জুমবাংলা ডেস্ক : মেডিক্যাল কলেজের প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের গ্রেফতার হওয়ায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষিকা মাকসুদা মালা বরখাস্ত হয়েছেন। তিনি নিজের মেয়ে ইকরা বিনতে বাশারকে ফাঁস হওয়া প্রশ্নে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সূত্র। জানা গেছে, সাত থেকে দশজন শিক্ষার্থীকে ফাঁস প্রশ্নে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত কথিত মানুষ গড়ার এ কারিগর।
মাকসুদা আক্তার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতি শাখার বাংলা মাধ্যমের সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী শিক্ষক ও গভর্নিং বডির শিক্ষক প্রতিনিধি ছিলেন। গতকাল মঙ্গলবার তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার ও মঙ্গলবার মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত আরো সাতজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে সিআইডি। তাদের মধ্যে শিক্ষিকা মাকসুদা মালা ও বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত ছয়জন চিকিৎসক রয়েছেন।
সিআইডি জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে আটটি মুঠোফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেক বই, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন, ঢাকার মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক মাকসুদা আক্তার ওরফে মালা (৫২), চিকিৎসক কে এম বশিরুল হক (৪৮), অনিমেষ কুমার কুণ্ডু (৩৩), জাকিয়া ফারইভা ওরফে ইভানা (৩৫), সাবরিনা নুসরাত রেজা ওরফে টুসী (২৫), জাকারিয়া আশরাফ (২৬) ও মৈত্রী সাহা (২৭)। গত ৩০ জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে মোট ২৪ জনকে গ্রেফতার করা হলো।
সিআইডির গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান বলেন, এর আগে গ্রেফতার হওয়া ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ ও আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত চক্রের অন্যান্য সদস্য ও ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়া অসংখ্য শিক্ষার্থীর নাম পাওয়া যায়। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের মূলহোতা জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া ওরফে মুন্নুর কাছে থেকে উদ্ধার হওয়া গোপন ডায়েরি থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা চক্রের সদস্যদের সন্ধান পাওয়া যায়। ওই সব তথ্যের ভিত্তিতে বুধবার ও মঙ্গলবার রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের মিরপুর মডেল থানায় হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ পাবলিক পরীক্ষা আইনের মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে।
সিআইডির সূত্র জানায়, শিক্ষক মাকসুদা ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে নিজের মেয়ে ইকরা বিনতে বাশারসহ আরও সাতজন শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করিয়েছেন। গ্রেফতার চিকিৎসক কে এম বশিরুল হক রাজধানীর থ্রি ডক্টরস কোচিং সেন্টারের পরিচালক। তিনি দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সদস্য। চিকিৎসক অনিমেষ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা কর্মকর্তা। তিনি ২০১৫ খ্রিষ্টাব্দে ১০ শিক্ষার্থীকে ফাঁস করা প্রশ্নপত্র দিয়েছেন। তাদের মধ্যে আটজন বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। জাকিয়া ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তিনি ২০০৬-০৭ সেশনের মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় মেধাতালিকায় ৬০তম স্থান অর্জন করেন।
তিনি তখন মেডিক্যাল প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের অন্যতম মূলহোতা ময়েজ উদ্দিন আহমেদ প্রধানের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র পেয়েছিলেন। গ্রেফতার সাবরিনা রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। চিকিৎসক অনিমেষের ফাঁস করা প্রশ্নপত্র পড়ে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। গ্রেফতার জাকারিয়া ও মৈত্রী সাহা ২০১৫-১৬ সেশনের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী। তারাও অনিমেষের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র পেয়ে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।
এদিকে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, শিক্ষক মালা তার মেয়ে ইকরা বিনতে বাশারসহ ১০ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেডিক্যালে ভর্তি করিয়েছেন। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।