জুমবাংলা ডেস্ক : রাস্তার প্রস্থ যতো কম, ভবনে ব্যবহারযোগ্য স্পেসের পরিমাণও সেই অনুপাতে কম হবে। এই নিয়মই রয়েছে রাজধানীর সংশোধিত ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যানে। এতে করে প্রথমত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কম প্রস্থের রাস্তার পাশের জমির মালিকরা। এরপর ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন ডেভেলপাররা। এর ফলে ফ্ল্যাটের দাম কমপক্ষে ৭০ শতাংশ বাড়বে, জানিয়েছে রিহ্যাব। এই বিষয়গুলো স্বীকার করে নিয়ে রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানীকে বাসযোগ্য রাখতে হলে এই ক্ষতিটুকু মেনে নিতে হবে।
গত ২৩ আগস্ট ড্যাপ গেজেট প্রকাশের পর থেকে রাজউকের প্রধান কার্যালয়সহ আঞ্চলিক অফিসগুলোতে নতুন বাড়ি তৈরির কোন আবেদন বা নকশা জমা পড়েনি।
নতুন ড্যাপে রাস্তার প্রশস্ততা অনুযায়ী ৯টি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। আর ভবনের শ্রেণি করা হয়েছে তিনটি।
ভবনের শ্রেণি তিনটি হচ্ছে সম্পূর্ণ আবাসিক, আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ও সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক। এগুলোর প্রতিটির আবার ছয়টি করে ক্যাটাগরি করা হয়েছে।
নতুন নিয়মে ব্যবহারযোগ্য ভূমির পরিমাণ ক্ষেত্রবিশেষে অর্ধেকেও নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য ফ্লোর স্পেসও অনেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ড্যাপ তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন কর্মকর্তা জানান, পাঁচ কাঠার আয়তন ৩ হাজার ৬শ’ বর্গফুট। ২০ ফুট রাস্তার পাশে ফার (ফ্লোর এরিয়া রেশিও) ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৭৫। এই ৩ হাজার ৬শ’ বর্গফুটকে ১ দশমিক ৭৫ দিয়ে গুণ করলে হয় ৬ হাজার ৩শ’ বর্গফুট। এটাই হবে ব্যবহারযোগ্য ফ্লোর। ফলে এ ধরনের প্লটে নিচতলায় কার পার্কিং রাখলে বাকি চারটি তলার বেশি উঁচু করার সুযোগ থাকবে না।
প্রকল্প পরিচালক জানান, ৮ থেকে ১২ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ফার ধরা হয়েছে ১ দশমিক ৫। ১৬ থেকে ২০ ফুট প্রশস্ত রাস্তার ফার ধরা হয়েছে ২। এ ছাড়া ২০ ফুট রাস্তার ফার ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৫, ৩০ ফুট রাস্তার ফার ৩, ৪০ ফুট রাস্তার ৩ দশমিক ৫, ৬০ ফুট রাস্তার ফার ৩ দশমিক ৭৫ ও ৮০ ফুট রাস্তার ফার ৪ দশমিক ২৫। প্লটভেদে এভাবেই নির্ধারিত হবে ব্যবহার যোগ্য ফ্লোর স্পেস।
রিহ্যাবের সিনিয়র সহসভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, ফ্ল্যাটের দাম কমপক্ষে ৭০ ভাগ বেড়ে যাবে। জমির দামও কমে যেতে পারে। আরও অনেক সমস্যা তৈরিরও আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় আদালতের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই।
তিনি বলেন, প্রথমত ড্যাপ অসংখ্য ভুলে ভরা। ড্যাপের কারণে আবাসন ব্যবসায়ী ও খণ্ড জমির মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ড্যাপ প্রণয়নকারীরা যৌক্তিক কারণ ছাড়াই নিজেদের মতো করে বানিয়েছে। নদীনালা-খাল ভরাট করা আবাসন প্রকল্পকে বৈধতা দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আমরা অনেকবার তাদের বলেছি, রাস্তা প্রশস্ত করার বিধান রেখে যেন ড্যাপ প্রণয়ন করা হয়। এ জন্য আমাদের সঙ্গে প্রয়োজনে আলোচনায় বসেন। কিন্তু তারা মিথ্যা আশ্বাস ও ধূম্রজালের মধ্যে আমাদের রেখে ড্যাপ করেছে। এতে করে জিডিপিতে ১৫ শতাংশ অবদান আবাসন খাতের পাশাপাশি ২৪০টি সহযোগী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও হুমকির মুখে পড়বে।
সংশোধিত ড্যাপ প্রসঙ্গে রাজউকের নতুন চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এর সুফল পাওয়া যাবে। ছোট ছোট রাস্তার পাশে এভাবে একের পর এক বহুতল ভবন উঠতে থাকলে এই শহরকে আর শৃঙ্খলার মধ্যে আনা যাবে না। সরু রাস্তা সরুই থাকবে। নতুন ড্যাপে অপরিকল্পিত এলাকা যেমন নাখালপাড়া, কলাবাগান, হাতিরপুল, কল্যানপুর, পীরেরবাগ, কাফরুল ও পুরান ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় জমির মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তবে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শহরকে বাসযোগ্য রাখতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।