জিন মানবদেহের বংশগতির বাহক। এটি ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড বা ডিএনএর সমন্বয়ে গঠিত। আমাদের কোষের নিউক্লিয়াসে থাকে এই ডিএনএ। জিন বাবা-মা থেকে সন্তানদের মাঝে প্রবাহিত হয় এবং পরে বসবাসের পরম্পরায় এ ধারা অক্ষুণ্ণ রাখে। মানব ইতিহাসের শুরু থেকে এভাবেই চলে আসছে।
মানুষের নিজস্ব গতি, প্রকৃতি, দৈহিক গঠন, বেড়ে ওঠা, উচ্চতা, চোখের রং, এমনকি রোগ-বালাইসহ যাবতীয় তথ্য বহনকারী উপাদান হিসাবে কাজ করে এই জিন। তবে মানবদেহে জিন প্রবাহের এ পদ্ধতি কিন্তু ১০০ ভাগ সঠিক নিয়ম অনুসরণ করে না। পদ্ধতিগত এ ত্রুটিকে ডিএনএ ভ্যারিয়েশন বা মিউটেশন বলা হয়। বাংলায় বলা হয় ডিএনএ পরিবর্তন বা পরিব্যক্তি।
ডিএনএ মিউটেশনের হার ০.০১ শতাংশ। বাকি ৯৯.৯৯ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকে। একজন মানুষের সঙ্গে অন্যজনের ডিএনএর ০.০১ শতাংশ মিউটেশন বা পরিবর্তনের জন্যই এ জগতের প্রতিটি মানুষ আলাদা। এ কারণেই প্রত্যেকে তার একান্ত নিজস্ব বৈশিষ্ট্য বহন করে। তা রোগের ধরন ও গতি-প্রকৃতিসহ সব ক্ষেত্রেই সত্যি। জিনের সমন্বয়ে কোনো ব্যক্তির সঠিক ওষুধ নিরূপণের প্রক্রিয়াকে প্রিসিশন মেডিসিন বা পার্সোনালাইজড মেডিসিন বলা হয়। অর্থাৎ নির্ভুলভাবে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে চিকিৎসা করার অভিনব পদ্ধতিই প্রিসিশন মেডিসিন।
এর মূল লক্ষ্য, বর্তমানে প্রচলিত প্রথাগত ওষুধের পরিবর্তে একজন ব্যক্তির নিজস্ব জেনেটিক মেকআপ, মলিকুলার প্রোফাইল এবং তার ব্যক্তিগত তথ্য বিবেচনা করে রোগ নির্ণয় এবং সে অনুসারে চিকিৎসা দেওয়া। বর্তমানে ‘সবার জন্য একই নিয়ম’ পদ্ধতিটি প্রচলিত, যা সাধারণত ওষুদের নির্দেশিকা ও অন্যান্য রোগীর চিকিৎসাতত্ত্বের ভিত্তিতে পরিচালিত। রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে একজন মানুষের নিজস্ব জেনেটিকস, বিপাক এবং অন্যান্য পার্থক্যের কারণে এ ট্রায়াল অ্যান্ড এরর অ্যাপ্রোচ সবার জন্য কার্যকর নাও হতে পারে।
প্রিসিশন মেডিসিনের মাধ্যমে একজন রোগী নির্ভুল (প্রিসাইজ) ওষুধের সুপারিশ, সঠিক মাত্রা, অপ্রয়োজনীয় ওষুধ পরিহার, চিকিৎসা ব্যয় কমানোসহ পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার ঝুঁকি এড়িয়ে তার নিজস্ব চিকিৎসা নির্দেশিকা পেতে পারে। এ কারণেই এই পদ্ধতিকে প্রিসিশন বা পার্সোনালাইজড মেডিসিন বলা হয়।
বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশে প্রিসিশন মেডিসিন পদ্ধতি দারুণ সফল এবং অত্যন্ত দ্রুত প্রসার লাভ করছে। বিশেষ করে জটিল রোগগুলো, যেমন নিউরো ডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার, অটিজম, অ্যাংজাইটি, ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো রোগগুলোর প্রাথমিক শনাক্তকরণ এবং নির্দেশনায় এই পদ্ধতির ভূমিকা প্রশংসনীয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।