণে বদ্ধপরিকর বাংলাদেশের প্রাথমিক শিক্ষার সাথে জড়িত শিক্ষা অফিসারগণ।
প্রাথমিক বিদ্যালয় শিশুদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের ভূমিকা খুবই সুস্পষ্ট। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেই কেবল স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে উঠবে।
মো: কামরুল হাসান সোহেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, নবাবগঞ্জ, ঢাকা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।