জুমবাংলা ডেস্ক : ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের প্রায় ২০ জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। গত সোমবারও প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। এসব এলাকায় লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকেই খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ তৎপরতা থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন দুর্গতরা।
গেল সোমবার বন্যার পানিতে ডুবে ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে কুগিগ্রামে ৪ ও জামালপুরে ৩ শিশু রয়েছে। কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ফসলি জমি তলিয়ে গেছে, পুকুরের মাছ ভেসে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বিস্তারিত আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর
পানিতে ডুবে ৭ শিশুর মৃত্যু : কুড়িগ্রাম ও জামালপুরে বন্যার পানিতে ডুবে ৭ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা. আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন, উলিপুর উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নে হাবিবুল্লাহ নামে ৬ বছরের শিশু ডুবে মারা গেছে। ফুলবাড়ী ও চিলমারী উপজেলায় মারা গেছে আরও তিন শিশু। দুর্গম এলাকা হওয়ায় গতকাল পর্যন্ত ওই তিন শিশুর নাম-পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার চর কালিকাপুর গ্রামের জহুরুল হকের ছেলে নাইম (৭), মনির হোসেনের ছেলে রিয়ামুল হক (২) পানিতে ডুবে মারা গেছে। এর আগে রবিবার বিকেলে মাদারগঞ্জের ঝাড়কাটা এলাকার রাহেজ আলীর শিশুকন্যা সাদিয়া (৭) বাড়ির পাশে ডুবে নিখোঁজ হলে গতকাল দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করে স্থানীরা।
বন্যা পরিস্থিতির অবনতি : এরইমধ্যে কুড়িগ্রামে গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ধরলা নদীর পানি ব্রিজ পয়েন্টে ১১২ সেন্টিমিটার, চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১০৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকালে কুড়িগ্রাম-নাগেশ^রী মহাসড়ক দিয়ে হাঁটুপানি প্রবাহিত হয়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে ভারী যান চলাচল।
জামালপুরের যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, দশানী, ঝিনাই, জিঞ্জিরামসহ অন্যান্য নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ৭ উপজেলার ৬৮ ইউনিয়নের মধ্যে ৪০টি ইউনিয়ন বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। নেত্রকোনায় উব্ধাখালী ও কংস নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৮ উপজেলার নিম্নাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। রংপুরে সব পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদীতীরবর্তী ও তীরাঞ্চল ছাড়াও মহানগরীর বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে। দিনাজপুর সদর, বিরল, খানসামা ও চিরিরবন্দরের বেশ কয়েকটি এলাকার কয়েক শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নীলফামারীতে তিস্তার পানি বিপদসীমায় বইছে। গতকাল সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। হবিগঞ্জে কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী ওই উপজেলার দিঘলবাগ ইউনিয়নের ৯০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ৪০ শতাংশ ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা আউশকান্দি ইউনিয়নের ২০ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সুনামগঞ্জে শহরের সঙ্গে তাহিরপুর উপজেলা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গতকাল বিকাল ৪টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি ষোলঘর পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মৌলভীবাজার মনু নদীর পানি চাঁদনীঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৮৩ ও শেরপুর কুশিয়ারা পয়েন্টে ৫২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শেরপুর পয়েন্ট এলাকার কুশিয়ারা নদীর বাঁধে ভাঙন দেখা দিয়েছে। খলিলপুর ইউনিয়নের হামরকোনা এলাকায় প্রায় ৫০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে গিয়ে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আখাউড়া ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ি ঢলে আখাউড়া উপজেলার ২৩টি গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ঢাকা-আগরতলা সড়কের ওপর দিয়ে উজানের পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি ভেঙে দুই দেশের যাত্রীরা পারাপার হচ্ছে।
কয়েক হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ : জামালপুরে পানি ওঠায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ৮৮টি প্রাথমিক, ৩৬টি মাধ্যমিক, ১৮টি মাদ্রাসা ও ৩টি কলেজসহ মোট ১৪৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কুড়িগ্রামে প্রায় ৪০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। নেত্রকোনায় কলমাকান্দাসহ মোট ১৭২ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ১৪৮টি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ক্ষয়ক্ষতি : শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার গজারমারী সেতুর পূর্ব পাশে বাগেরভিটা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সংযোগ সড়ক প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পানিতে ডুবে আছে। ফলে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি পানিতে ভাসছে। নেত্রকোনায় ৬০ হাজার ১৩৯টির মধ্যে ৩ হাজার ৫৩টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যার বাজারমূল্য ১৩ কোটি টাকার বেশি। মাছ ভেসে যাওয়ায় চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। জামালপুরে মোট ৩ হাজার ৪৬২ হেক্টর জমির ফসল বন্যার পানিতে সম্পূর্ণ তলিয়ে গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।