নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ফেক (ভুয়া) আইডি খুলে সম্মানিত ব্যক্তি ও পেশাজীবীদের বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে ভয়াবহ অপপ্রচার। রাজনীতিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক—কেউই রেহাই পাচ্ছেন না এই সাইবার হামলার হাত থেকে। এসব ভুয়া আইডি ব্যবহার করে চালানো হচ্ছে মানহানিকর প্রচারণা, প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইলিং এবং সামাজিকভাবে হেয় করার মতো অপরাধ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বারবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানানো হলেও আইটি শাখার ‘কারিগরি দুর্বলতা’ বা ‘লিখিত অভিযোগ না থাকা’র অজুহাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। পুলিশও বিষয়টি স্বীকার করেছে। তারা বলছে, সন্দেহভাজন ভুয়া আইডিগুলোর ওপর নজরদারি চালানো হলেও ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগের অভাবে মামলা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছে না।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কালীগঞ্জে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছে একটি অজ্ঞাত চক্র—এমনটাই দাবি করেছেন একাধিক ভুক্তভোগী ও পুলিশ সূত্র।
বিশেষ করে যারা সরকারবিরোধী মত প্রকাশ করেছেন কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলে যুক্ত ছিলেন, তারা চক্রটির প্রধান টার্গেট। ফেসবুকে তাদের নাম, ছবি ও তথ্য ব্যবহার করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গুগল থেকে সংগৃহীত ছবি ব্যবহার করে আকর্ষণীয় নারী বা পুরুষের প্রোফাইল তৈরি করা হচ্ছে, যা সাধারণ অনুসন্ধানে ভুয়া প্রমাণিত হয়।
সর্বশেষ ২০২২ সালের জনশুমারি অনুযায়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার জনসংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার ৯৪৩ জন। এর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষ স্মার্টফোন ব্যবহার করেন। তরুণদের একটি অংশ পরিচয় গোপন রাখতে কিংবা বিনোদনের উদ্দেশ্যে ভুয়া আইডি খুললেও, এসব আইডি এখন ক্রমেই অপরাধমূলক কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
স্থানীয় এক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভুয়া ফেসবুক আইডি দিয়ে পরিকল্পিতভাবে সমাজে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সম্মানিত ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত মানসিক চাপে থাকছেন। আমরা চাই, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিটিআরসি দ্রুত পদক্ষেপ নিক।”
সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফেসবুক বন্ধুত্বের মাধ্যম হলেও অপরাধীরা এটিকে পরিণত করেছে প্রতারণা ও মানহানির প্ল্যাটফর্মে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, ভুয়া আইডি তৈরি এবং এর মাধ্যমে ক্ষতিকর পোস্ট, মন্তব্য বা ভিডিও শেয়ার—সবই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
সচেতন নাগরিকদের মতে, ফেক আইডি আজ আর শুধু অনলাইনে বিরক্তির কারণ নয়—এটি পরিণত হয়েছে এক ভয়ঙ্কর সামাজিক ফাঁদে। দ্রুত এসব আইডি শনাক্ত করে ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সমাজে অস্থিরতা ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা বেড়ে যাবে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া আইডির মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো ও হয়রানিমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে আমরা অবগত। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে সঙ্গে সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি ফেক আইডিকে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। তবে অধিকাংশ ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ দিচ্ছেন না।”
কালীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান জানান, “আইসিটি বিভাগ এ বিষয়ে তৎপর। কিছু ভুয়া আইডি শনাক্তের কাজ শুরু হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।