মো: ফয়সাল শামীম : আল্লাহতায়ালা মানবজাতির হেদায়েতের জন্য যুগে যুগে রাসুল পাঠিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশ্ব মানবগোষ্ঠীর জন্য সর্বশেষ রাসুল। তিনি সব জনগোষ্ঠীর জন্য প্রেরিত নবী। আরব-অনারব, সাদা-কালো সবার জন্য তিনি নবী ও রাসুল। তিনি সব নবী ও রাসুলের নেতা। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ঈমানদারদের ওপর অনুগ্রহ করেছেন যে, তাদের মাঝে তাদের নিজেদের মধ্য থেকে নবী পাঠিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য তার আয়াতসমূহ পাঠ করেন। তাদের পরিশোধন করেন এবং তাদের কিতাব ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। বস্তুত তারা ছিল পূর্ব থেকেই পথভ্রষ্ট।’ সুরা আলে ইমরান : ১৬৪
রাসুলের সম্মান ও মর্যাদা : নবী করিম (সা.)-এর সম্মান ও মর্যাদা আল্লাহতায়ালা নির্ধারণ করেছেন। তাই ইচ্ছা করে তার মর্যাদা কেউ বাড়াতে কিংবা কমাতে পারবে না। যুগে যুগে মুশরিকরা নবীকে নিয়ে যতই কটূক্তি এবং অবমাননা করেছে, আল্লাহ ততই তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি আপনার আলোচনাকে সমুচ্চ করেছি।’ সুরা আল ইনশিরাহ : ৪
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তার নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়াজ্জিন ঘোষণা দিচ্ছেন, ‘আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল।’
উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণ : নবী করিম (সা.) ছিলেন উত্তম চরিত্র ও মাধুর্যপূর্ণ আচরণের অধিকারী। এ বিষয়ে স্বয়ং আল্লাহ প্রশংসা করে বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী।’ সুরা আল কালাম : ৪
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয় আমি মহৎ চারিত্রিক গুণাবলির পূর্ণতা দান করার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়েছি।’বায়হাকি
বিশ্ববাসীর জন্য রহমত : সৃষ্টিকর্তা দয়াময় আল্লাহ নবী করিম (সা.)-কে শুধু মানবমণ্ডলী নয়; তামাম সৃষ্টিকুলের জন্য রহমত হিসেবে প্রেরণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ সুরা আম্বিয়া : ১০৭
তিনি শেষ নবী : নবুয়তের ধারাবাহিকতার শেষপ্রান্ত তিনি হচ্ছেন নবী পরম্পরা পরিসমাপ্তকারী- শেষ নবী। তারপর আর কোনো নবী আসবেন না। কোরআন মাজিদে আল্লাহ ঘোষণা করেন, ‘মুহাম্মদ (সা.) তোমাদের কোনো ব্যক্তির পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসুল এবং শেষ নবী। আল্লাহ সব বিষয়ে জ্ঞাত।’ সুরা আল আহজাব : ৪০
শ্রেষ্ঠত্ব : যুগে যুগে যেসব নবী-রাসুল আগমন করেছেন তাদের ওপর মুহাম্মদ (সা.)-কে শ্রেষ্ঠত্ব দেওয়া হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘ছয়টি দিক থেকে সব নবীর ওপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। আমাকে জাওয়ামিউল কালিম তথা ব্যাপক অর্থবোধক সংক্ষিপ্ত বাক্য বলার যোগ্যতা দেওয়া হয়েছে, আমাকে ভীতি (শত্রুর অন্তরে আমার ব্যাপারে ভয়ের সঞ্চার করা) দ্বারা সাহায্য করা হয়েছে, গণিমতের মাল (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, আমার জন্য সব ভূমিকে পবিত্র ও সিজদার উপযুক্ত করা হয়েছে, আমি সব মানুষের তরে প্রেরিত হয়েছি এবং আমার মাধ্যমে নবুয়ত পরম্পরা শেষ করা হয়েছে।’ সহিহ মুসলিম : ১১৯৫
ইমানের দাবি : যে ব্যক্তির মধ্যে রাসুলের ভালোবাসা থাকবে না, সে কোনো দিন মুমিন হতে পারবে না। এমনকি নিজের জীবন থেকেও তার প্রতি বেশি ভালোবাসা থাকতে হবে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘নবী মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের অপেক্ষা ঘনিষ্ঠতর।’ সুরা আল আহজাব : ৬
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার সন্তান, পিতা ও সমগ্র মানুষ হতে প্রিয়তম হবো।’ অর্থাৎ সবার চেয়ে তাকে বেশি ভালোবাসতে হবে। সহিহ বোখারি
শাফায়াত : কেয়ামতের কঠিন মুসিবতের দিনে আল্লাহর অনুমতিক্রমে নবী করিম (সা.) গোনাহগার উম্মতের জন্য শাফায়াত করবেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত হাদিসে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি সব আদম সন্তানের নেতা। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। সেদিন আমার হাতে প্রশংসার ঝাণ্ডা থাকবে তাতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই। আদম থেকে নিয়ে যত নবী-রাসুল আছেন সবাই আমার ঝাণ্ডার নিচে থাকবেন। আমি হচ্ছি প্রথম সুপারিশকারী এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম কবুল করা হবে। এতে কোনো গর্ব-অহঙ্কার নেই।’ ইবনে মাজাহ
সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী : তিনিই সর্বপ্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী ব্যক্তি হবেন। এ বিষয়ে হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জান্নাতের দরজায় আমিই সর্বপ্রথম করাঘাত করব, তখন খাজেন (প্রহরী) জিজ্ঞেস করবে, কে আপনি? আমি বলব, মুহাম্মদ। সে বলবে, আপনার জন্যই খোলার ব্যাপারে নির্দেশিত হয়েছি, আপনার আগে কারও জন্য খুলব না।’ সহিহ মুসলিম
তার আদর্শই সর্বোত্তম ও গ্রহণযোগ্য : যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি, জান্নাতের আশা এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রত্যাশা করেন তিনি তাদের সবার জন্য উত্তম আদর্শ। কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।’ সুরা আল আহজাব : ২১
সবক্ষেত্রে তার অনুসরণ ইমানদার হওয়ার শর্ত : তিনি যেসব বিষয়ে আদেশ করেছেন তা পালন করা এবং যা নিষেধ করেছেন তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা তা ইমানদার হওয়ার শর্ত। কোরআন মাজিদে আল্লাহ বলেন, ‘রাসুল (সা.) তোমাদের যা দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ সুরা হাশর : ৭
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ পরিপূর্ণ মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রবৃত্তি আমার অনুসরণ করে।’
দরুদ ও সালাম : আল্লাহতায়ালা তার মর্যাদাকে সমুন্নত করার জন্য দরুদ ও সালাম পাঠের নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহপাক বলেন, ‘আল্লাহ ও তার ফেরেশতাগণ নবীর প্রতি রহমত প্রেরণ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া করো এবং তার প্রতি সালাম প্রেরণ করো।’ সুরা আল আহজাব : ৫৬
হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তাকে দশবার দরুদ পাঠ করেন, দশটি গোনাহ মুছে দেবেন এবং দশটি মর্যাদায় ভূষিত করবেন।’ সুনানে নাসাঈ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।