এ্যান্টনি দাস অপু, যশোর : দেশের একমাত্র ফুলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা গদখালি ফুলের বাগান। সাড়ে ৬শত হেক্টর জমিতে দেশের মোট ৬০ শতাংশ ফুলের চাহিদা পূরণ করে এই গদখালির ফুল চাষীরা। ঝিকরগাছার গদখালি অঞ্চলের প্রায় ৮০ শতাংশ মানুষের জীবিকা ফুল চাষ ও দেশের বিভিন্নপ্রান্তে ফুল সরবরাহ করা।
সারা বছর বিভিন্ন জাতের ফুল চাষ করে গদখালির ফুল চাষীরা এবং দেশের বিভিন্ন উৎসব আয়োজন ঘিরে পর্যাপ্ত ফুল বিক্রির পাশাপাশি অধিক লাভের আশায় স্বপ্ন বুনতে থাকে চাষী ও বাজার ব্যবসায়ীরা। তবে বর্তমান সময়ে এই ফুল চাষীদের জীবিকা নির্বাহের পথে কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্লাস্টিকের ফুল। ফলে লাভ তো দূরের কথা ফুল চাষ বিলিন হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কিত চাষীরা।
সরজমিনে যশোরের ঝিকরগাছার গদখালী পানিসারা গ্রামে গেলে চিন্তাগ্রস্থ এক বয়োবৃদ্ধ ফুল চাষী আশরাফ আলীর সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, আমি গত ২০-২৫ বছর ধরে নিজের দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ করে আসছি। আগের জামানায় যে পরিমান ফুল চাষ হতো আর যে পরিমান বিক্রি হতো তা এখন আমাদের কাছে স্বপ্নের মতো মনে হয়। বর্তমানে দেশ উন্নত এবং আধুনিক সে তুলনায় হিসাব করলে এই যুগে এই ফুল চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাবার কথা, বাজার দর, উৎপাদনের হারও বৃদ্ধি পাওয়ার কথা। কিন্তু তা-না হয়ে উল্টো চাষ এবং উৎপাদন বিলুপ্তির পথে হাটছে। এর কারণ একমাত্র কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দেশের বাহিরে থেকে চায়না প্লাস্টিকের ফুল আমদানি করে। আর এই আমদানীকৃত ফুল দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি হয়। ফলে আমাদের দেশীয় ফুলের ব্যবহার দিন দিন কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দুদিন পর ফুল চাষই বন্ধ হয়ে যাবে।
যশোর শহরের দড়াটানা মোড় সংলগ্ন ফুলের দোকান গুলো ঘুরে দেখা যায়, নতুন বছরের আসন্ন বিভিন্ন উৎসব বিবাহ নিয়ে ফুল বিক্রির আশায় স্বপ্ন দেখছেন বিক্রেতারা। তবে কি পরিমাণ এই আসল ফুল বিক্রি হবে তা নিয়ে চিন্তিত তারা। সিরাজ নামে এক দোকানি জানান, নতুন বছর এবং বিবাহ, প্রতিষ্ঠা বার্ষীকি নিয়ে শহর জুড়ে অনেক পোগ্রাম চলছে। তবুও আজকাল সাধারণ জনগণ এক ফুল বার বার ব্যবহার করার লক্ষ্যে প্লাস্টিকের ফুলের দিকে ঝুকছে। ফলে কি পরিমাণ ফুল বিক্রি হবে বা আদৌ বিক্রি হবে কি’না পঁচবে তা বলা মুশকিল।
নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক এক প্লাস্টিক ফুল বিক্রেতা বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমাদের পুঁজি কম, কাঁচা ফুল বিক্রি না হলে পঁচে যায়। আর প্লাস্টিকের ফুল পঁচে না, পানিও দেওয়া লাগে না। আবার ক্রেতাও ভালো পাওয়া যায় তাই প্লাস্টিকের ফুল বিক্রি করি।
তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু প্লাস্টিকের ফুল দেশেই তৈরি হয় আর কিছু বাইরে থেকে আনতে হয়। যেমন চায়না প্লাস্টিকের ফুল। আসলে এটা সত্য যে প্লাস্টিকের ফুলের কারণে আমাদের যশোর অঞ্চলের ফুল চাষীদের দিন দিন ফুল চাষে আগ্রহ কমে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশে ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, প্লাস্টিকের ফুল দেশীয় ফুল চাষীদের জন্য কাল হয়ে দাড়িয়েছে। কিছু অসাধু লোক বাহিরে থেকে এই ফুল দেশে নিয়ে এসে আমাদের দেশের দেশীয় চাষ করা ফুলের ব্যবহার কমিয়ে ফুল সেক্টরকে হুমকির মুখে ঠেলে দিচ্ছে। প্লাস্টিক ফুলের আমদানি এবং বাজারজাত বন্ধ করার দাবিতে আমরা সংবাদ সম্মেলন করেছি, মানববন্ধন করেছি। আমরা আবারও সরকারের কাছে দাবী রাখতে চাই- এই প্লাস্টিকের ফুল আমদানি ও বাজারজাত যেন অচিরেই বন্ধ করা হয়। সেই সাথে আরও দাবী রাখি যে রাষ্ট্রের যেসকল অনুষ্ঠান করা হয় তাতে যেন আমাদের দেশীয় ফুল ব্যবহার করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।